ফের অনুব্রতকে নিজেদের হেপাজতে চায় ইডি

তিন দিনের ইডি হেপাজতের পর শুক্রবার রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টের ৪১১ নম্বর ঘরে হাজির করানো হতে চলেছে অনুব্রত মণ্ডলকে এমনটাই এনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্ট সূত্রে খবর। একইসঙ্গে এও জানা যাচ্ছে আবারও ১১ দিনের জন্য নিজেদের হেপাজতে নেওয়ার আবেদন জানাবে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। কারণ, গরুপাচারে আর্থিক লেনদেন, অনুব্রতর বিনিয়োগের উৎস খুঁজে বের করতে তৎপর তদন্তকারীরা। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ইতিমধ্যেই হাতে এসেছে তাঁদের। তারই ভিত্তিতে চলছে জেরা। এই জেরা আরও দীর্ঘায়িত করে এই ঘটনার সঙ্গে আরও কারা জড়িত তা খুঁজে বের করাই এখন লক্ষ্য় ইডি-র আধিকারিকদের। কারণ, গরু পাচারের বেআইনি টাকা আদতে গেল কোথায়, সেই উৎসটাই এখনও স্পষ্ট নয়। আর তা টেনে বার করতে চান তদন্তকারীরা। গরু পাচারের মূল চক্রী এনামুল হক, দেহরক্ষী সায়গল হোসেন, মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলকে জেরা করে যে তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা, তার ভিত্তিতেই অনুব্রতর জন্য প্রশ্নমালা তৈরি করেছে ইডি। তদন্তকারীরা মনে করছেন, গরু পাচারের টাকা আরও কোনও এক প্রভাবশালীর কাছে গিয়েছে, সেই নামটাই অনুব্রতর মুখ থেকে বার করতে চাইছেন তাঁরা। সে কারণেই এই হেপাজতের আবেদন করা হবে বলে জানা যাচ্ছে। পাশাপাশি এও জানা যাচ্ছে, গরুপাচারের প্রোটেকশনমানি কীভাবে, কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তা খুঁজে বের করতে অনুব্রতকে হেপাজতে নেওয়া প্রয়োজন বলে এদিন আদালতে বিচারকের সামনে আর্জি জানাবে ইডি। সূত্রের খবর, ইডি-র তরফে এদিন আদালতে অনুব্রতর প্রভাবশালী তকমাও প্রসঙ্গও উত্থাপিত করা হতে পারে। এখানে উঠে আসতে পারে শক্তিগড়ের ঘটনাও।

ইডি সূত্রে এও জানা যাচ্ছে, দিল্লি নিয়ে যাওয়ার পর অনুব্রতকে সেভাবে বিশেষ জেরা করতে পারেননি তদন্তকারীরা। এদিকে অনুব্রতকে নিয়ে ফ্যাসাদেও পড়ছেন ইডি আধিকারিকরা। নিজের বয়ানটুকু লেখেননি অনুব্রত। দাবি করেন, তিনি নাকি লিখতে পারেন না। এরপরই তড়িঘড়ি ‘রাইটার’-এর ব্যবস্থা করতে হয় ইডিকে। এদিকে আবার অনুব্রতর দাবি, বাংলা ছাড়া অন্য ভাষা বোঝেন না। সেই কারণে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে দুই বাঙালি ইডি- আধিকারিককেও। এই দু’জন বাঙালি ইডি আধিকারিকের উপস্থিতিতে তাঁকে জেরার সময়ে অনুব্রত যা যা বলেছেন, সে সব রাইটারকে সঙ্গে সঙ্গে নোট নিতে দেখা যায়। পরে তাতে সই করে দেন অনুব্রত। তাঁর বয়ান লেখাতে আরও এক নিরপেক্ষ সাক্ষীর সাহায্যও নেয় ইডি। ইডি এই গোটা প্রক্রিয়াটাই ভিডিয়োগ্রাফি করে রাখা হয়, যাতে আগামী দিনে তাঁকে জোর করে সই করানো হয়েছে বলে দাবি না-করতে পারেন কেষ্ট।

এদিকে বুধবারের পরে বৃহস্পতিবারও দিল্লিতে ইডি-র সদর দপ্তরে বসে মেয়ে সুকন্যার লিখিত বিবৃতি দেখার পরে অনুব্রতর দাবি, তিনি ও সুকন্যা দু’জনেই নির্দোষ। ইডি অফিসারেরা পাল্টা প্রশ্ন করেন, ব্যক্তিগত দেহরক্ষী সেহগল হোসেনকে যে বাড়তি ‘ক্ষমতা’ দিয়েছিলেন অনুব্রত, তার বিনিময়ে কত টাকা তিনি মাসোহারা নিতেন? এক্ষেত্রে অনুব্রতর দাবি, এ ব্যাপারে কিছুই তাঁর মনে পড়ছে না। তবে ইডি সূত্রের দাবি, ওই মাসোহারার পরিমাণ ছিল ১০ কোটি টাকার কাছাকাছি৷ ইডি হেপাজতে অনুব্রতর সঙ্গে দেখা করেন তাঁর আইনজীবী। বাঙালি ইডি আধিকারিকের পর এসেছেন বাঙালি আইনজীবীও। বৃহস্পতিবার সকালে অনুব্রত মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বাঙালি আধিকারিকরা। এরপর সন্ধ্যায় অনুব্রত মণ্ডলের সিনিয়র আইনজীবী মুদিত জৈন অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করেন এক বাঙালি মহিলা আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে। ওই আইনজীবীর নাম সম্পৃক্তা ঘোষাল।

তবে দিল্লিতে অনুব্রতর শারীরিক পরীক্ষার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। জেরার সময়ে একবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন অনুব্রত। তড়িঘড়ি তাঁকে রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে ‘ফিট’ বলে জানিয়ে দেন। এদিন আদালতে অনুব্রতর শারীরিক অবস্থার বিষয়টিও তুলে ধরা হবে বলে জানা গিয়েছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen + 20 =