পাঁচতারা হোটেলেও তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে হোটেল ও হোটেল সংলগ্ন এলাকায় জারি হল ১৪৪ ধারা। সূত্রে খবর, ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুর থানা এলাকার একটি পাঁচ তারা হোটেলে ওই হোটেলের দুই কর্মী গোষ্ঠীর মধ্যে বাদে বিবাদ। এদিকে সূত্রে এ খবরও মিলছে যে এঁরা প্রত্যেকেই তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী।সঙ্গে এ খবরও মেলে, বেশ কয়েক মাস ধরেই এই বিবাদ চলছে বলে অভিযোগ। এই বিবাদ এতটাই বড় আকার নেয় যে বাধ্য হয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ থামাতে ১৪৪ ধারার আর্জি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ পর্যন্ত হতে হয় হোটেল কর্তৃপক্ষকে। আর্জি মেনে ১৪৪ ধারা জারিও করে আলিপুর আদালত। আদালতের তরফে আলিপুর থানাকে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা করতে বলা হয়। পাশাপাশি এ খবরও মিলছে যে, গত ২ মে থেকে সেই নির্দেশ বলবৎ রয়েছে। হোটেলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে কর্মীদের সংযত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে তাতেও পরিস্থিতি খুব একটা হেরফের ঘটেনি।এরপরও পাঁচতারা হোটেলের জেনারেল ম্যানেজারকে ঘেরাও করে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখানোর অভিযোগ ওঠে হোটেলের কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। এরপরশনিবার দ্বিতীয় নোটিস জারি করে কর্মীদের আদালতের নির্দেশ মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে পাঁচতারা হোটেল কর্তৃপক্ষ। সেই নোটিসে স্পষ্ট বলা হয়েছে, হোটেলের শান্তিশৃঙ্খলা, কাজের পরিবেশ ভঙ্গ হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।
এই বিবাদের কারণ সম্পর্কে হোটেল সূত্রে জানানো হয়েছে, শ্রমিক ইউনিয়নের দখল নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে চরম বিবাদ। দুই গোষ্ঠী এলাকার দুই প্রভাবশালী নেতার নিয়ন্ত্রণাধীন। এক জন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, আরেকজন ক্ষমতাশীল মন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণাধীন গোষ্ঠী বলে জানা যাচ্ছে। এদিকে এই পাঁচতারা হোটেলটি মূলত মেয়র তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের এলাকা। সেখানে এই ধরনের একটি ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই আহুল উঠেছে প্রশাসনের দিকেই। সঙ্গে এ প্রশ্নও উঠছে, এক পাঁচতারা হোটেল কর্তৃপক্ষের কড়া পদক্ষেপ করে হুঁশিয়ারি দিয়ে নোটিস জারির পরেও কীভাবে এই ধরনের বিশৃঙ্খলা তা নিয়েও। তবে এই ধরনের অশান্তির ঘটনা পরিষেবায় কোনও প্রভাব ফেলবে না বলেই আশ্বস্ত করেছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। হোটেল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, ‘হোটেল সকলের জন্য খোলা। পরিষেবা যথাযথ রয়েছে। আমরা সুষ্ঠভাবে কাজ পরিচালনার জন্য বদ্ধপরিকর।’
আর এই ঘটনাকে অস্ত্র হিসেবে হাতে তুলে নিয়েছে বিরোধী শিবির। বিজেপি নেতা সজল ঘোষ এই ঘটনায় জানান, ‘তৃণমূল যেখানে থাকবে, সেখানেই অশান্তি হবে। ভোটেও হয়, রিইউনিয়নের দখলদারিতেও হয়। হোটেলে যদি ১৪৪ ধারা জারি হয়, তাহলে পাঁচ জন অতিথি যদি একসঙ্গে ঢোকেন, তাহলেও তো গ্রেপ্তার হয়ে যাবেন। এইভাবে সব প্রতিষ্ঠানই ওরা ধ্বংস করেছে। এই জায়গাও ধ্বংস করবে। আমার মনে হয় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন ব্যান করে দেওয়া উচিত।’ এদিকে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘চারিদিকে বিদ্রোহ হচ্ছে। আজকে তৃণমূলের উত্তাল সময়ে। এই সময়ে যাতে কেউ ঝোপ বুঝে কোপ না মারতে পারে। কত ১৪৪ ধারা করবে।’
যদিও এবিষয়ে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, ‘একটা ছোটখাটো ঝামেলা হয়েছিল। আমাকে ফোন করেছিল আমি মিটিয়ে দিয়েছি। ধরনায় বসেছিল একটা পক্ষ। আমি পুরো ব্যাপারটাই মিটিয়ে দিয়েছি। দেবলীনা বিশ্বাসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওখানে ইউনিয়নটা দেখবার জন্য। পিছনে যত বড়ই প্রভাবশালী নেতা থাকুক না কেন, কোনও অসভ্যতা করলে, দল কঠোরতম ব্যবস্থা নেবে।’