টাকার বিনিময়ে অয়ন শীল মুড়ি মুড়কির মতো চাকরি বিক্রি করেছেন শিক্ষকতার। এরই পাশাপাশি অয়ন শীলের নাম জড়িয়েছে পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতিতেও। এবার ইডি-র দাবি, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ছাড়াও পুরসভা নিয়োগ দুর্নীতিতে ১২ কোটি টাকা তুলেছিলেন অয়ন শীল। তবে এই টাকার অঙ্কটা আরও বাড়তে পারে বলে দাবি কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারী আধিকারিকদের।
একইসঙ্গে ইডি-র তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে যে, অয়ন শীল যে পুরসভা নিয়োগ দুর্নীতিতে বিভিন্ন জনের থেকে প্রায় বারো কোটি টাকা তুলেছিলেন, তার তথ্যপ্রমাণ তাঁর হার্ড ডিস্কেই মিলেছে। সেই টাকা কোথায় কোথায় বিনিয়োগ হয়েছে, এখন সেটাই খতিয়ে দেখতে চান ইডি-র আধিকারিকেরা। সূত্রের খবর, অয়ন বিভিন্ন পুরসভার নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থী প্রতি এক লক্ষ টাকা কমিশনও নিতেন। অয়নের বাড়ি থেকেও এই সংক্রান্ত একাধিক নথি, হার্ড ডিস্ক সহ বাজেয়াপ্ত করেন ইডি-র গোয়েন্দারা। ইডি সূত্রের দাবি, পুরসভা নিয়োগের জন্য প্রায় ষাটটির বেশি পুরসভা থেকে এই বিপুল অঙ্কের টাকা তুলেছিল অয়ন। এক একটি পোস্ট অনুসারে নেওয়া হত কমিশন। পোস্ট অনুযায়ী ঠিক হত টাকার অঙ্ক। কম্পিউটার হার্ড ডিস্ক ঘেঁটে ও অয়নকে জেরা করে এখনও পর্যন্ত ১২ কোটি টাকার লেনদেনের কথা জানতে পেরেছে ইডি। সঙ্গে ইডি-র আধিকারিকদের কাছে এ খবরও এসেছে, পুরসভায় নিয়োগে মজদুর, ক্লার্ক, গ্রুপ ডি, সি বিভিন্ন পদের জন্য নেওয়া হত মোটা টাকার কমিশন। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে এও জানা গিয়েছে, ৯০টি পুরসভায় অয়নের মাধ্যমে ৫ হাজারের বেশি নিয়োগ হয়েছে। অয়নের সংস্থা এবিএস ইনফোজোন নিয়োগের এই বিষয়গুলি দেখত। ইডির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পানিহাটি, হালিশহর, কামারহাটি পুরসভায় নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে অয়ন শীলের সংস্থার হাত ধরে। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের আগে পর্যন্ত কলকাতা পুরনিগম বাদ দিয়ে রাজ্যের আর কোনও পুরনিগম বা পুরসভা মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের আওতাধীন ছিল না। ফলে সেই সময় এই পুরসভা বা পুরনিগমে নিয়োগের ক্ষেত্রে পুরসভার চেয়ারম্যান বা সেই প্রতিষ্ঠান গঠিত কমিটি ছিল শেষ কথা। পরবর্তী অর্থবর্ষ থেকে অবশ্য মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের আওতায় আসে এই নিয়োগ। নাম হয় ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশন। ইডি সূত্রে এও জানা গিয়েছে, কলকাতা পুরনিগমের ‘কনজারভেন্সি মজদুর’ পদে নিয়োগ তালিকার বাইরে থাকা অর্থাৎ এক্সেম্পটেড ক্যাটাগরির এক চাকরি প্রার্থীর নিয়োগ সংক্রান্ত চিঠি পাওয়া যায় অয়ন শীলের বাড়ি থেকে। আর এই সূত্র ধরেই ইডি-র আধিকারিকদের ধারনা, শুধু একটা নয়, এরকম বহু পুরসভা কিংবা পুরনিগমে নিয়োগের অন্যতম মাথা ছিলেন অয়ন। এদিকে আবার এসএসসিতে তাঁরই হাত ধরে নিয়োগ হয়েছে ১ হাজার। স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগে অয়নের আবার কমিশন ছিল আলাদা। এখানেই শেষ নয়। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, কমিশন ছাড়াও আরও নানা পথে অয়নের পকেটে ঢুকত টাকা।
এদিকে ইডি তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে অয়নের নামে বেনামে ফ্ল্যাট রয়েছে একাধিক জায়গায় । সেই ফ্ল্যাটগুলো কেনার জন্য কোথা থেকে এত টাকা পেয়েছিলেন অয়ন তাও খতিয়ে দেখচ্ছে ইডি। প্রায় ৭-৮ ফ্ল্যাটর মধ্যে চুঁচুড়া ছাড়া কলকাতা ও কলকাতার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বেশিরভাগ ফ্ল্যাট রয়েছে।