নাবালিকা হত্যার ঘটনায় অগ্নিগর্ভ তিলজলা, প্রায় ২ ঘণ্টা রেল অবরোধ, ধৃত অলোক কুমারের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশি হেপাজত

তিলজলা শ্রীধর রায় রোডের বছর সাতেকের নাবালিকার হত্যার ঘটনায় অগ্নিগর্ভ তিলজলা। রবিবার রাতের জের ছিল সোমবার সকালেও। রবিবার রাতে তিলজলা থানায় আক্রমণে পর সোমবার দুপুরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে জনরোষ। রণক্ষেত্র বন্ডেল গেট সংলগ্ন এলাকা। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের পর ধরিয়ে দেওয়া আগুন। ফ্লাইওভারের উপর দাউদাউ করে জ্বলছে পুলিশের গাড়ি। বহুদূর থেকে নজরে আসে কুণ্ডলীকৃত কালো ধোঁয়া। উন্মত্ত জনতা আগুন লাগিয়ে দেয় পুলিশের বাইকেও। দমকল আগুন নেভাতে এলে বাধা দেয় জনতা। মুহূর্মুহু ইঁটবৃষ্টিতে পিছু হটতে বাধ্য হয় দমকলও। এরপই এলাকায় পাঠানো হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। পুলিশকেও লক্ষ্য করেও চলে লাগাতার ইঁটবৃষ্টি। এদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত অলোক কুমারকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। অন্যদিকে থানা ভাঙচুরের জন্য ধৃত ২ জনকে জামিন দিয়েছেন বিচারক।
সোমবার সেই ক্ষোভের আঁচ এসে পড়ে রেলপথেও। পার্ক সার্কাস স্টেশনে হয় রেল অবরোধ। তার জেরে প্রায় সওয়া ২ ঘণ্টা বন্ধ থাকে ট্রেন চলাচল। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনই চরম বিপাকে নিত্যযাত্রীরা। এরপর বেলা ২টো ২৮ মিনিট থেকে বিকেল ৪টে ২০ পর্যন্ত চলে টানা রেল অবরোধ। বিক্ষোভকারীরা এদিন ট্রেন লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু করেন। বন্ডেল গেটের সামনে এই বিক্ষোভ দেখে ট্রেনের ভিতরে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অধিকাংশ ট্রেনের দরজা দিয়ে ঝাঁপ দেন রেললাইনে। তবে সকলের সে সামর্থ ছিল না। কারণ, কারও কোলে বাচ্চা, কারও সঙ্গে বয়স্ক মানুষ। তবে এই ঘটনার নিন্দা করা হয় পূর্ব রেলের তরফ থেকে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘ট্রেনকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া দুর্ভাগ্যজনক। যাঁরা ওই ট্রেনে সফর করছেন তাঁদের তো কোনও দোষ নেই। একটা ঘটনা যার সঙ্গে রেল কোনওভাবেই জড়িত নয়, তার জন্যও যাত্রীদের এভাবে বিব্রত করার অধিকার কারও নেই। আমরা একটাই কথা বলব, যা ঘটেছে সেটা দুর্ভাগ্যজনক। তবে তার জন্য আরেকটা মানুষকে বিপদে ফেলার কোনও অধিকার কারও নেই।‘ তবে এই ঘটনার জেরে প্রায় ১৫টি লোকাল ট্রেন বাতিল করতে বাধ্য হয় রেল। আপ-ডাউন মিলিয়ে এই ট্রেন বাতিল করা হয়। রেল অবরোধের জেরে চরম দুর্ভোগে পড়েন নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেনে বসে কার্যত নাকাল হতে হয় তাঁদের। অন্যদিকে পার্ক সার্কাস, শিয়ালদহ কিংবা গড়িয়া, যাদবপুর স্টেশনগুলিতেও থিকথিকে ভিড় মানুষের।
এদিকে রবিবারে এই নৃশংস খুনের ঘটনায় তিলজলার শ্রীধর রায় রোডের বাসিন্দারা জানান, তিলজলা এলাকারই একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিল ওই নাবালিকা। পড়াশোনায় খুব খারাপ ছিল না। ওই পরিবারটির দুই সন্তান। নির্যাতিতা ও নিহত নাবালিকার এক চার বছরের ভাইও রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবেশীরা এও জানান, স্বভাবে অত্যন্ত মিষ্টি ছিল মেয়েটি। সব প্রতিবেশীদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল তার। তাই প্রত্যেকেই তাকে ভালোবাসতেন। মেয়েটির মা জানান, মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাদের মেয়ে এদিক-ওদিক, প্রতিবেশীদের বাড়িতে গিয়ে খেলাধুলাও করত। তারা কোনদিন মেয়েকে বারণ করেননি। তাই রবিবার সকালে যখন কিছুক্ষণের জন্য মেয়েকে দেখতে পাননি, তখন প্রথমে তারা কিছুই ভাবেননি বুঝতে পারেননি যে, কত বড় সর্বনাশ হয়ে গেছে মেয়ের। স্থানীয় সূত্রে এ খবরও মিলেছে, এদিন স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষিকারা দেখা করতে আসেন নাবালিকার পরিবারের লোকেদের সঙ্গে। মা ও পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কথা বলার পর চোখে জল শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও।

তিনি জানান, যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তবে ট্রেন যাত্রীদের এই ঘটনায় কোনও দোষ ছিল না। তাই তাঁদের পথ অবরুদ্ধ করার কোনও অর্থ ছিল না বলেই জানান তিনি। ৮ বছরের এক নাবালিকার দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে রবিবার রাত থেকে উত্তপ্ত তিলজলা থানা এলাকা। পূর্ব রেলের তরফে কৌশিক মিত্র বলেন, “তিলজলার ঘটনার জন্য পার্ক সার্কাস স্টেশনে ট্রেন অবরোধ শুরু হয় দুপুর ২টো ২৮ মিনিট থেকে। তার ফলে আপ ও ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল ৪টে ২০ পর্যন্ত। অনেকগুলি ট্রেন বাতিল হয়ে যায়। কারণ এটা একটাই লাইন আপ ও ডাউন লাইনে শিয়ালদহের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য। যা হয়েছে তাতে রেলের কোনও ভুল ছিল না। আমরা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। স্থানীয় প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করেছে। আরপিএফও ছিল। যাত্রীদের যাতে কোনও ক্ষতি না হয় সেটা তারা দেখেছে। ৪.২০ নাগাদ অবরোধ তোলা সম্ভব হয়। ট্রেন চলাচল এখন স্বাভাবিক।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 + 7 =