‘বহরমপুর চাই। ব্লক সভাপতিদের সঙ্গে যে সকল বিধায়কদের সম্পর্ক ভাল নেই, তাঁদের নিজেদের মধ্যে কথা বলে মিটিয়ে নিতে হবে। শাওনী সিংহ রায়, অপূর্ব সরকার এদের বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে আগামী ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে মিটিং করতে হবে। বহরমপুরে বিশেষ জোর দিতে হবে৷ লাগাতার কর্মসূচি পালন করতে হবে। প্রয়োজনে বারেবারে মানুষের কাছে যান।’ মুর্শদাবাদের মাটিতে দাঁড়িয়ে এমনই বার্তা দিতে শোনা গেল তৃণণূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এখানেই শেষ নয়, দলীয় নেতাদের রীতিমতো টার্গেট বেঁধে দিয়ে অভিষেক এও বলেন, ‘মুর্শিদাবাদের তিনটি লোকসভাই আমাদের জিততে হবে। ২০২৪-এর লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের থেকেও ভাল রেজাল্ট করতে হবে। ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টার্গেট ৪০ টি আসন। মুর্শিদাবাদে তিনটির মধ্যে তিনটিতেই জয় চাই। আগামীদিনে ৪০ আসনের এর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আমরা ঝাঁপাব। এটা তখনই সম্ভব যখন জেলার বুথ সভাপতিরা তাদের সর্বশক্তি দিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নামবেন।’ এদিকে কিছুদিনের মধ্যেই ২০২৩ এর পঞ্চায়েত নির্বাচন এই রাজ্যে। তার আগে তৃণমূলের নবজোয়ার কর্মসূচিতে জেলাব্যাপী সভা-অধিবেশনে রাজ্যজুড়ে বিরাট কর্মসূচিতে তৃণমূল কংগ্রেস। যার নেতৃত্বে দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। সোমবার বহরমপুরে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত হয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পাশাপাশি ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন নিয়েও দলকে এই ভাষাতেই বার্তা দিতে দেখা যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। একইসঙ্গে এদিনের এই সভা থেকে তিনি এও জানান, রাজ্যে শাসক তৃণমূলের হাত শক্ত হলে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার রাজ্যের প্রাপ্য আটকে রাখতে পারবে না। এই প্রসঙ্গে অভিষেকের বক্তব্য, ‘বাংলার প্রাপ্য কোটি কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সরকার আটকে রেখেছে। মানুষ আওয়াজ তুললে সেই টাকা কোনও সরকারই আটকে রাখতে পারে না। তাই, নিজেদের স্বার্থেই তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানান অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলা থেকে ১০ লক্ষ মানুষ দিল্লি গেলে কোনও নেতার পক্ষে কানে তুলো গুঁজে বসে থাকা সম্ভব নয়। আমাদের কথা ওদের শুনতেই হবে।’ এই যুক্তিকে সামনে রেখে আবারও আগামী পঞ্চায়েত এবং লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে জেতানোর আহ্বানও জানান দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরই রেশ ধরে অভিষেক এও বলেন, ‘২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে দলের সাংসদ সংখ্যা ৩৪ থেকে কমে ২২ হয়েছে বলেই বাংলার টাকা আটকে রাখার সুযোগ পাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।’ তাঁর যুক্তি, ২০১৪ সালের মতো ২০১৯ সালেও যদি ৩৪টি আসন পেত তৃণমূল, তাহলে মোদি সরকার বাংলার পাওনা আটকে রাখতে পারত না।’
প্রসঙ্গত, রবিবারই অভিষেক আগামী লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪২টির মধ্যে ৪০টি আসনের জন্য লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিতে দেখা যায় অভিষেককে।সোমবারও এই প্রসঙ্গের রেশ ধরে অভিষেক জানান, ‘তৃণমূল যখন জিতেছে, বিজেপি চেয়েও বাংলার টাকা আটকাতে পারেনি। ২০১৪ থেকে ২০১৯, নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায়। এদিকে তৃণমূলের ৩৪টা সাংসদ।’ অর এখানেই অভিষেকের প্রশ্ন, ‘নরেন্দ্র মোদি পেরেছেন মানুষের টাকা আটকে রাখতে? পারেননি। কারণ, ৩৪ জন সাংসদ ছিল। ২০১৯-এ সাংসদ ৩৪ থেকে কমে হল ২২। সঙ্গে সঙ্গে আপনার টাকা আটকে গেল। তৃণমূল জিতলে মানুষ শক্তিশালী হবে, তৃণমূল হারলে মানুষ দুর্বল হবে। কারণ তৃণমূল মানুষের দল। বাংলার মানুষের অধিকার দিল্লির বুক থেকে ছিনিয়ে আনার দায়িত্ব আমাদের। মানুষকে সংগঠিত করার দায়িত্ব আপনাদের সকলের।’
এরই পাশাপাশি বিরোধী শিবিরকেও এদিন নিশানা করতে দেখা যায় অভিষেককে। বলেন, ‘তৃণমূল হাই কোয়ালিটির ডিভিডি। ডিভিডি যখন ভিসিআরে চালাবেন, কানে শুনতেও পাবেন, চোখে দেখতেও পাবেন। বিজেপি আর কংগ্রেস হচ্ছে ভাঙা অডিয়ো ক্যাসেট। টেপে চালালে শুধু কানে শুনতে পাবেন। চোখে দেখতে পাবেন না। চোখে দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কানে শুনে নয়। আমাদের সরকার যা বলেছে, তা করেছে।’ সেই সূত্রে ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচিরও ‘ব্যাখ্যা’ দেন অভিষেক। বলেন, ‘সর্ব স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া উন্নয়নকে সামনে রেখে এগিয়ে চলাই হল নবজোয়ার। হেরে গিয়ে মানুষকে শাস্তি নয়, মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষকে স্বস্তি। তার নামই তৃণমূলে নবজোয়ার। মানুষের প্রতিনিধিকে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার নামই তৃণমূলে নবজোয়ার।’