ওএমআর শিট নিয়ে সিবিআইয়ের হাতে শুক্রবার গাজিয়াবাদ থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন নীলাদ্রি। এদিকে সিবিআইয়ের তরফ থেকে তদন্ত চলছে, ওএমআর শিট বিকৃতিতেও নীলাদ্রির হাত কতদূর বিস্তৃত তা নিয়ে। কারণ, ইতিমধ্যেই তদন্তে উঠে এসেছে প্রায় ৮ হাজার ওএমআর শিট বিকৃত করার ঘটনা। যার মধ্যে রয়েছে গ্রুপ-সি মামলায় ৩৪৮১ ওএমআর শিট, গ্রুপ-ডি মামলায় ২৮২৩টি, নবম-দশমে ৯৫২ এবং একাদশ-দ্বাদশ ৯০৭টি ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র বিকৃতির ঘটনা। আর সিবিআইয়ের দাবি, কীভাবে ওএমআর শিট বিকৃত করা হবে তার সমস্ত দায়িত্ব ছিল এই নীলাদ্রির ওপরেই। সিবিআইয়ের তরফ থেকে এও দাবি করা হচ্ছে, গ্রুপ-সি মামলায় নীলাদ্রিকে গ্রেপ্তার করা হলেও, শিক্ষা দপ্তরের অন্যান্য বিভাগের পরীক্ষার ওএমআর শিট কারচুপিতেও যোগ পাওয়া গিয়েছে তাঁর। আর এখানেই সিবিআইয়ের অনুমান, য় ৮ হাজার ওএমআর শিট বিকৃতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন নীলাদ্রি। শুধু এসএসসি উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গেই নয়, গাজিয়াবাদে ওএমআর শিট প্রস্তুতকারী সংস্থার এর এক প্রাক্তন অধিকারিকের সঙ্গে যোগ রয়েছে বলে অনুমান গোয়েন্দাদের। এই সব তথ্যও নীলাদ্রিকে জেরা করে জানার চেষ্টা করছে সিবিআই। তবে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগেও দুর্নীতির ঘটনায় তাঁকে অপরাধীর কাঠগড়ায় আগেই তুলেছিলেন রাজ্য গোয়েন্দা দপ্তরের আধিকারিকেরা, এমনটাই জানা যাচ্ছে সিবিআইয়ের তরফ থেকে। এখন থেকে চার বছর আগে অর্থাৎ ২০১৯-এ মার্চে পটাশপুরের স্কুল সহ সরকারি চাকরির প্রতারণা মামলা তে সিআইডি গ্রেপ্তার করেছিল ,অয়ন ঘনিষ্ঠ নীলাদ্রি দাশকে। সিআইডি-র সেই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে জামিনের আর্জি জানিয়েছিলেন নীলাদ্রি দাশ। এরপর হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এবং সিআইডির দুই আধিকারিক তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে কোন প্রমাণ নেই জানানোর পরই জামিন পান নীলাদ্রি। তবে খুব পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি নেই নীলাদ্রির, এমনটাই দাবি সিবিআইয়ের। পাশপাশি সিবিআইয়ের তরফ থেকে এও জানানো হয় যে, এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতির ষড়যন্ত্রে নীলাদ্রি যুক্ত হন সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, ২০১৪-১৫ সালের পর এসএসসি এবং রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের কর্তাদের একাংশের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ আঁতাঁত তৈরি হয়। টাকার বিনিময়ে ওএমআর শিট বিকৃত করতেন তিনি।
