কাকদ্বীপ: ঘূর্ণিঝড় মোচা আছড়ে পড়তে পারে সুন্দরবনের উপকূল এলাকায়। ফলে বেহাল নদী ও সমুদ্রবাঁধের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে দুর্যোগ মোকাবিলায় ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সুন্দরবনের সমস্ত নদী ও সমুদ্রবাঁধের বর্তমান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নবান্ন থেকে সেই নির্দেশ আসার পর সেচ দপ্তর তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফ্লাড ও সাইক্লোন সেন্টার সহ স্কুলভবন মিলিয়ে ২৯৫টি ত্রাণ শিবির খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলো পরিষ্কার পরিছন্ন করার পাশাপাশি সেখানে পানীয় জল, শুকনো খাবার, ত্রিপল ও আলোর ব্যবস্থা করা হবে। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাঁধগুলির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। সেচ দপ্তরের আধিকারিকদের বাঁধ পরিদর্শন করে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে নদী ও সমুদ্র ভাঙন কবলিত সাগর, নামখানা, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, কুলতলি ও গোসাবা এলাকাকে। এছাড়াও সুন্দরবনের বিছিন্ন দ্বীপ ঘোড়ামারা ও মৌসুনি দ্বীপের বাসিন্দাদের সরানোর কথা ভাবা হচ্ছে প্রশাসনের তরফে। নদী ও সমুদ্রে নেমে পর্যটকদের স্নানের উপর পরিস্থিতি বুঝে নিষেধাজ্ঞা জারি করবে প্রশাসন। অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, সিভিল ডিফেন্স ও ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের কর্মীদের ইতিমধ্যে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে থেকে লাগাতার সুন্দরবনের উপকূল এলাকায় সতর্কতা প্রচার চালানো হবে। ইতিমধ্যে জেলার ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ ও ক্যানিং মহকুমাতে আলাদা করে বিপর্যয় মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সুন্দরবন এলাকার ২৩টি বাঁধকে চিহ্নিত করে দ্রুত মেরামতি চালাচ্ছে সেচ দপ্তর। এই বাঁধগুলি মেরামত করা হলে সুন্দরবনের ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবনের হাত থেকে বাঁচবে বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশ। এছাড়া বিগত দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ ৩৫ কিমি নদী বাঁধের কাজ আগেই সম্পূর্ণ হয়েছে। চলতি বছরে আরও প্রায় ২৫ কিমি বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনও সুন্দরবনের ১০০ কিমির বেশি নদী বা সমুদ্রবাঁধ মেরামতি জরুরি। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার এই বাঁধ মেরামতেরও পরিকল্পনা নিয়েছে। সোমবার সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা ও সাগরের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখেন। এখানকার নদী ও সমুদ্র বাঁধ মেরামতির কাজ চলছে। সেই কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখেন। সেচ দপ্তরের আধিকারিকদের থেকে বিস্তারিত খোঁজখবর নেন তাঁরা। সাগরের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মতো সব ধরনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে রাখা হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ব্লকের অধিকাংশ নদী বাঁধ মেরামত করার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।’