পর্দার পিছনের খেলা আমি জানি, ডিএ আন্দোলনকারীদের মঞ্চ থেকে বিস্ফোরক অভিযোগ শুভেন্দুর

‘শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে মামলা হলে তিন দিনে ডেট চলে আসে। আর ডিএ মামলা ডিসেম্বর থেকে জুলাইতে চলে যায়। এইসব পিছনের খেলা আমরা জানি।’ শনিবার ডিএ আন্দোলনকারীদের মঞ্চ থেকে এমনই এক বিস্ফোরক উক্তি করতে শোনা গেল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মামলা ঝুলে রয়েছে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল এই পাঁচ মাসে অসংখ্য তারিখ পিছিয়েছে। আপাতত বলা হয়েছে জুলাইতে হবে সেই শুনানি।
শনিবার ডিএ আন্দোলনকারীদের মিছিলের পর তাঁদের হাজরা মোড়ের সভায় যোগ দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মামলার দিন পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে শুভেন্দু সেখানে এদিন যে দাবি করলেন তিনি তা নিয়ে জল্পনা এখন বঙ্গ রাজনীতিতে। কারণ, পক্ষান্তরে তিনি বিদ্ধ করেছেন শীর্ষ আদালতকেই।
একইসঙ্গে শনিবার ডিএ আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে শুভেন্দু এও বলেন, ‘আন্দোলন করতে হবে। কিন্তু আপনারা অনশন করবেন না। বাড়িতে বাবা, মা, স্ত্রী, পুত্র আছেন। শরীরটা ঠিক রাখতে হবে।’ সঙ্গে এও মনে করিয়ে দেন, ‘বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বলতেন ডিএ অধিকার। আজকে সেই হকই ওঁর থেকে আদায় করে নিতে হবে।‘পাশাপাশি এও বলেন, ‘আপনারা শহিদ মিনারে আজকে ধরনার একশো দিন পূরণ করেছেন। যে চারটি দাবি নিয়ে আন্দোলন চলছে তার জন্য যৌথ মঞ্চকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা ইতিমধ্যেই দিল্লিতে দু’দিন ধরে এই রাজ্যের এই সরকারের কঙ্কালসার অবস্থা দেশবাসীর কাছে তুলে ধরেছেন। আজ চার দফা দাবিকে সামনে রেখে আপনাদের মহামিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ রাজ্যের অন্যান্য বিরোধী দল বা সংগঠনের মতো আপনাদেরও হাইকোর্ট থেকে অনুমতি নিয়ে এই মিছিল করতে হয়েছে। আপনাদের লড়াইতে জিততে হবে। এই লড়াই আপনারা জিতবেন।’
এখানেই শেষ নয়, এদিনের সমাবেশ থেকে তীব্র আক্রমণ শানান মমতা-অভিষেককেও। আনেন কয়লা-বালি দুর্নীতির অভিযোগ। সঙ্গে একহাত নেন পুলিশকেও। আক্রমণের ঝাঁঝ আরও খানিকটা বাড়িয়ে বলেন, ‘আমি তো গোটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বলব যেখানেই দুর্ঘটনা হবে, যেখানেই খুন হবে আমাকে খবর দেবেন। আমি দেহটা নিয়ে এই কালীঘাটের গলিতে ঢুকব।’
এখানে বলে রাখা শ্রেয়, ২০২২-এর পুজোর পর থেকে শুভেন্দু দাবি করছিলেন, ডিসেম্বরের তিনটি দিন এমন এমন ঘটনা ঘটবে যাতে তৃণমূলের সরকার উল্টে যেতে পারে। সেই তিন দিন ছিল ১২, ১৪ এবং ২১। এর মধ্যে একটি দিনে সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলার শুনানি ছিল। শুভেন্দু হয়তো ভেবেছিলেন, ওই দিনই সর্বোচ্চ আদালত ডিএ নিয়ে চূড়ান্ত দিয়ে দেবে তবে তা হয়নি। বরং তার পর থেকে ডিএ মামলা সুপ্রিম কোর্টে বারবার পিছিয়েছে। এইরকম এক প্রেক্ষাপটে ডিএ আন্দোলনকারীদের মঞ্চ থেকে পর্দার পিছনের রহস্য নিয়ে যে বিস্ফোরক মন্তব্য করতে দেখা গেল তা নিয়ে উত্তাল হতেই পারে বঙ্গ রাজনীতি।
তবে শুভেন্দুর এদিনের এই বক্তব্য নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘শুভেন্দু সেই সময়ে যা তারিখ বলেছিলেন তাতে বাংলায় কী কী ঘটেছিল সবার মনে আছে। ১২ ডিসেম্বর সিবিআই হেপাজতে লালন শেখ খুন হয়েছিলেন। ১৪ ডিসেম্বর শুভেন্দু কম্বল দিতে গেছিলেন আসানসোলে, সেখানে পদপৃষ্ট হয়ে চার জন মারা যান।’ কুণাল আরও বলেন, ‘আদালতে মামলার তারিখ কী হবে সে তো আদালত ঠিক করে। সুপ্রিম কোর্টের উচিত শুভেন্দুকে ডেকে জিজ্ঞাসা করা পর্দার পিছনের খেলাটা কী।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − 16 =