ক্যাগ রিপোর্টে ২০০৯ সালের বাম আমল থেকে ২০১৭ সালের তৃণমূল আমল অবধি নিয়োগের ক্ষেত্রে বেনিয়মের অভিযোগ সামনে এসেছে। এই প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর দাবি, বাম আমলে ৪৬ হাজার নিয়োগ দুর্নীতির কথা উল্লেখ আছে ক্যাগ রিপোর্টে। বৃহস্পতিবারই সেই রিপোর্টের কথা জানতে পেরেছেন বলে জানান তিনি। এরপরই সিপিএম নেতাদের উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘কাঁচের ঘরে বসে ঢিল ছুড়বেন না। আমাদের কাছে আরও অনেক অভিযোগ আসছে।‘ এই প্রসঙ্গে ব্রাত্য শুক্রবার এও জানান, ‘সিপিআইএম কাজ না করে বড় বড় কথা বলা, কুৎসা করে। ‘সিপিএম রাজনৈতিক দল নয়, স্বভাব’ বলেও মন্তব্য করেন ব্রাত্য বসু। সঙ্গে এও জানান, ‘অতীতেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে, বর্তমানেও তাঁর অন্যথা হয়নি। আমরা বলেছি রাজ্যে যে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে শোরগোল চলছে, বাম জমানাকেও সেই তদন্তের আওতায় আনা হোক। কারণ একপেশে ভাবে একটি রাজনৈতিক দলের বদনাম করা হচ্ছে।’
এদিন সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী মিলি ভট্টাচার্যের চাকরি কীভাবে হয়েছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম না সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী দীনবন্ধু অ্যান্ড্রিউজ কলেজে চাকরি করতেন। সম্প্রতি তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বিষয়টি সামনে আনেন।’ তবে এই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে কি হবে না সেই বিষয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এরই পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রীর সংযোজন, ‘শ্বেতপত্র প্রকাশ করব বলতেই সিপিএম হুমকি দিচ্ছে। চ্যালেঞ্জ করছে। কী বলতে চায় সিপিএম? গতকালই রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী আবদুল রেজ্জাক মোল্লা বলেছেন, হোলটাইমারদের স্ত্রীদের চাকরি বাঁধা থাকত। ওঁর পরিবারের লোকেরাও চাকরি পেয়েছে।’ এই প্রসঙ্গে ব্রাত্যর দাবি, তৃণমূল ‘বদলা নয় বদল চেয়েছিল। সে কারণেই বাম আমলের এই সব চাকরি নিয়ে কাটাছেঁড়া হয়নি।
প্রসঙ্গত, তৃণমূল ভবন থেকে বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রীয়ের চাকরি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কুণাল ঘোষ। তিনি জানিয়ছিলেন, সুজনের স্ত্রী মিলি ভট্টাচার্যের নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগের যাবতীয় নথি শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। এরই পাশাপাশি মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘সুজন চক্রবর্তী, দিলীপ বাবু, শুভেন্দু বাবুরা বড় বড় কথা বলছেন। তাঁরা নিজেদের দিকে দেখুন। উত্তরবঙ্গে তাঁরা কী করেছেন। ২০০৯-১০-এর ক্যাগ রিপোর্ট দেখুন।’ এরপরই ক্যাগ রিপোর্ট নিয়ে শুরু হয় চর্চা। আর এই বিতর্ক আরও উস্কে দিয়ে বৃহস্পতিবারই কলকাতার তৃণমূল কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী ফেসবুকে একটি পোস্টও করেন। সেখানে একটি রিপোর্ট তুলে ধরে তিনি দাবি করেন, ‘বহুচর্চিত ২০০৯-১০ সালের ক্যাগের রিপোর্টের একটি অংশ এটি। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, ২০০৯ ও ২০১০ সালের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ, ২০০৯ ও ২০১০ সালের সহ শিক্ষক নিয়োগ, ২০১০ সালের ক্লার্ক নিয়োগ, ২০১০ সালের গ্রুপ ডি নিয়োগ আর ২০১০ সালের লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ, সবেতেই অনিয়ম অস্বচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে।’ এরপরই শুক্রবার সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে বিকাশ ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।