পাশাপাশি সিবিআই-এর তরফ থেকে এও জানা যাচ্ছে, এই ওএমআর শিট বিকৃত করার ঘটনায় সিবিআইয়ের হাতে ধৃত নীলাদ্রি উচ্চ শিক্ষিত। নীলাদ্রি গাজিয়াবাদ আইএমটি থেকে এমবিএ-ও করেন। তার আগে পড়াশুনা কলকাতার ডনবোস্কোতে। এরপর নীলাদ্রি নিউ দিল্লিতে এনডি ইনফসিস্টেমস প্রাইভেট লিমিটেড -এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে আসীন ২০০২-এর মে মাসে। ১০ বছর ১১ মাস যুক্ত ছিলেন সেই সংস্থায়। এরপর নায়সা কমিউনিকেশন প্রাইভেট লিমিটেডে ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন নীলাদ্রি ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অর্থাৎ, প্রায় ১২ বছর ১ মাস ধরে দায়িত্বও সামলান। সিবিআইয়ের দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে নাকি এমনটাই জানিয়েছেন নীলাদ্রি।
এদিকে নীলাদ্রি দাশের মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর। সিবিআই -এর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তার মোবাইলের তথ্য ডিকোড করার জন্য সেন্ট্রাল ফরেন্সিকে পাঠানো হচ্ছে। কারণ, সিবিআই আধিকারিকদের ধারনা, এই তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে নিয়োগ দুর্নীতির শিকড় সন্ধানে। রবিবার নাইসার এক কর্মীকেও কলকাতায় নিজাম প্যালেসে তলব করা হয়েছে সিবিআইয়ের তরফ থেকে।
এদিকে শনিবার নিজামে প্রথমে এসপি সিনহাকে জেরা করে সিবিআই। এরপর নাইসার ভাইস প্রেসিডেন্ট নীলাদ্রি দাস এবং এসপি সিনহাকে মুখোমুখি জেরা করা হয়। এসপি সিনহা এবং উপদেষ্টা কমিটির অন্যান্যদের সঙ্গে যোগসাজশ নিয়ে জেরা করা হয় নীলাদ্রিকে। কারণ, সিবিআইয়ের আধিকারিকরা জানতে চান ওএমআর শিট বিকৃত বা ম্যানুপুলেশন করার জন্য নীলাদ্রিকে কবে থেকে যোগাযোগ করেন এসএসসি প্রাক্তন উপদেষ্টা কর্তারা সে ব্য়াপারেও। পাশাপাশি এ প্রশ্নও উঠছে, এই ওএমআর শিট প্রস্তুতকারী সংস্থার আর কে কে জড়িত তা নিয়েই। সিবিআই-এর এখন প্রধান লক্ষ্য, দুজনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করে আরও তথ্য জানার। কারণ সিবিআইয়ের অনুমান , একা নীলাদ্রি নয়, এই ওএমআর শিট ঘটনায় ওই সংস্থার আরও কেউ জড়িত থাকতে পারেন।
এদিকে সিবিআই আধিকারিকেরা জানতে পেরেছেন নগদেও টাকা যেত নীলাদ্রির কাছে। আর সেই কারণেই নীলাদ্রির বিপুল সম্পত্তির ওপর নজর দিয়েছে সিবিআই। কারণ, ইতিমধ্যেই সিবিআই আধিকারিকদের নজরে এসেছে নীলাদ্রির একাধিক ফ্ল্যাট, জমি, ব্যাংক অ্যাকাউন্টয়ের বিপুল টাকার লেনদেনের ঘটনা। এখানেও সিবিআই-এর তদন্তকারীদের প্রশ্ন, কোথা থেকে এলো বিপুল পরিমাণ টাকা তা নিয়েও। এসএসসি দফতরের ধৃত পাঁচ উপদেষ্টা সদস্য কমিটির শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে ওএমআর সিট বিকৃত করতে কত টাকা কমিশন পেতেন নীলাদ্রি তাও জানার চেষ্টা করছে সিবিআই। এদিকে সিবিআইয়ের জেরায় অসহযোগিতা করছে নীলাদ্রি এমনটাই জানানো হচ্ছে সিবিআই-এর তরফ থেকে। সূত্রে খবর, সোমবার নীলাদ্রি দাস ও এসপি সিনহাকে সিবিআই স্পেশ্যাল আদালতে পেশ করা হবে।