হারিয়ে যাওয়া কানা দ্বারকেশ্বর নদীর অস্তিত্ব খুঁজে পেল প্রশাসন। কয়েক মাস আগেই থেকে আরামবাগ শহরের উপর দিয়ে প্রবাহিত কানা দ্বারকেশ্বর নদীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া জন্য সার্ভের কাজ শুরু করে আরামবাগ মহকুমা প্রশাসন। বুধবার আরামবাগ পুর প্রশাসন, আরামবাগ ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিক, আরামবাগ চাঁদুর ফরেস্টের আধিকারিকদের উপস্থিতিতে কানা দ্বারকেশ্বর নদীর অস্তিত্ব পাওয়া যায় চাঁদুর ফরেস্ট সংলগ্ন এলাকা ও ফরেস্টের ভিতরের কিছু অংশে। এদিন চূড়ান্ত পর্যায়ে নদীর মাপ হয় চাঁদুর ফরেস্ট ও তেলিপাড়া মৌজায়। ১৯৩৩ সাল থেকে এই দুটি মৌজা থেকে দ্বারকেশ্বর নদীর অস্তিত্ব হারিয়ে যায়। মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে দ্বারকেশ্বর নদী। আরামবাগ পুর প্রশাসনের ইঞ্জিনিয়ার পরীক্ষিত হালদার, আরামবাগ ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিক ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাস ও ফরেস্টের একজন আধিকারিক উপস্থিত থেকে চূড়ান্তভাবে কানা দ্বারকেশ্বর নদীর অস্তিত্ব চিহ্নিতকরণ করা হয়। প্রসঙ্গত, কানা দ্বারকেশ্বর এখন মৃতপ্রায়। জবরদখলের সঙ্গে বর্জ্য ও কচুরিপানা জমে নদের প্রবাহ এখন অবরুদ্ধ। গতিপথের সন্ধানে সার্ভের কাজে নামেন মহকুমা সেচ দপ্তর ও পুর প্রশাসন। আরামবাগ মাস্টার প্লানের অন্তর্ভুক্ত এই শাখা নদের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হবে। উপকৃত হবেন আরামবাগ শহর-সহ মহকুমার লক্ষাধিক মানুষ।
আরামবাগ শহরের বাইশ মাইল এলাকায় মূল দ্বারকেশ্বর নদ থেকে শাখা নদটি বেরিয়েছে। এলাকায় যা কানা দ্বারকেশ্বর নামে পরিচিত। কানা দ্বারকেশ্বরের বুক দিয়ে একসময় বইতো বিপুল জলরাশি। যার স্মৃতি চিহ্ন রয়ে গিয়েছে নদের চড়া পড়া জমিতে। বর্তমানে শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে দিয়ে এই খাল আঁকাবাঁকা পথে বয়ছে। শহরের ভিতর খালটি নর্দমায় পরিণত হয়েছে। খালটির উৎসমুখ পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভাটার মোড়ে। শহরের ভিতর একাধিক জায়গায় খালের প্রবাহপথ হারিয়ে গেছে। যার সন্ধানেই শুরু হয় সার্ভের কাজ। শহর থেকে বেরিয়ে খালটি মিলেছে মলয়পুর খালে। সেই খাল খানাকুলের অরোরা খালে পড়ে রূপনারায়ণ নদে মিশেছে। এদিন আরামবাগের বাইশ মাইলেট চাঁদুর ফরেস্ট এলাকায় চুড়ান্ত ভাবে কানা দ্বারকেশ্বর নদীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। এই বিষয়ে আরামবাগ পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার পরীক্ষিত হালদার বলেন, ফরেস্টের পাশে দ্বারকেশ্বর নদীর যে কানা খালটি আছে তা কেউ জানত না। এই খালটি আমাদের পুরসভার যে হেলথ সেকশন আছে, তারপর থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। খালটি ১৯৩৩ সালের ম্যাপ অনুযায়ী কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত কেউ জানত না। আমাদের কাজ কানা নদীর অস্তিত্ব চিহ্নিত করা। সেই অনুযায়ী এদিন চূড়ান্তভাবে কানা নদীর গতিপথ চিহ্নিত করা হল। বিষয়টা সম্পূর্ণ রাজ্য সরকার ও ইরিগেশন দপ্তরের। অপরদিকে আরামবাগ মহকুমা সেচ দপ্তরের আধিকারিক দীনবন্ধু ঘোষ বলেন, মহকুমা প্রশাসনের নির্দেশে আমরা কাজটি শুরু করেছিলাম। একেবারে শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। আরামবাগ পুর প্রশাসন রিপোর্ট দিলে সংস্কারে বিষয়ে আলোচনা হবে এবং পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা হবে। সবমিলিয়ে আরামবাগের চাঁদুর ফরেস্ট এলাকা থেকে খানাকুলের চকভেদুয়া পর্যন্ত পুরোটা সংস্কার হলেই খালের জল রূপনারায়ণ নদে গিয়ে পড়বে। দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হবে। কয়েক লক্ষ মানুষ উপকৃত হবে।