এক অথবা দুদিনের ছুটিতে কলকাতার আশপাশে বেড়িয়ে আসতে চান?
কিন্তু কোথায় যাবেন বুঝতে পারছেন না? প্রবল গরমে শান্তিনিকেতন, দীঘা, মন্দারমনি, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া কোথায়ই যেতে চাইছেন না নিশ্চই। তাহলে বরং এই গরমে একদিনের জমিদার হয়ে যেতে পারেন, কিম্বা রাজা?
ভাবছেন মজা করছি! আরে না না। গানের লাইনে আছে না, ‘মেজাজটাই তো আসল রাজা।’ এক থেকে দুদিনের ছুটিতে অবশ্যই ঘুরে আসা যায় কলকাতার আশপাশের একাধিক রাজবাড়ি ও জমিদারবাড়ি থেকে। প্রথমত গরমের দিনে বাইরে ঘুরতে হবে না। এই সব রাজবাড়িতে মোটা মোটা দেওয়াল ঘর এমনিতেই ঠান্ডা। তার ওপর রাজকীয় পালঙ্কে এসির হাওয়া উপভোগের মতো সমস্ত সুযোগ-সুবিধেই দেয় বেশ কয়েকটি রাজবাড়ি। ফলে গরমে রাজবাড়িতে থেকে রাজকীয় খাওয়া, জমিদারি ঠাঁটবাট আর বিশাল বাড়ির আনাচ-কানাচ যদি ঘুরে দেখতে চান তাহলে আপনার ট্র্যাভেল ডেস্টিনেশন হতেই পারে কোনও রাজবাড়ি।
বাওয়ালি রাজবাড়ি
কলকাতা থেকে ৩৩.৪ কিমি দূরে অবস্থিত বাওয়ালি রাজবাড়ি। ট্রেনে যেতে হলে বজবজ স্টেশনে নেমে গাড়ি বা টোটো ভাড়া করে যেতে পারবেন বাওয়ালি রাজবাড়ি। রাজকীয় রাজবাড়িতে পর্যটকদের জন্য এলাহী ব্যবস্থা রয়েছে। চাইলে কেউ গিয়ে ডে ট্রিপ করতে পারেন। অর্থাত্ দিনভর ঘোরা, খাওয়ার প্যাকেজ
পর্যটকদের থাকবার জন্য বন্দোবস্তও রয়েছে। ঘর অনুযায়ী ভাড়া। প্রতি রাতের খরচ ন্যূনতম ৭ হাজার টাকা। সিজন অনুযায়ী ঘরের ভাড়া কম-বেশি হয়। সঙ্গে পাবেন রাজবাড়ির ৩০০ বছরের পুরোনো রন্ধনশৈলির খাওয়াদাওয়া।
যোগাযোগ- বিস্তারিত জানতে বাওয়ালি রাজবাড়ির ওয়েবসাইটে। http://therajbari.com/
ইটাচুনা রাজবাড়ি
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে দেড়ঘণ্টার রাস্তা পেরোলেই এই রাজবাড়ি। হুগলির চুঁচুড়া থেকে ১৯ কিমি এগোলেই হালসুই মোড়ের কাছে যেতে হবে। বাঁদিকে বেঁকলেই ইটাচুনা গ্রাম। এছাড়াও হাওড়া থেকে বর্ধমান মেন লাইনে যেতে খন্যান স্টেশনে নেমে অটো করে যাওয়া যায় এই রাজবাড়ি। রাজবাড়িতে বিখ্যাত মদনমোহনের মন্দির ছাড়াও দেখার জন্য রয়েছে পুরো বাড়িটাই। অ্যান্টিক ফার্নিচার আর বিশাল বাড়ি দেখতে দেখতেই সময় কেটে যায়। এতবড় বাড়ি যে প্রথমদিকে কোনদিকে কোন সিঁড়ি, কোন ঘর যে কেউ গুলিয়ে ফেলতেই পারেন। এখানেই শ্যুটিং হয়েছে সোনাক্ষী-রনবীর অভিনীত ছবি ‘লুটেরা’-এরও। পর্যটকদের থাকবার জন্য ১৪টি ঘরের বন্দোবস্ত রয়েছে এখানে। সঙ্গে থাকছে রাজকীয় বাঙালী খাবারের ব্যবস্থা। বিভিন্ন মানের ও দামের ঘর রয়েছে।
ঘর ভাড়া শুরু আড়াই হাজার টাকা থেকে। ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘর আছে। এরসঙ্গে জুড়বে ট্যাক্স। এখানে রাজকীয় বাঙালি খাবারও পাওয়া যাবে। থালি ৫৫০ টাকা থেকে শুরু।
যোগাযোগ- ৯৮৩০৫৪৭৭৫৯, ইটাচুনা রাজবাড়ির নিজস্ব ওয়েব সাইট থেকে বুকিং করা যায়।
বালাখানা রাজবাড়ি
নদিয়ার নবদ্বীপের মহেশগঞ্জে রয়েছে ১২০০০ বর্গফুটের ইতালিয়ান / ফরাসি স্থাপত্যে তৈরী একতলা বাড়ি । সেটাই বালাখানা জমিদারবাড়ি বলে পরিচিত হয়। এখানে হেরিটেজ হোম স্টের ব্যবস্থা রয়েছে। বাড়িটি নিঃসন্দেহে খুব সুন্দর। আশেপাশেও রয়েছে অনেক খোলামেলা জায়গা। কৃষ্ণনগর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে মহেশগঞ্জ। টোটো করে যাওয়া যায় কৃষ্ণনগর থেকে। বড় রাস্তা থেকে খানিকটা গলিতে ঢুকে বালাখানার প্রবেশদ্বার , অজস্র গাছ গাছালি ঘেরা একতলা বিশাল বাড়ি ।
প্রতিটি ঘরের ভাড়া একরাতের জন্য ৫ হাজার। তবে দুর্গা পুজো ও ডিসেম্বরের সময় ঘরভাড়া থাকে ৬ হাজার টাকা।
যোগাযোগ- ৯৮৩১৩২৮৪৮৬
আমাদপুরের জমিদারবাড়ি
বর্ধমানের মেমারির কাছেই আমাদপুর গ্রাম। শোনা যায়, প্রায় চারশো বছর আগে এই জমিদারির গোড়াপত্তন। জমিদারি ‘প্রথা’ অবলুপ্ত হলেও উত্তরসূরিরা বাড়ির একটি অংশ সংস্কার করে তা খুলে দিয়েছেন পর্যটকদের জন্য।পুরনো বাড়িটির বিশাল সব ঘর, মেহগনি কাঠের আসবাব, ঝাড়বাতি, জমিদারি বৈঠকখানায় সাজিয়ে রাখা ছবি ,সঙ্গে রয়েছে সবুজ বন, দিঘি হতে পারে অসাধারণ সামার ডেস্টিনেশন।
কীভাবে যাবেন-কলকাতা থেকে আমাদপুরের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটারের মতো। সড়ক পথে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বর্ধমানের মেমারি যেতে হবে। সেখান থেকে আমাদপুর মাত্র ৩ কিলোমিটার। ট্রেনে যেতে চাইলে নামতে হবে মেমারি স্টেশনে। সেখান থেকে ছোট গাড়িতে আমাদপুর।
যোগাযোগ-৯৮৩১০৩১১৮৩