প্রচুর নথি এবং ওএমআর শিট উদ্ধার অয়ন শীলের বাড়ি থেকে, আটক করে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ

শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ প্রমোটার অয়ন শীলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে ইডি-র তরফ থেকে। ইডি সূত্রে খবর, তাঁর সল্টলেকের এফ ডি ব্লকের ৩৮৮ নম্বর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি। বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে অ্য়াডমিট কার্ড-সহ নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক নথিও। উদ্ধার হয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওএমআর শিটও। তল্লাশি মেলা নথির ভিত্তিতে শুরু হয় এই জিজ্ঞাসাবাদের পালা।
ইডি সূত্রে খবর, শনিবার তাঁর সল্টলেকের এফডি ব্লকের ৩৮৮ নম্বর বাড়িতে প্রায় ১৬ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চালান ইডি-র আধিকারিকেরা। তখনই প্রচুর নথি পাওয়া যায়। এর মধ্যে বেশ কিছু ডিজিটাল ডকুমেন্ট রয়েছে যেগুলোয় অ্যাকসেস করতে পারছিলেন না ইডি কর্তারা। এরপর অয়ন শীলকে সামনে বসিয়েই চলছে তল্লাশি। কিছু মোবাইল এবং কম্পিউটারের ডিজিটাল ডকুমেন্টস খতিয়ে দেখেন ইডির গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যেই অয়নের টলিউড যোগের কথাও সামনে এসেছে। সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে ইডি-র তরফ থেকে। এরপর রবিবার সকাল থেকে ফের অভিযান শুরু করে ইডি। তখনই অয়ন শীলের সল্টলেকের অফিস থেকে ৩৫০-৪০০টি ওএমআর শিট উদ্ধার হয়। এই প্রাপ্ত নথির ভিত্তিতে আরও একবার জেরা শুরু হয় অয়নকে।
এর আগে শনিবার হুগলিতে অয়ন শীলের বাড়িতেও ইডি হানা দেয়। এরপর তাঁর একাধিক ফ্ল্যাট, অফিসেও তল্লাশি চালায় তারা। রাতে অয়নকে সল্টলেকে এনে চলে জেরা। এরপর রবিবার সকালে ফের পুলিশ কুকুর নিয়ে অয়নের অফিসে তল্লাশি শুরু করেন ইডি আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, রাতেই অয়নের অফিস থেকে চাকরি প্রার্থীদের নামের তালিকা, অ্য়াডমিট কার্ড-সহ একাধিক ডিজিটাল নথি উদ্ধার হয়েছিল। সেই নথি থেকে প্রাপ্ত তথ্য় নিয়ে জেরা করা হয় অয়নকে। চলে ম্যারাথন জেরাও। যে সমস্ত অ্য়াডমিট কার্ড উদ্ধার হয়েছে, বা প্রার্থী তালিকায় যাদের নাম ছিল, তারা চাকরি পেয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে ইডি। এদিন সকালে সরাসরি ওএমআর শিট উদ্ধার হয়েছে। একজন প্রোমোটারের অফিসে নিয়োগ সংক্রান্ত নথি কীভাবে এল, তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এদিকে এ খবরও মিলছে যে, রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভাগুলিতে চাকরি দেওয়ার বিষয়ে অয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পুরসভায় চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন জেলায় সে নিজে স্কুল খোলে। পুরো বিষয়টি এক ধরনের আইওয়াশ। আদতে বহু পুরসভার চেয়ারম্যান তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং তাঁর স্কুলে যাঁরা ভর্তি হতেন তাঁদের মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পুরসভায় চাকরি দেওয়া হত। আর তাতেই একদিকে অয়ন অন্যদিকে দুর্নীতিগ্রস্ত চেয়ারম্যানরা ফুলেফেঁপে উঠতেন। তাই ইডির আধিকারিকদের স্ক্যানারে রয়েছেন অয়ন। এবার সেই অয়নের অফিস থেকেই মিলল ওএমআর শিট। ফলে তার দুর্নীতি যে শুধুমাত্র পুরসভায় আটকে ছিল না তাও এদিনের ওএমআর শিট মেলার ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে যায়।
এই প্রসঙ্গে ইডি-র বক্তব্য, অয়ন শীলের সঙ্গে দুর্নীতির যোগাযোগ অত্যন্ত স্পষ্ট। তাঁর সল্টলেকের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নথিই তার প্রমাণ। প্রদীপ সিং এবং প্রসন্ন রায় নামে যে দুজন মিডলম্যানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাঁদেরও এই ধরনের ব্যবসা ছিল। তাঁদেরও অফিস ছিল সল্টলেকেই। সেখান থেকে গোটা বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হত।
তবে অয়ন শীলের সঙ্গে এখনও কোনও প্রভাবশালী নেতার যোগাযোগের প্রমাণ মেলেনি। তবে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ স্পষ্ট বলে দাবি ইডি আধিকারিকদের। শান্তনু ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন শীলের সল্টলেকের ভাড়া বাড়িতেও তল্লাশি করা হয়। সিনেমা প্রযোজনার সঙ্গেও জড়িত অয়ন। সেখানে একাধিক কম্পিউটারের অ্যাক্সেস করতে পারছিলেন বা ইডি কর্তারা। অয়নের পাশাপাশি তাঁর বাবা-মাকেও জেরা হয়। কারণ ইডি-র হাতে এরকম একাধিক নথি এসেছে, যাতে তাঁর বাবা সদানন্দ শীলের সই রয়েছে। এখন এই অয়নের হাত কতটা বিস্তৃত, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 5 =