কর্মনাশা বনধের সংস্কৃতি বাংলার মানুষ মানে না, তোপ অভিষেকের

‘আপনারা তো দেখছেন মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা। দুটোই ব্যর্থ বনধ ব্যর্থ এবং যে উদ্দেশ্যে বনধ ডেকেছে, সেটাও ব্যর্থ। মানুষ মানে না। কর্মনাশা, সর্বনাশা, ধর্মনাশা, বনধের সংস্কৃতি বাংলার মানুষ মানে না। যারা দিন আনে দিন খায় অনেক পরিবার রয়েছে। যারা পাঁচ হাজার ছয় হাজার টাকায় চাকরি করেন। দিনে দুশো, আড়াইশো, তিনশো টাকা আয় করেন। তাঁদের চাকরি করতে হবে, কর্মস্থলে পৌঁছতে হবে। যারা ভাবছে বনধ নিজেদের সংগঠনের শক্তি এবং সাংগঠনিকভাবে কতটা বলিষ্ঠ সেটা মানুষের কাছে উপস্থাপিত করবে তাদের ভাবা উচিত মানুষের অসুবিধা হচ্ছে।‘ শুক্রবার এই ভাষাতেই কালিয়াগঞ্জের ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপির ১২ ঘণ্টার উত্তরবঙ্গ বনধের তুমুল সমালোচনা করতে দেখা গেল তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এরই পাশাপাশি অভিষেক বিজেপিকে বিদ্ধ করে এও জানান, ‘বিজেপি কর্মীদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে কেন। বাস ভাঙচুর করতে হচ্ছে কেন। জোর জবরদস্তি করতে হচ্ছে কেন দোকানপাট বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ জারি করতে হচ্ছে কেন। আপনারা বনধ ডেকেছেন সেটা মানুষ সমর্থন করছে না বর্জন করছে সেটা মানুষের উপর ছেড়ে দেওয়া হোক। এরা চায় না কখনই মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়, যারা রুটি-রুজি সঙ্গে দৈনন্দিন যুক্ত তাদের ভাল চায় না ওরা।‘ এরই পাশাপাশি তাঁর সংযোজন, ‘এদিন যা সভা ছিল তাতে বনধ শুনে আরও ৩টে সভা যোগ করেছি।‘
এই বনধ প্রসঙ্গে জলপাইগুড়ি থেকে অভিষেক এদিন এও বলেন, ‘বনধের এই সংস্কৃতি সিপিএম বাংলায় এনেছিল। আমরা সেটা উঠিয়ে দিয়েছি। গত ১২ বছরে বাংলার মানুষ বনধ দেখেনি। ভেঙ্গে দাও, গুড়িয়ে দাও, বনধ করে দাও, জ্বালিয়ে দাও, গুটিয়ে দাও এই যে রাজনীতির বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস বারবার সরব হয়েছে।’ এরই পাশাপাশি অভিষেকের দাবি, ‘বনধ সর্বাত্মকভাবে ব্যর্থ। জনজীবন একেবারে স্বাভাবিক। আমার নির্দিষ্ট কর্মসূচি রয়েছে সবকটি করব। রাস্তার দু’ধারে মানুষ রয়েছেন। দোকান, হাটবাজার সব খোলা। রাস্তার দু’ধারে মানুষ দেখলেই তো বোঝা যাচ্ছে।’ একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘এরপরও জোরজবরদস্তি করে কোথাও বাস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে সাংগঠনিক শক্তি দেখাতে চায় ওরা। মানুষের হয়রানি, মানুষের অসুবিধা করছে ওরা। এটাই ভারতীয় জনতা পার্টি। বিজেপি মানেই বাংলা জ্বালাও পার্টি। এই ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও-এর রাজনীতি সিপিএম করেছে। এর অবসান ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেন। সিপিএমের হার্মাদরা গেরুয়া জার্সি পড়ে আবার সেই সংস্কৃতি আবার সেই সন্ত্রাসের বাতাবরণ বাংলায় আনতে চাইছে। বনধ সফল না ব্যর্থ সেটা মানুষের উপর ছেড়ে দিন।’
এখানেই থেমে থাকেননি তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে অভিষেক বলেন, ‘বিজেপি নেতাদের তো অসুবিধা হয় না। ম্যাথু স্যামুয়েলের মতো কেউ এসে খামে মুড়ে ৫ লাখ টাকা এসে দিয়ে যাবে তাতে সংসার চলে যাবে। সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে ৫ কোটি নিয়ে বসে যাবে। আর বছরের পর বছর বাড়িতে বসে খেয়ে ফুর্তি করবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবন কি করে চলবে। সাধারণ মানুষের আত্মসম্মান আছে তাদের কর্মস্থলে যেতে হবে। ১১ টার জায়গায় ১১ টা ১৫-তে পৌঁছলে তাদের অ্যাবসেন্ট মার্ক করে দেওয়া হয়। একজন কৃষককে জমিতে চাষ করতে যেতে হয়, একজন শ্রমিককে ফ্যাক্টরিতে যেতে হয়।‘ এই প্রসঙ্গে অভিষেক এ প্রশ্নও তোলেন, ‘এই কথাগুলো কেউ ভাবে না যাদের ২০০ থেকে৩০০ টাকা করে ক্ষতি হল তাদের টাকা কে দেবে? ভারতীয় জনতা পার্টি করবে ব্যবস্থা? সাধারণ মানুষকে ২০০-৩০০ টাকা করে দিয়ে তারপরে বনধ ডাকা উচিত। যারা ভাঙচুর করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যারা করেছে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা উচিত।’
একইসঙ্গে এদিন তিনি এ আশঙ্কাও প্রকাশ করেন যে, ‘আমি উত্তরবঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছি আমার কর্মসূচি বানচাল করার চেষ্টা হতে পারে কিন্তু মানুষ যা চাইবে তাই হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × five =