শিবপুরের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশ প্রশাসনকে আক্রমণ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর

হাওড়ার শিবপুরে রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে ছড়ায় উত্তেজনা। দোকানপাট ভাঙচুরের সঙ্গে ঘটে অগ্নি সংযোগের ঘটনাও। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ৩৬ জনকে গ্রেপ্তারও করছে পুলিশ, এমনটাই সূত্রে খবর। এদিকে হাওড়াতে সব পক্ষকে শান্ত থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আবহে টুইটে ধর্মীয় একটি সম্প্রদায়কে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ তুলে টুইটে সরব হতে দেখা যায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে। এমনকী এই টুইটের সঙ্গে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে তিনি এও দেখান, কী ভাবে হিংসা ছড়াতে অস্ত্রের ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ঘটনায় অভিষেকের তির বিজেপির দিকেই। অভিষেকের দাবি, এটা বিজেপির তরফ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে হিংসা ছড়ানোর জন্য করা হচ্ছে। বাংলায় ধর্মীয় সম্প্রীতি ক্ষুন্ন করা হচ্ছে বলে সরব হয়েছেন তিনি। যদিও এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি ‘একদিন’। একইসঙ্গে অভিষেকের সংযোজন, ‘হিংসা ছড়াতে অস্ত্রের জোগান দেওয়া হচ্ছে। ইচ্ছাকৃতভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। রাজনৈতিক ফায়দা আদায় করার জন্য। বিজেপির প্লেবুক থেকে একটি ক্লাসিক অপবিত্র ব্লুপ্রিন্ট।’
এরপরই এই প্রসঙ্গে মুখ খুলতে দেখা যায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। শুক্রবার হাওড়ার পুলিশ কমিশনারের অফিসারে দফতরে সিডি জমা দেওয়ার পর সাংবাদিক বৈঠক করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই সাংবাদিক বৈঠক থেকে হাওড়ার ঘটনার জন্য তৃণমূল ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই কার্যত দায়ী করেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পুলিশ প্রশাসনকে তীব্র আক্রমণ করে শুভেন্দু জানান, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোষণের রাজনীতির কারণে হাওড়ার শিবপুরের এই ঘটনা ঘটেছে।’ শুভেন্দু পাশাপাশি এও জানান, ‘গোটা রাজ্যজুড়ে আয়োজিত ১ হাজারেরও বেশি মিছিল করার জন্য পুলিশের থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল।’ একইসঙ্গে তাঁর সংয়োজন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস চক্রান্ত করে এই কাজ করেছে। রাজ্যে কোথাও সমস্যা হয়নি, শুধু হাওড়াতই হয়েছে। বগটুইকাণ্ড, সাগরদিঘির উপনির্বাচনে পরাজয়ের পর তৃণমূলের সভানেত্রী বুঝেছিলেন যে সংখ্যালঘু ভোট তাঁর হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। সেই ভোটে ফেরাতে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে তৃণমূল নেতা শামিম আহমেদের নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এই ঘটনার জন্য মমতা ও তাঁর দল দায়ী।’ শুভেন্দু পাশাপাশি এও জানান, ‘সব সংখ্যালঘু খারাপ নয়। একটা জায়গায় গণ্ডগোল হচ্ছে। ওই একই জায়গায় গত বছরও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশকে কোনও কঠোর পদক্ষেপ নিতে নিষেধ করা হয়েছে। যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁরা অধিকাংশ হিন্দু। যে সংখ্যালঘুদের গ্রেপ্তার র করা হয়েছে তাঁরা গণ্ডগোলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। দাঙ্গাবাজদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তৃণমূলের গুন্ডারা এই কাজ করেছে। মুসলিম ভোট ফিরে আনার জন্য এই কাজ করা হচ্ছে।’
এখানেই শেষ নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে হিন্দুদের অপমান করার পাশাপাশি মিথ্যাচারের অভিযোগও করেন শুভেন্দু। শিবপুরে রামনবমীর মিছিল রুটবদল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে অভিযোগ করছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি এও দাবি করেন, ‘মিথ্য বলার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর রামভক্তদের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। তুষ্টিকরণের রাজনীতির কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। আমরা পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি।’ একইসঙ্গে বিরোধী দলনেতার দাবি, দুর্নীতি ও ডিএ আন্দোলনের মতো বিষয়গুলি থেকে চোখ ঘোরাতে হাওড়াতে এই ঘটনা ঘটনো হয়েছে। এদিন সাংবাদিক বৈঠক থেকে সিপিএমের উদ্দেশেও প্রশ্ন ছুড়ে দেন শুভেন্দু। বলেন, ‘তথাকথিত তৃণমূলের বিরোধী সিপিএমকে বলব হাওড়া ও ডালখোলার ঘটনায় আপনাদের অবস্থান কী তা স্পষ্ট করুন।’
এদিকে হাওড়ার ঘটনায় যে ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ সেই প্রসঙ্গে শুভেন্দু জানান, ‘দুপুর থেকে ওই এলাকায় ফের ঘটনা ঘটছে। পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে ওখানে তাণ্ডব চালানো হচ্ছে। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব। যেভাবে মোমিনপুর-ইকবালপুরকে ঠাণ্ডা করেছি, সেইভাবে ওই এলাকাকেও ঠাণ্ডা করে ছাড়ব।‘এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু এও দাবি করেন যে হাওড়ার রামনবমীর মিছিলে কারও হাতে কোনও অস্ত্র ছিল না। সকলের হাতে ধ্বজা ছিল বলে জানান বিরোধী দলনেতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 9 =