দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তির পরিবারের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে বিপাকে ২০০ জন গ্রামবাসী

মালদা: মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল এক ব্যক্তির। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে সড়ক অবরোধ করেছিলেন মৃতের পরিবার-সহ গ্রামবাসীরা। আর সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার না করে পাল্টা বিক্ষোভকারী প্রায় ২০০ জন গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। আর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতি এবং মৃতের পরিবারের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মহেন্দ্রপুর গ্রামে। এখন অসহায় মৃতের পরিবার এই মামলা লড়তে হাতে কৌটো নিয়ে চাঁদা সংগ্রহ করে বেড়াচ্ছেন। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এমন ঘটনাকে ঘিরে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩ এপ্রিল মহেন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা আশুতোষ দাস শ্রাদ্ধানুষ্ঠান থেকে ভালুকাগামী রাজ্য সড়ক দিয়ে ফেরার সময় উল্টো দিক থেকে আসা একটি বাইকের ধাক্কায় মারা যান। ঘাতক বাইক আরোহী শামিম আক্তার ওরফে রিক্কিকে পুলিশের হেপাজতে তুলে দেয় এলাকাবাসী। কিন্তু পুলিশ হেপাজত থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়ায় পরের দিন ৪ এপ্রিল মহেন্দ্রপুর বাস স্ট্যান্ডে আশুতোষ দাসের মৃতদেহ রাস্তায় রেখে বিক্ষোভ দেখায় পরিবারের লোকেরা। সেই বিক্ষোভে সামিল হয়েছিল গোটা গ্রাম। পরিবারের লোকের অভিযোগ ছিল, এটা দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পনা মাফিক খুন। স্থানীয় শাসকদলের নেতারাও বিক্ষোভে সামিল হয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছিল। এবার সেই ঘটনায় বিক্ষোভাকারী ২০০ জনের বিরুদ্ধে স্বতপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ। পুলিশের এই কাণ্ডে তাজ্জব হয়ে গিয়েছে হরিচন্দ্রপুরের সাধারণ মানুষ। এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে জামিনের অর্থ জোগাড় করার জন্য চাঁদা তুলছে পরিবারের লোকেরা। কারণ, পরিবারের লোকের মতে যারা তাদের পাশে দাড়াতে গিয়ে কেস খেল তাদের জামিনের অর্থ তারা চাঁদা তুলে দেবে। হরিশ্চন্দ্রপুরের স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিমান ঝা, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ মহালদার সহ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মোজাহিদের বিরুদ্ধেও মামলা করেছে পুলিশ।
মৃত আশুতোষ দাসের মেয়ে দেবাদৃতা দাস বলেন, যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত তাদের বিরুদ্ধে না নিয়ে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করল পুলিশ। আমাদের এলাকার লোকেরা আমাদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে কেস খেল। তাই তাদের জামিনের অর্থ জোগাড় করার জন্য আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তুলছি।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ মহালদার বলেন, পুলিশের এই ভূমিকা ঠিক নয়। মমতা ব্যানার্জী একটা শান্তির বাতাবরণ তৈরি করেছে রাজ্য জুড়ে। সেখানে এই ঘটনা খুব নিন্দনীয়। তবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যত মামলা হয় হোক।
উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সম্পাদক রুপেশ আগরওয়াল বলেন, পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ প্রশাসন স্বৈরাচারী শাসন চালাচ্ছে। এই ঘটনা খুব নিন্দনীয়। যদিও এ প্রসঙ্গে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পক্ষ থেকে কোনওরকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × five =