মায়ানমার ও বাংলাদেশ: এ যাত্রায় বাংলা বাঁচলেও, রক্ষা পেল না মায়ানমার ও বাংলাদেশ। প্রবল শক্তি নিয়ে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের উপকূল এলাকায় আছড়ে পড়ল সুপার সাইক্লোন মোচা। ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি প্রবল বৃষ্টিও শুরু হয়েছে বাংলাদেশের একাধিক জায়গায়। মায়ানমারে মোচার তাণ্ডবে মৃত্যুর খবরও শোনা যাচ্ছে।
বিবিসি সূত্রে খবর, ঘণ্টায় ১৯৫ কিমি বেগে তাণ্ডব চালাচ্ছে মোচা। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে ভয়াবহ বৃষ্টি হচ্ছে। মায়ানমারের সিতওয়েতে উদ্ধারকারী দল জানিয়েছে, বিভিন্ন এলাকায় প্লাবন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাঁদের উদ্ধারকাজে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুপার সাইক্লোনের তাণ্ডবে মায়ানমারে ১৪ বছরের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ঝড়ে গাছ পড়ে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
মায়ানমারের সামরিক তথ্য দপ্তর সূত্রে খবর, ঝড়ে সিতওয়া, কিয়াউকপিউ ও গওয়া শহরে বাড়িঘর, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, মোবাইল ফোন টাওয়ার, নৌকো ও ল্যাম্পপোস্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইয়াঙ্গুন থেকে প্রায় ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত কোকো দ্বীপপুঞ্জের ক্রীড়া ভবনগুলোর ছাদও ভেঙে পড়েছে। এদিকে মায়ানমারে মোচার দাপটে ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। মায়ানমারে একটি টেলিকম টাওয়ার ভেঙে পড়েছে। সিতওয়া এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
ঝড়ের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের মাঝরপাড়া, কোনারপাড়া, গলাচিপা, দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়ার অন্তত ৩৪০টি ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছে বলে বাংলাদেশের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে। বাংলাদেশে কমপক্ষে ১১ জন আহত হয়েছেন। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপেও ঝড়ের তাণ্ডবে ক্ষতি হয়েছে। সেখানেও বহু গাছ ভেঙে পড়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে আগেই সরানো হয়েছে। বিভিন্ন ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন বহু মানুষ।
ঝড় থেকে বাঁচতে স্কুলই এখন সহায় সেখানে। ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার আগেই বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্তের শহর টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছেন একাধিক মানুষ। কক্স বাজারে ১ লক্ষ ৯০ হাজার সাধারণ মানুষ এবং চট্টগ্রামে প্রায় ১ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে এনেছে বাংলাদেশ প্রশাসন। স্থগিত এসএসসি পরীক্ষা।
সাইক্লোনের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে ত্রিপুরা সহ দেশের একাধিক রাজ্যে। মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, মণিপুর ও দক্ষিণ অসমের বিচ্ছিন্ন জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আগেই দিয়েছিল মৌসম ভবন। ক্ষতি হতে পারে মাঠের ফসলেরও। এদিকে কিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসলীলা শিউরে ওঠার মতোই। মায়ানমার থেকে বাংলাদেশ চারদিকে শুধু ধ্বংসের ছবি। মৌসম ভবন জানিয়েছে, রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটের মধ্যে মারাত্মক প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে স্থলভাগে তাণ্ডব চালিয়েছে মোচা। ওই সময় ঝড়ের বেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮০ থেকে ১৯০ কিমি। সর্বোচ্চ বেগ ছিল ২১০ কিমি।
তবে এ যাত্রায় পশ্চিমবঙ্গ রক্ষা পেয়েছে। আর তার কারণ হিসেবে ঘূর্ণিঝড়ের বিপরীতমুখী বেগ বা ‘অ্যান্টিসাইক্লোনিক সার্কুলেশন’-কেই তুলে ধরছে মৌসম ভবন। জানানো হয়েছে, বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থান করছিল ঘূর্ণিঝড়ের বিপরীতমুখী বেগ বা ‘অ্যান্টিসাইক্লোনিক সার্কুলেশন’। এই বেগই ঘূর্ণিঝড়কে পশ্চিমে এগোতে বাধা দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে ক্রমে অগ্রসর হয়েছে উত্তর এবং উত্তর-পূর্বে।