৪১ দিন পর জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেলেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। শনিবার প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে সোজা রওনা দেন হুগলির ফুরফুরায় নিজের বাড়ির পথে। এদিন প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে নওশাদ জানান, ‘বাংলার মানুষ শাসকদলের নোংরামি ধরে ফেলেছে। সাগরদিঘির ফল বুঝিয়ে দিচ্ছে, মানুষ উত্তর দিতেও শুরু করেছে। মানুষ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তর দিচ্ছে। আগামী দিনে পঞ্চায়েত ভোটে এর থেকে আরও ভাল ফল হবে।’ একইসঙ্গে তিনি এ বার্তাও দেন, ‘লড়াই জারি থাকবে।’ একইসঙ্গে নওশাদ এও মনে করিয়ে দেন, ‘কেউ যদি মনে করে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছি, সেটা ভুল হবে। আমি মানুষের জন্য লড়াইয়ে ছিলাম, আছি, আগামিদিনেও থাকব।’ একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘আমাদের নামে যে অভিযোগগুলো নিয়ে এসেছে একটাও প্রমাণ করতে পারবে না। আমরা মারামারি, হানাহানির পক্ষে নই, বিকল্প রাজনীতির সন্ধানে আমরা এসেছি। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে রাজনীতি করতে এসেছি আমরা।’
যেদিন কংগ্রেস-সিপিএম-আইএসএফ জোটে একমাত্র বিধায়ক হিসাবে নওশাদ জেতেন, সেদিনও বোধহয় এত ভিড়-উচ্ছ্বাস নজরে আসেনি।জেল মুক্তির পরই এদিন নওশাদ জানান, ‘আমাদের অনৈতিকভাবে দীর্ঘদিন জেলে ভরে রাখা হল। আমরা ব্যাঙ্কশাল কোর্টে বারবার জানিয়েছি। কোনও লাভ হয়নি। এরপর হাই কোর্টে যাই। সেখানে কিন্তু রাজ্যকে যা প্রশ্ন করা হয়েছিল, জবাব দিতে পারেনি। ডেটের পর ডেট নিয়েছে। কিন্তু ৩০৭ ধারা বা অন্যান্য যে ধারা দিয়েছে, একটাও কিন্তু প্রমাণ করতে পারেনি।’ একইসঙ্গে নওশাদ এদিন এও জানান, ‘রাজনীতিতে আসার আগে কখনও ভাবেননি, এইভাবে জেলে আটকে রাখা হবে।’ সঙ্গে নওশাদ এও জানান, ‘বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগে আমাকে ফাঁসানো হতে পারে, জেল জরিমানা করতে পারে জানতাম। কিন্তু এভাবে ৪০-৪১ দিন জেলে এই কারণে আটকে রাখবে আমি কল্পনা করিনি।’ তবে এই ঘটনায় শিক্ষা হয়ে গেল বলেও জানান নওশাদ। একইসঙ্গে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক নিয়েও এদিন সুর চড়ান নওশাদ। প্রায় হুঁশিয়ারির সুরে জানান, ‘সংখ্যালঘু ভোট কারও বাবার সম্পত্তি না।কেউ যদি মনে করে সংখ্যালঘু ভোট তাদের নিজস্ব সম্পত্তি তাহলে মূর্খের স্বর্গে বাস করছে। সংখ্যালঘুদের বোকা বানিয়ে রাখা হচ্ছে, তা তারা বুঝতে পারছে। বরং সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুদের মাঝে ভেদাভেদ তৈরি করে দিয়েছে এই সরকার। তারাই এর উত্তর দেবে। শাসক যাদের ভোটব্যাঙ্ক ভাবছে, তারা আর ভোটব্যাঙ্ক নেই।’
এদি্কে গত ৪১ দিনের অভজ্ঞতা সম্পর্কে নওশাদের বক্তব্য, ‘ গত ৪১ দিনে আমি এমন কিছু জ্ঞান সঞ্চয় করলাম, যা আগে কখনওই হয়নি। জেল, পুলিশ, লালবাজারের একাধিক দফতর থেকে শুরু করে বারুইপুর জেল, প্রেসিডেন্সি জেল, বারুইপুর কোর্ট, ব্যাঙ্কশাল কোর্ট, হাইকোর্টে ঘুরে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, বিধানসভার মধ্যে তা আমি মানুষের স্বার্থে তুলে ধরার চেষ্টা করব। বিধানসভার বাইরেও আওয়াজ তুলব।’ এদিকে সাগরদিঘিতে কংগ্রেস প্রার্থীর জয় নিয়ে নওশাদ বলেন, ‘মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ঐক্যবদ্ধ জয় হিসাবেই দেখছি। বাংলার মানুষ কী সংখ্যালঘু, কী সংখ্যাগুরু, সকলেই বুঝতে পারছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যে আমাদের যে সমস্যা, সরকার তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বাংলার মানুষ বুঝতে পারছে। তাই জবাব দিচ্ছে।’