জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে হঠাৎ-ই একেবারে অবস্থান পরিবর্তন রাজ্য সরকারের। কেন্দ্রের নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সরব হতে দেখা গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি ‘তুঘলকি’ বলেও মন্তব্য করেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। আর এবার কেন্দ্রের একেবারে উল্টো পথে হেঁটে জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের পক্ষে পদক্ষেপ করল রাজ্য। শুধু তাই নয়, ইউজিসির নির্দেশিকাও পাঠানো হল রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে। একইসঙ্গে ইউজিসির এই নির্দেশিকা আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই কার্যকর করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
তবে হঠাৎ-ই রাজ্যের এই অবস্থান বদল নিয়ে উঠেছে প্রশ্নও। কারণ, যে শিক্ষানীতি নিয়ে রাজ্য প্রথম থেকে বিরোধিতা করে এসেছে, এমনকি রাজ্যের তরফে জাতীয় শিক্ষানীতির পরিবর্তে নয়া শিক্ষানীতি তৈরির নীল নকসাও করা হয়েছিল, তারপরেও হঠাৎ করে কেন রাজ্য পিছু হটল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জল্পনা শুরু হয়েছে, রাজ্যের শিক্ষানীতির নীল নকসায় কোনও ফাঁক ছিল কিনা তা নিয়েও। একইসঙ্গে এ প্রশ্নও উঠছে, জাতীয় শিক্ষানীতির কিছু অংশ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত রাজ্য নিয়েছে কি না সে ব্যাপারেও। এদিকে আবার হঠাৎ করে নয়া শিক্ষানীতি প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে বাস্তবে সমস্যাও রয়েছে। স্নাতক স্তর ৪ বছরের হলে এবং গবেষণা চালু হবে যেরকম কাঠামো এবং যে সংখ্যক শিক্ষকের প্রয়োজন, তার সমস্ত কলেজে নেই। ফলে নতুন শিক্ষানীতি আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই প্রয়োগ করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এদিকে শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, জাতীয় শিক্ষানীতির একাধিক নিয়ম মানতে হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নির্দেশ দিয়েছ রাজ্য। সেখানে মূলত নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির ক্রেডিট বেসড সিস্টেম প্রয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য শিক্ষা দফতর। যার মধ্যে রয়েছে ৪ বছরের স্নাতক স্তর। এছাড়া পাঠ্যক্রমেও পরিবর্তন আনার কথা বলে উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে চিঠি পাঠানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে।
প্রসঙ্গত, গতবছর তৈরি নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির প্রস্তাবিত খসড়ায় স্নাতক স্তর ৩ বছর থেকে বাড়িয়ে ৪ বছর এবং স্নাতকোত্তর স্তর ২ বছর থেকে কমিয়ে ১ বছর করা হয়েছে। পাশাপাশি ক্রেডিড বেসড সিস্টেম প্রয়োগের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ স্নাতকস্তরেই গবেষণার সুযোগ দিতে হবে। ৪ বছরের স্নাতকস্তরের কোনও পড়ুয়া যদি কোনও বিষয়ে গবেষণা করতে ইচ্ছুক হন, তা হলে তাঁকে সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রোজেক্ট বাছাই করতে হবে। অনার্স ডিগ্রির পাওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট বিষয়টিতে গবেষণা করবেন এবং স্পেশালাইজেশন করবেন সেই পড়ুয়া। অন্যদিকে, চার বছরের স্নাতকরা পিএইচডির জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। এর জন্য অবশ্য সেই পড়ুয়ার ন্যূনতম সিজিপিএ ৭.৫ হতে হবে।