সোমবারই নিম্নচাপে পরিণত হতে চলেছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’। এরপর তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে মঙ্গলবার, এমনটাই জানাচ্ছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর।পাশাপাশি আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে এও জানানো হয়েছে যে, সোমবাৎই ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ জানা যাবে।বোঝা যাবে কোথায় ল্যান্ডফল হতে পারে মোচার, তাও।এখানে বলে রাখা শ্রেয়, অধিকাংশ মডেল এই ঘূর্ণিঝড়ের ল্যান্ড ফল বাংলাদেশ ও মায়ানমার সংলগ্ন উপকূল বলে জানালেও ভারতের মৌসম ভবন এখনও তার গতিপথ সুনিশ্চিত করেনি। তবে বাংলার পক্ষে এখনও আশার বাণী একটাই যে, খুব সম্ভবত সুন্দরবন ও সাগরের দিকে এই ‘মোচা’র কোনও প্রভাব পড়ার সম্ভবনা নেই। মনে করা হচ্ছে, এর অভিমুখ আন্দামান নিকোবরের দিকে।
পাশাপাশি আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে এও জানানো হয়েছে যে, ৮ তারিখ অর্থাৎ সোমবার থেকে আন্দামানে ভারী বৃষ্টি শুরু হবে। সঙ্গে বইতে পারে প্রতি ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়াও।সেই কারণেই রবিবার রাত থেকে আবাহওয়া দপ্তরের তরফ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে মৎস্যজীবীদের। পাশাপাশি সাবধান করা হয়েছে ট্যুরিস্ট ও সাধারণ মানুষকেও। এদিকে সোমবার ৮ তারিখ থেকে শুক্রবার ১২ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। তবে সব থেকে বেশি বৃষ্টি হতে পারে ৯ ও ১০ তারিখে। এদিকে এও বলা হয়েছে, রবিবার থেকেই ধীরে ধীরে বাড়বে তাপমাত্রা। যা ছুঁতে পারে ৪০ ডিগ্রির ঘরও। পশ্চিমের জেলাগুলি, বিশেষত, বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান জুড়ে অনুভূত হতে পারে তীব্র গরম। এরই পাশাপাশি কলকাতা আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে এও জানানো হয়, রবিবার কলকাতার তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে এও জানানো হয়েছে যে, শনিবার বিকেলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিক তাপমাত্রা। বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ ৪৬ থেকে ৮৮ শতাংশ। তবে সোমবার কলকাতা শহরে তাপমাত্রা থাকবে ২৮ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। এরপর ১০ তারিখের মধ্যে এই তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।বিশেষত দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা কার্যত নেই। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণায় খুব হালকা বৃষ্টির সামান্য সম্ভাবনা। এরপর বুধ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আর কোনও বৃষ্টির সম্ভাবনা দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে নেই।এদিকে ক্রমশ বাড়বে তাপমাত্রা। মোকার জন্য পরোক্ষভাবে হাওয়ার গতিপথ পরিবর্তন হবে। মঙ্গলবার থেকে সেই পরিবর্তন অনুভব করা যাবে।উত্তর-পশ্চিমের শুকনো বাতাস বেশি করে প্রভাব বিস্তার করবে।
এদিকে ‘মোচা’র মোকাবিলায় রবিবার সকাল ৭টা থেকেই ইনটিগ্রেটেড কন্ট্রোল রুম’ চালু করা হয় লালবাজারে। এটির দায়িত্বে আছেন ওয়ারলেস শাখার জয়েন্ট পুলিশ কমিশনার নবেন্দ্র সিং পাল। এই বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে, আগামী ১২ ই মে পর্যন্ত। ৯টি বিভাগে ৯টি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দল থাকছে। এছাড়াও পিটিএস-এ ৩টি এবং লালবাজারে থাকছে ২টি দুর্যোগ মোকাবিলা দল। তারা ২৪ x ৭ সমস্ত কাজ করবে। এছাড়াও কেএমডিএ, এনডিআরএফ, কেএমসি, দমকল বিভাগ-এর মতো অন্যান্য জরুরি বিভাগের আধিকারিকেরাও নজরে রাখছেন পরিস্থিতি। একইসঙ্গে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে রিভার ট্রাফিককেও। সবমিলিয়ে ১০-১১টি বিভাগ কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায়। সেখানে যোগাযোগ করে সাধারণ মানুষ সাহায্য চাইতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রতিটি বিভাগের নোভাল অফিসাররা বিভাগীয় অফিসারদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবেন। পাশাপাসি কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে, ৩টি আলাদা শিফটে কাজ করবে কন্ট্রোল রুম। এছাড়া, কলকাতার মধ্যে অনেক বিপদগ্রস্ত বাড়ি রয়েছে, সেগুলি যে থানার থানার অধীনে, সেখানকার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের লিস্ট পাঠানো হয়েছে। কোনওরকম অসুবিধা হলেই বাড়ির বাসিন্দাদের সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এমনকী, দুর্ঘটনা না ঘটলেও তাদেরকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। এই সাহায্যের জন্য যে নম্বরগুলি দেওয়া হয়েছে তা হল ২২১৪-১৮৯০, ২২৫০-৫০৩৩, ২২৫০-৫০৪৪,২২৫০-৫১৪৬। এছাড়াও হোয়াটস অ্যাপ করা যাবে ৯৪৩২৬১০৪৫০- নম্বরে।