কালপুরুষ স্রষ্টা সমরেশ মজুমদার পাড়ি জমালেন চির ঘুমের দেশে

চলে গেলেন ‘কালবেলা’, ‘সাতকাহন’-এর স্রষ্টা সমরেশ মজুমদার। গত কয়েকদিন ধরেই গুরুতর অসুস্থ ছিলেন বঙ্গ সাহিত্যের এই নক্ষত্র৷ ফুসফুস ও শ্বাসনালীর সংক্রমণের কারণে তাঁকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোও হয়৷ সেখানেই চিকিৎসা চলছিল তাঁর।তবে শেষের দিকে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে রাখা হয় আইসিইউ-তে। তাতেও হল না শেষরক্ষা। সোমবার সন্ধে পৌনে ৬টা নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর। এই খবর পেয়ে শোকজ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।শোকজ্ঞাপক বার্তায় তিনি লেখেন, বিশিষ্ট সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় প্রয়াত হন। বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। বাংলা সাহিত্যের লব্ধপ্রতিষ্ঠ কথাকার সমরেশ মজুমদারের বিখ্যাত গ্রন্থগুলি হল, ‘দৌড়’, ‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’, ‘গর্ভধারিণী’, ‘উত্তরাধিকার’, ‘অর্জুন সমগ্র’, ‘সাতকাহন’ ইত্যাদি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৮ সালে সমরেশ মজুমদারকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান প্রদান করে। এছাড়া তিনি সাহিত্য অকাদেমি অ্যাওয়ার্ড, আনন্দ পুরস্কার, বিএফজেএ পুরস্কারসহ অজস্র সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।সমরেশ মজুমদারের প্রয়াণে সাহিত্য জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি সমরেশ মজুমদারের আত্মীয়-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’
এদিকে লেখকের পরিবার সূত্রে খবর, গত ১২ বছর ধরেই সিওপিডি-তে আক্রান্ত ছিলেন লেখক৷ এরপর ২৫ এপ্রিল তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়৷ অবস্থার অবনতি হওয়ায় শেষ ৩ দিন তাঁকে রাখতে হয়েছিল ভেন্টিলেশনে৷ গত শনিবার সন্ধ্যায় সমরেশ মজুমদারের বড় মেয়ে দোয়েল মজুমদার এও জানিয়েছিলেন,‘গত দুদিন কেবিনেই রাখা হয়েছিল বাবাকে। এরপর বিকেলে তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসকেরা বলেছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।’
সমরেশ মজুমদার জন্মগ্রহণ করেন বাংলা ১৩৪৮ সনের ২৬শে ফাল্গুন। ইংরাজির ১০ই মার্চ ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে। তাঁর শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের গয়েরকাটা চা বাগানে। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল থেকে। এরপর ১৯৬০ সালে কলকাতায় আসেন তিনি। বাংলা নিয়ে স্নাতক হন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করেন মাস্টার্স।
সমরেশ মজুমদারের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলির মধ্যে ‘সাতকাহন’, ‘তেরো পার্বণ’, ‘স্বপ্নের বাজার’, ‘উজান’, ‘গঙ্গা’, ‘ভিক্টোরিয়ার বাগান’, ‘আট কুঠুরি, নয় দরজা’, ‘অনুরাগ’ নিঃসন্দেহে বঙ্গ সাহিত্যে এক অসামান্য সূষ্টি। একইসঙ্গে তাঁর ট্রিলজি ‘উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ’ ছুঁয়ে গিয়েছিল বাঙালি সত্ত্বা এবং মননকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × one =