নিয়োগ দুর্নীতির শিকড় খুঁজতে ব্যস্ত দুই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এবং সিবিআই। আর এই শিকড় খুঁজতে গিয়ে তদন্তে উঠে আসছে জেলা তৃণমূল যুব সভাপতি, জেলা কর্মাধ্যক্ষ থেকে খোদ মন্ত্রীও। এদিকে আবার আদালতের নির্দেশে চাকরি খোয়ানোর পালা শুরু হয়েছে স্কুল শিক্ষক থেকে শুরু করে গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি কর্মীদের। এই চাকরি হারাদের মধ্যেও রয়েছেন তৃণমূল বিধায়কের আত্মীয় থেকে দলের ছোটখাটো নেতা। ফলে সব মিলিয়ে যখন প্রবল চাপে শাসকদল ঠিক এমনই এক প্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারিকে এই নিয়োগ দুর্নীতিতেই বিদ্ধ করতে দেখা গেল তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষকে। রবিবার এক সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি দাবি করেন, নিয়োগ দুর্নীতির ফলে চাকরি হারানো সঞ্জীব সুকুল শুভেন্দু অধিকারীর ‘ডান হাত’। এদিন কুণাল এও জানান, এই সঞ্জীব সুকুল কাঁথির ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। শুধু তাই নয়, এদিন কুণাল এও জানান, শুভেন্দু অধিকারী বেআইনিভাবে ১৫০ জনকে চাকরি করে দিয়েছিলেন। আর সেই কারণেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকেও তদন্তের আওতা আনা হোক এমনই দাবি তোলেন তৃণমূল মুখপাত্র।
এদিকে এই দর্নীতির শিকড় খুঁজতে গিয়ে ইডি-সিবিআইয়ের হাতে যে তথ্য এসেছে তাতে স্পষ্ট যে এই দুর্নীতিতে মোটা টাকার লেনদেন হয়েছে। তবে রবিবার একটি নথি সামনে এনে কুণালের দাবি, শুভেন্দুর সুপারিশের যে ১৫০ জনের চাকরি হয়েছিল তার মধ্যে ৫৫ জনের চাকরি চলে গেছে কোর্টের নির্দেশে। অর্থাত্ শুভেন্দুও এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সামিল ছিলেন। কুণাল শুধু মুখেই বলেননি, এদিন ৫৫ জনের একটি তালিকাও দেখান তিনি। এরই রেশ ধরে কুণালের দাবি, ‘সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, শুভেন্দু অধিকারীও এই দুর্নীতিতে জড়িত। তাঁকে তদন্তের আওতায় আনা হোক। এই ১৫০ জন কারা, কীভাবে চাকরি পেয়েছিলেন তা তদন্ত করে দেখুন ইডি-সিবিআই।’ পাশাপাশি ইডি- সিবিআইয়ের কাছে কুণালের প্রশ্ন, ‘কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যদি তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারে তাহলে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে কেন নয়? আমরা লক্ষ্য রাখছি কীভাবে একতরফা ভাবে তৃণমূলকে আক্রমণ করা হচ্ছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে শুভেন্দু অধিকারী ১৫০ জনের চাকরির সুপারিশ করেছিলেন। তাদের মধ্যে আদালতের রায়ে ৫৫ জনের চাকরি চলে গিয়েছে। এখন তিনি সাধু সেজে বলে তৃণমূলের দিকে কাদা ছুড়বেন? কয়েকদিন আগেই শুভেন্দুকে রেগে গিয়ে একজনকে বলতে শোনা গিয়েছে, ওকে জিজ্ঞাসা করুন কার দয়ায় ও চাকরি পেয়েছে। অর্থাৎ ও যে চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে জড়িত তা প্রকাশ্যে আসছে। যে ৫৫ জনের চাকরি বাতিল হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে কাঁথি, পটাশপুর, সুতাহাটা, দেশপ্রাণের মানুষজন।‘ একইসঙ্গে কুণাল ঘোষ এদিন এও জানান, শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগে বহু ভালো কাজ হয়েছে। কয়েকটা ক্ষেত্রে অন্যায় হয়েছে বা ভুল হয়েছে। ভুল হলে সংশোধন হচ্ছে। অন্যায় হলে শাস্তি হচ্ছে। কেউ অন্যায় করলে তার শাস্তি হোক। তৃণমূল কংগ্রেস তাকে বাঁচাতে যাবে না। কিন্তু সব জায়গাতেই তৃণমূল বলে যে রব তোলা হচ্ছে তা ঠিক নয়। সিপিএম জমানায় একটা হোলটাইমারের বাড়িতে সরকারি চাকরি ছিল না এমন কোনও বাড়ি ছিল না। বিজেপি সব জানে। ত্রিপুরাতে বাম জমানায় ১০,৩২৩ জনের চাকরি চলে গেছে।
উল্লেখ্য এসএসসি গ্রুপ সি নিয়োগ বাতিলের তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর দেখা যায় চাকরি বাতিলের তালিকায় নাম রয়েছে প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক দুলাল বরের কন্যা বৈশাখী বরের। শুক্রবার আদালতের নির্দেশে চাকরি বাতিল হয়েছে তাঁর। ৪২৮ নম্বরে নাম বৈশাখির। তিনি ব্যারাকপুরের একটি স্কুলে কর্মরত ছিলেন।