৪ টাকার জন্য ৪ বছরের আইনি লড়াইয়ে জয় ক্রেতার

চার টাকার জন্য চার বছরের লডা়ই। চার বছর লড়াই শেষে জয়ের হাসি ফুটেছে বেহালার বাসিন্দা সুরজিৎ খাঁড়ার মুখে।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৯-এর নভেম্বরে। পর্ণশ্রীতে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কিছু জিনিস কিনতে সুরজিতবাবু। জিনিসপত্র কেনার পর বিল করার সময় সুরজিতবাবুর নজরে আসে, একটি ক্যারিব্যাগের দাম বাবদ চার টাকা ধরা হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদ করেন তিনি। বিপণনকর্মীকে জানান, ওই সংস্থার লোগো দেওয়া ক্যারিব্যাগ তাঁর লাগবে না। তাই চার টাকা ফেরানো হোক। এদিকে সুরজিতবাবুর কথা মানতে নারাজ স্টোর কর্তৃপক্ষ। এরপরই সুরজিৎ প্রস্তাব রাখেন, প্রয়োজনে কোনও লোগো না-দেওয়া ক্যারিব্যাগ তাঁকে দেওয়া হোক। তাতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। এরপরই বেহালার এই বাসিন্দা ক্রেতাসুরক্ষা কমিশনের দ্বারস্থ হন।
এরপর কমিশনে শুনানি চলাকালীন সুরজিৎ জানান, ক্রেতা না-চাইলে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর তাঁকে ক্যারিব্যাগ কিনতে বাধ্য করতে পারে না। পাশাপাশি কোনও নির্দিষ্ট লোগো সাঁটানো ক্যারিব্যাগও দিতে পারে না তারা। শুনানিতে ওই ডিপার্টমেন্টাল স্টোর জানায়, সুরজিৎ জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও ব্যাগ সঙ্গে আনেননি। তাই তারা প্রথমে সুরজিৎকে বলেছিল, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তারাই ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দেবে। তাতে তিনি নারাজ ছিলেন। যদিও কমিশনের পাল্টা প্রশ্ন, ক্রেতার বাড়িতে জিনিস পৌঁছে দেওয়ার খরচ তো চার টাকার বেশি। সেটা স্টোর কর্তৃপক্ষ কীভাবে ক্রেতাকে প্রতিশ্রুতি দিল, তা স্পষ্ট নয়। কারণ, তারা এই দাবির সপক্ষে কোনও নথি দেখাতে পারেনি।
স্টোরের তরফ থেকে এমনও যুক্তি দেওয়া হয়, যেহেতু সরকার পুনর্ব্যবহারের অযোগ্য প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্ধ করতে চেষ্টা করছে এবং সেই মর্মে নোটিফিকেশনও রয়েছে, তাই ভালো ক্যারিব্যাগের জন্য তারা নির্দিষ্ট দাম ধার্য করেছে। কমিশন পাল্টা প্রশ্ন তোলে, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ যখন নিষিদ্ধ তখন কাগজের ক্যারিব্যাগ দেওয়া হলো না কেন? তাছাড়া প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্ধ হলে কোনও সংস্থা নিজেদের প্রচারের জন্য নিজের লোগো দেওয়া ক্যারিব্যাগ নিতে ক্রেতাকে বাধ্য করতে পারে না। এরপরই ক্যারিব্যাগের দাম বাবদ চার টাকা ক্রেতাকে ফেরাতে বলেছে শশীকলা বসু, অশোকা গুহরায় (বেরা) এবং ধীরাজকুমার দে-র নেতৃত্বাধীন কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনের ইউনিট-৩ বেঞ্চ । পাশাপাশি ৪৫ দিনের মধ্যে পাঁচ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ এবং আইনি লড়াইয়ের খরচ বাবদ আরও দু’হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণ না দিলে বছরে ৮ শতাংশ হারে সুদও গুণতে হবে সংস্থাকে। যদিও অভিযোগকারী এর আগে অনেক বেশি অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দাবি করে রাজ্য ক্রেতাসুরক্ষা ফোরামে যে আবেদন করেছিলেন এবং সেই আবেদন রাজ্য ফোরাম খারিজ করে দেয়। কারণ, বেশ কিছু তথ্য গোপন করেন মামলাকারি। আর তারই জের মামলাকারীকেও সমালোচিত হতে হয় ফোরামে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − eight =