গোটা মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস বাদ পড়ছে পাঠ্যপুস্তক থেকে। দেশের যে সমস্ত স্কুলে ন্যাশানাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং এর বই পড়ানো হয়, সেখানে ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ পড়বে মোঘল সাম্রাজ্যের অধ্যায়। আর এনসিইআরটি-র এই সিদ্ধান্ত ঘিরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। এ প্রসঙ্গে এবার কড়া বিবৃতি দিতে দেখা গেল রোমিলা থাপার, ইরফান হাবিবদের মতো ইতিহাসবিদদের। প্রসঙ্গত, এনসিইআরটি-র তরফে সিলেবাস থেকে বাদ পড়েছে কিংস এবং ক্রনিকলস; মোঘল কোর্ট ( সি ১৬ এবং ১৭ শতক)- এই অধ্যায়টি। ফলে এগুলি আর দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকে থাকবে না।
এদিকে এনসিআআরটি-র তরফে পড়ুয়াদের চাপ কমানোর যে অজুহাত দেওয়া হয়েছে, তা খারিজ করে দেওয়ার ঘটনায় রোমিলা থাপার, ইরফান হাবিবদের মত, পাঠ্যপুস্তক থেকে কিছু ঐতিহাসিক তথ্য মুছে দিয়ে ‘ছদ্ম ইতিহাস’ রচনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাঁরা এও জানান, ‘হোয়াটসঅ্যাপ সহ বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় ‘ইতিহাস’ তৈরির প্রবণতা চলছে।’
পাশাপাশি তাঁরা এ প্রশ্নও তুলেছেন, ‘এখন তো আর দেশে কোভিড পরিস্থিতি নেই। এখন তো স্কুলে পড়াশোনাও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গিয়েছে। কেন পাঠ্যক্রম কাটছাঁট করা হচ্ছে? এগুলো স্রেফ অজুহাত।’ এই একই সুর শোনা গেছে ইতিহাসবিদ জয়তী ঘোষ, মৃদুলা মুখোপাধ্যায়, অপূর্বানন্দ, উপিন্দর সিং-এর গলাতেও। এখানেই শেষ নয়, এনসিইআরটি-র এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সকলেই। এই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমেই ছাত্রছাত্রীদের ইতিহাস সচেতন করা তোলা উচিত। সেই পথ থেকে সরে এসে যদি পাঠ্যক্রম কাটছাঁট করা হতে থাকে, তাতে ছদ্ম ইতিহাস তৈরি করা হবে।
এখানে আরও একটা কথা বলতে হয়, সম্ভবত হিন্দি পাঠ্যপুস্তক থেকেও বেশ কিছু কবিতা এবং অনুচ্ছেদও বাদ পড়ার সম্ভাবনা। ২০২৩-২৪ সাল থেকেই এই পরিবর্তনগুলি বলবৎ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়াও দ্বাদশ শ্রেণির সিভিকস বইয়ের বেশ কিছু বিষয় পরিবর্তন করছে এনসিইআরটি। ‘আমেরিকান হেজিমনি ইন ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স’ এবং ‘দ্য কোল্ড ওয়ার এরা’-নামের দুটি অধ্যায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দ্বাদশ শ্রেণির ‘স্বাধীনতার পরে ভারতীয় রাজনীতি’ থেকে ‘জনপ্রিয় আন্দোলনের উত্থান’ এবং ‘এক পক্ষের আধিপত্যের যুগ’ নামে দুটি অধ্যায়ও পরিবর্তন করা হয়েছে। পাশাপাশি দশম এবং একাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে আর থাকবে না ‘গণতন্ত্র এবং বৈচিত্র্য’, ‘জনপ্রিয় সংগ্রাম ও আন্দোলন’ এবং ‘গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক অধ্যায়গুলি।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে এনসিইআরটি-র স্কুলের সিলেবাস কমানো নিয়ে সরব হয়েছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর। পড়ুয়াদের সার্বিক বিকাশের জন্য সিলেবাস অর্ধেক কমানো উচিত বলে মনে করেন তিনি। তবে ইতিহাসের সিলেবাস থেকে কেন শুধু মোঘল সাম্রাজ্যের মতো অধ্যায় বাদ দেওয়া হচ্ছে, সেবিষয়ে কোনও যুক্তি পাওয়া যায়নি। মোঘল অধ্যায়, গান্ধি হত্যার খুঁটিনাটি এবং গুজরাত প্রসঙ্গ বাদ পড়া নিয়ে সরব হতে দেখা গেছে সিপিআইএম, শিবসেনা, ডিএমকে-র মতো রাজনৈতিক দলগুলিকেও। একইসঙ্গে রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ কপিল সিবল টুইটে কটাক্ষ করে লেখেন, ‘আধুনিক ভারতের ইতিহাস ২০১৪ থেকে শুরু করলেই তো হয়।’