কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে বিজেপির রাজ্য সভাপতির রিপোর্টে সামনে এল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব

আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন। এরপর ২০২৪-এর লোকসবা নির্বাচন। এখনও রাজ্য বিজেপির মধ্যে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রবল তা সামনে এল বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের এক অভিযোগ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে জমা পড়তেই। তাঁর অভিযোগ, দলের বিধায়করা রাজ্য বিজেপি সভাপতিকে এড়িয়ে চলছেন। রাজ্য সভাপতি জেলায় গেলে বিধায়করা সামিল হচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, ডাকলেও বিধায়করা মিটিংয়ে আসছেন না। অনেকে আবার ঘুরপথে এও জানিয়েছেন, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অনুমতি না দিলে তাঁরা রাজ্য সভাপতির সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। যেমন, তাঁদের মিটিংয়ে ডাকা হলে শুনতে হচ্ছে, শুভেন্দু অধিকারীর কাছ থেকে ‘নো অবজেকশন’ নিয়ে তবে আসতে পারবেন। কেউ কেউ অজুহাত দিয়ে বলছেন, তিনি বাইরে রয়েছেন। অথচ, পরে জানা যাচ্ছে, বাড়িতেই রয়েছেন। ফলে সব মিলিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ বিজেপি রাজ্য সভাপতি। শুধু এই ঘটনা শীর্ষ নেতৃত্বকেই জানিয়েছেন তা নয়, একইসঙ্গে জানিয়েছে আরএসএস নেতৃত্বকেও। বিধায়কদের এই আচরণে অপমানিত বোধ করে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সহ-ক্ষেত্র প্রচারক জলধর মাহাতোকেও বিষয়টি জানিয়েছেন। এই সব ঘটনা থেকে স্পষ্ট বিধায়কদের রাশ কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে বিজেপি’তে তৈরি হয়েছে এক আড়াআড়ি বিভাজন। রাজ্য বিজেপি’র শাসক গোষ্ঠীর নেতাদের একাংশের বক্তব্য, বিধায়কদের বড় অংশ রাজ্য সভাপতির সঙ্গে যে আচরণ করছেন, সেটা দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গেরই সামিল। এই অবস্থা চলতে থাকলে রাজ্যে সংগঠন আরও নড়বড়ে হবে।
এদিকে বিজেপি সূত্রের খবর, সুকান্তকে আশ্বস্ত করে জলধর বলেছেন, এই বিষয়ে দল তাঁর পাশেই থাকবে। এ নিয়ে তিনি একটি গোপন রিপোর্টও পাঠিয়েছেন দিল্লিতে। এদিকে এই ঘটনায় আরএসএস নেতৃত্ব মনে করছেন, দলের বিধায়করা বিজেপি রাজ্য সভাপতির সঙ্গে যে ভাবে অসহযোগিতা করছেন, সেটা মেনে নিলে দলে কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। উপদল তৈরি হবে। এই প্রসঙ্গে সুকান্ত-ঘনিষ্ঠ রাজ্য বিজেপি’র এক নেতা এও জানান যে, ‘বিজেপির দলীয় সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্য সভাপতি রাজ্যের সাংগঠনিক প্রধান। বিধায়করাও তার বাইরে নয়। শুভেন্দু বিজেপি পরিষদীয় দলের নেতা হলেও দলের রাজ্য সভাপতি বিধায়কদের ডেকে পাঠাতেই পারেন। তার জন্যে পরিষদীয় দলনেতার অনুমোদনেরও প্রশ্ন ওঠে না।’
এই প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি’র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানান, ‘এ রকম কোনও খবর বিজেপি’র অন্দরে অথবা বাইরে শোনা যায়নি।‘
তবে সুকান্ত যে অভিযোগ বিধায়কদের বিরুদ্ধে করেছেন সেখানে এক তত্ত্ব খাড়া করেছেন পুরুলিয়ার বিজেপি বিধায়ক সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘বিধায়কদের অনেক সময়ে বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে হাজির থাকতে হয়। সেটা না হলে তাঁরা ভাতা পান না। স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং থাকলে অনেক সময়ে বিধায়করা সভাপতি থাকলেও দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারেন না। কিন্তু তার মানে এই নয়, আমরা সভাপতিকে বয়কট করছি।’ বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়ার অবশ্য সাফ জবাব, ‘বিজেপি’তে কোনও গোষ্ঠীকোন্দল নেই। যারা এ সব প্রচার করছে, তারা মিথ্যা বলছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 − two =