দীর্ঘ ৬৫ ঘণ্টার জিজ্ঞাসবাদের পর বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকে গ্রেপ্তারের পরই কলকাতার পথে রওনা হন সিবিআই-এর তদন্তকারী আধিকারিকরা। এরপর আদালতে তোলা হলে খারিজ হয় জামিনের আবেদন। পাশাপাশি চারদিনের সিবিআই হেপাজতের নির্দেশ দেয় আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালত। আগামী ২১ এপ্রিল ফের মামলার শুনানি।
এদিকে সিবিআই-এর তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তৃণমূল বিধায়কের উপর তদন্তে অসহযোগিতা ও তথ্যপ্রমাণ নষ্টের অভিযোগ রয়েছে। একইসঙ্গে সিবিআই-এর তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে যে, জীবনকৃষ্ণর বাড়ি থেকে ৩ হাজার পাতার নথি পাওয়া গিয়েছে। শুধু তাই নয়, বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ককে জিজ্ঞাসবাদ করে রাজ্যের আরও ৮ থেকে ১০ জন বিধায়কের নাম ও এজেন্টদের নথি মিলেছে বলেও দাবি করা হচ্ছে সিবিআই-এর তরফ থেকে। সঙ্গে মিলেছে উদ্ধার হওয়া নথি থেকে মুর্শিদাবাদসহ আশেপাশের জেলার চাকরিপ্রার্থীদের নামও। আর এই সব লোকানো ছিল বিধায়কের বাড়ির পাশ থেকে এক ব্যাগে। সেখানেই মেলে টাকা লেনদেনের তথ্য।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, জীবনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যাঁদের নাম পাওয়া গিয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। জীবনের মুখোমুখি বসিয়ে তাঁদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে সিবিআইয়ের তরফ থেকে। পাশাপাশি সিবিআই-এর তরফ থেকে এ দাবিও করা হয়েছে যে, বড়ঞার তৃণমূল বিধায়কের নেতৃত্বে রীতিমতো চলত নিয়োগ দুর্নীতির র্যাকেট। চাকরিপ্রার্থীদের নাম সুপারিশ করার জন্য তাঁদের থেকে ৫ থেকে ৮ লাখ টাকা নেওয়া হত বলে দাবি সিবিআই-এর তদন্তকারী আধিকারিকদের। তবে এখানেই হাল ছাড়তে রাজ নন সিবিআই আধিকারিকেরা। এই ঘটনার সঙ্গে আর কারা যুক্ত রয়েছেন, তাও জানার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
এখানে একটা কথা বলতেই হয়। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের তদন্তে এর আগে শাসকদলের আরও কোনও নেতা-মন্ত্রী বা বিধায়কের বাড়িতে এত দীর্ঘ সময় তল্লাশি করেনি সিবিআই। এই জীবনকৃষ্ণের বিরুদ্ধেই গোয়েন্দাদের হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তা বাড়ির পুকুরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। জীবনের ফোন উদ্ধারের জন্য ঘটনার পুননির্মাণ করেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। এদিকে দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় বাড়ির পুকুর থেকে উদ্ধার হয় একটি ফোন। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ জলে পড়ে থাকার কারণে সেই ফোন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফোন শুকনোর জন্য ড্রায়ার ব্যবহার করেও ফোন চালু করা হয়নি। আর সেই কারণেই জীবনের ফোন ফরেন্সিকে পাঠানো হতে পারে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি তাঁর আরও একটি ফোন উদ্ধারের চেষ্টা করছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। তদন্তকারী সিবিআই আধিকারিকরা মনে করছেন তৃণমূল বিধায়কের ফোন থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। জীবনকৃষ্ণ সাহার বিরুদ্ধে আগেই নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল। এমনকী এই সংক্রান্ত একটি মোবাইল ফোনের রেকর্ডিং প্রকাশ্যে আসে। যদিও সেই অডিও- র সত্যতা যাচাই করা সম্ভ হয়নি ‘একদিন’-এর তরফ থেকে। তবে সূত্রে জানা গেছে, এই অডিও -তে চাকরি না দিতে পারার কারণে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলতেও নাকি শোনা গেছে তৃণমূল বিধায়ককে। যদিও অডিয়োর কথা অস্বীকার করেন তৃণমূল বিধায়ক।