‘কী ভেবেছেন? জেলে পুরবেন?’ সাংসদ পদ খারিজের পর শনিবার প্রথম এমন ভাবেই গর্জে উঠতে দেখা গেল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধিকে। শনিবার দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দফতর থেকে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এই সাংবাদিক বৈঠক থেকে রাহুল বার্তা দেন, ‘আমাকে ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখা যাবে না। আমার মুখও বন্ধ করা যাবে না। আমি প্রশ্ন করেই যাব।‘
পাশাপাশি এদিনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে তিনি এও জানান, ‘আমি কোনও বিদেশি শক্তির সাহায্য চাইনি। অথচ আমার সম্পর্কে মন্ত্রীরা সংসদে মিথ্যে কথা বলেছেন। আমি নাকি বিদেশি শক্তির থেকে সাহায্য় নিয়েছি। আমি এ ধরনের কোনও কাজ করিনি। স্পিকারকে বলেছি, সংসদে কোনও সদস্য অন্য সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললে সেই অভিযুক্ত সদস্যের জবাব দেওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু একাধিক চিঠি লেখার পরও কোনও জবাব পাইনি।’ সঙ্গে এও জানান, আদতে গৌতম আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কী সম্পর্ক, জানতে চেয়েছিলাম। তাই আমার কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।’ আর এরই রেশ টেনে কংগ্রেস নেতা রাহুল এ প্রশ্নও তোলেন, ‘আদানি সংস্তার ২০ হাজার কোটি টাকা কার?’ আদানি প্রসঙ্গে রাহুল এও জানান, ‘এটা ওবিসি মামলা নয়। নরেন্দ্র মোদি ও আদানির সম্পর্কের মামলা। ২০ হাজার কোটি টাকা আদানি কোথা থেকে পেয়েছেন জানা নেই। সেই নিয়ে আমি প্রশ্ন করছি। আর তার জবাব চাই। আমি একটাই প্রশ্ন করেছিলাম। আদানি জির শেল কোম্পানি রয়েছে। সেখানে কেউ ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল। আদানি জির টাকা নেই। আদানি জির পরিকাঠামোর ব্যবসা। পয়সা অন্য কারও। প্রশ্ন একটাই, ২০ হাজার কোটি টাকা কার?’ একইসঙ্গে মনে করিয়ে দেন, ‘সংসদে সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট দেখিয়ে বিস্তারিত প্রমাণ দেখিয়ে আদানি ও মোদির সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত বলেছিলাম। এই সম্পর্ক নতুন নয়। মোদি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সময় থেকেই তাঁদের মধ্য়ে সম্পর্ক। জনগণের সামনে তার প্রমাণও রয়েছে। সংসদে আমি ছবি দেখিয়েছিলাম, বিমানে নিজের বন্ধুর সঙ্গে খুব আরাম করে বসেছিলেন মোদি।’ আর এখানেই কংগ্রেস নেতার দাবি, ‘বিজেপি দিকভ্রষ্ট করার চেষ্টা করছে। কখনও ওবিসি, বিদেশ আবার কখনও সদস্যপদ খারিজের কথা বলবে।‘ এরই পাশাপাশি এও জানান, লোকসভার স্পিকারকে আমি দুবার চিঠি দিয়েছি। সেই চিঠির আজ পর্যন্ত কোনও জবাব পাইনি। সংসদে আমার নামে মিথ্যে অভিযোগ আনা হয়েছে। আসলে মুখ বন্ধ করতেই আমার সাংসদ পদ খারিজ করা হয়েছে। আমি দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য লড়াই করছি।’ একইসঙ্গে প্রত্যয়ের সঙ্গে তাঁর স্পষ্ট হুঙ্কার, ‘জেলে ভরুক, সাংসদ পদ খারিজ করুক, মারধর করুক, লড়াই থামাব না।’ একইসঙ্গে ওয়ানাডের বাসিন্দাদের প্রতি রাহুলের বার্তা, ‘আমি বলেছি তাঁদের সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। ওয়ানাডের বাসিন্দাদের জন্য আমি চিঠি লিখব ঠিক করেছি। তাঁদের জানাব আমি তাঁদের জন্য আমার মনে কোন জায়গা রয়েছে।‘
ভবিষ্যত রণনীতি নিয়েও রাহুলের বক্তব্য, ‘রাষ্ট্র হোক আর যাই হোক আমি সত্য়ি দেখি। এছাড়া আর কিছুতে আগ্রহ নেই আমার। আমি সত্যি কথা বলি। রাজনীতিতে এটা ফ্যাশনেবল কথা নয়। কিন্তু এটা আমার রক্তে রয়েছে। এর থেকে অন্য রাস্তা আমি বের করতে পারব না। এটা আমার জীবনের তপস্যা। আমাকে মারলে, ধরলে, সদস্যপদ খারিজ করলে, জেলে রাখলেও আমার কিছু যায় আসে না। আমি আমার তপস্যা করব।‘ একইসঙ্গে এও জানান, ‘অতীতে বাকি প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়া থেকে রাজনৈতিক দলগুলি যে সমর্থন পেত বর্তমানে তা পাওয়া যায় না। জনতার কাছে পৌছে যাওয়ার জন্য বিরোধীদের কাছে একটাই রাস্তা রয়েছে।’ এরই রেশ টেনে রাহুল এদিন এও জানান, ‘রাহুল গান্ধি ‘ভারত জোড়ো যাত্রায়’ সাড়ে ৪ মাস জনতার মধ্য়ে ছিল। এটা আমার কাজ। আমি করতে থাকব।‘ এরই পাশাপাশি উঠে আসে ওবিসি সম্প্রদায়ের অপমানের অভিযোগ আনার প্রসঙ্গও। এই প্রসঙ্গে রাহুল এও জানান, ‘গত কয়েক মাসে ভারত জোড়ো যাত্রার সব বক্তৃতায় আমি বলেছি সব সমাজ এক। সবাইকে একসঙ্গে চলতে হবে। হিংসা ও ঘৃণা থাকা উচিত নয়। এর থেকে আমার অবস্থান তো স্পষ্ট।‘