মেহুলের বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস প্রত্যাহার ইন্টারপোলের

ভারত থেকে পলাতক হিরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসির বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস প্রত্যাহার করে নিল ইন্টারপোল। প্রসঙ্গত, রেড কর্নার নোটিস হলো, ইন্টারপোলের জারি করা এমন একটি কালো তালিকা, যাতে নাম থাকার অর্থ হলো, বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে লুকিয়ে থাকলেও, সংশ্লিষ্ট অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা যাবে সংশ্লিষ্ট দেশের ভূখণ্ড ও জলসীমা থেকে। আর এবার তার বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস প্রত্যাহার করে নেওয়ার অর্থ হলো, মেহুল আর ওয়ান্টেড নয়। এটা নিঃসন্দেহে ভারত সরকারের কাছে একটা বড় ধাক্কা। পেশায় হিরে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত এই মেহুল চোকসির বিরুদ্ধে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের সঙ্গে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার জালিয়াতি করার অভিযোগও রয়েছে।
এদিকে সূত্রে খবর, অ্যান্টিগা হাইকোর্টে মেহুল চোকসি পিটিশন দাখিল করেছিলেন। আর তা করা হয়েছে ভারত সরকারের বিরুদ্ধেই। পিটিশনে মেহুলের অভিযোগ, দু’জন ভারতীয় এজেন্ট ২০২১ সালে অ্যান্টিগা থেকে তাকে অপহরণ করার পর জোর করে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ডমিনিকান রিপাবলিকে তুলে নিয়ে যায়। ওই দুই ভারতীয় এজেন্টকে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ অর্থাৎ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিকাল উইং-এর এজেন্ট হিসেবে অভিহিতও করেছে মেহুল। অ্যান্টিগা উচ্চ আদালতে আবেদনের পরই ইন্টারপোল পলাতক মেহুলের বিরুদ্ধে জারি করা রেড কর্নার নোটিস প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে পলাতক হিরে ব্যবসায়ী মেহুল ২০২২-এ গ্লোবাল বডি-র কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে জারি হওয়া রেড কর্নার নোটিস পর্যালোচনা করে দেখার জন্য। এর পিছনে অজুহাত হিসেব তিনি অ্যান্টিগা ও বারবুডা থেকে এই অপহরণের অজুহাত-ই সামনে আনেন। সূত্রে এ খবরও মিলছে, আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলকে মেহুল চোকসির প্রতিনিধি তার পক্ষ বোঝাতে সক্ষম হয়েছে। মেহুলের বক্তব্য, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাকে অপহরণ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। উল্লেখ্য, মেহুল চোকসিকে ইন্টার রেড কর্নার নোটিসে অন্তর্ভুক্ত করেছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশ অ্যান্টিগাতে মেহুল ১,০০,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে সিটিজেনশিপ বাই ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে অ্যান্টিগা এবং বারবুডার নাগরিকত্ব নেয়। আবেদন এ অভিযোগও করা হয়েছে, ২০২১ সালের ২৩ মে তাকে দুই ভারতীয় এজেন্ট অপহরণ করে অ্যান্টিগা থেকে ইয়াচে করে ডমিনিকা নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ডমিনিকান হাইকোর্ট মেহুলকে ৫১ দিনের জামিনে ছাড় দিয়েছিল। এদিকে, ভারত সরকার বারবার ধরে তাকে দেশে ফেরত আনার চেষ্টা চালিয়েছে। কারণ, ভারত সরকারের বক্তব্য, মেহুল এখনও ভারতীয় নাগরিক। কারণ, তিনি তার পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাতিল করেননি। তাই মেহুলকে ভারতে পাঠাতেই হবে, কেন না ভারতে তার বিচার হবে। ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে চোকসির নাম আর না থাকলেও তার ভাইপো নীরব মোদির নাম এখনও ওয়ান্টেড তালিকায় রয়েছে। সে বর্তমানে ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের জেলে বন্দি। পিএনবি জালিয়াতি মামলায় অভিযুক্ত নীরব ব্রিটেনে ১,৫০,০০০ পাউন্ড আইনি মূল্য ফেরত দিতে পারেনি।
এদিকে এই প্রসঙ্গে ইন্টারপোল জানাচ্ছে, মেহুল যে কারণ দেখিয়েছেন, সেই কারণেই ভারত সরকারের কথায় আমল না দিয়ে রেড কর্নার নোটিস থেকে মেহুল চোকসির নাম প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। চোকসির নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার স্বপক্ষে কারণ হিসেবে তথাকথিত অপহরণের কথা উল্লেখও করে ইন্টারপোল। এই প্রসঙ্গে ইন্টারপোলের তরফ থেকে যে অর্ডার জারি করা হয় তাতে বলা হয়েছে, ‘অ্যান্টিগা থেকে ডোমিনিকাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদনকারীর অপহরণের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য ছিল আবেদনকারীকে ভারতে পাঠানো এবং ভারতে ফিরে গেলে, তিনি ন্যায্য বিচার বা সদ্ব্যবহার না পাওয়ার ঝুঁকির মুখোমুখিও হতে পারেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × five =