সামনে এল ডায়মণ্ড হারবারের যুবতীর মৃত্যুর ঘটনা, ঘন ঘন ব্ল্যাকমেল করায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা

ডায়মন্ড হারবারে অজ্ঞাত পরিচয় যুবতীর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় নয়া মোড়। তদন্তে নেমে সামনে এল প্রকৃত তথ্য। জলে ডুবে নয়, ওই যুবতীকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর। শুধু তাই নয়, মৃতদেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জালে মূল অপরাধী। পুলিশ সূত্রে খবর, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে প্রেমিক গলায় ফাঁস দিয়ে ওই যুবতীকে হত্যা করেছে। এদিকে সূত্রে খবর, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে পেশায় ল ক্লার্ক প্রেমিককে সমস্ত কথা ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে নিত্য ব্ল্যাকমেল করতেন ওই যুবতী বলে অভিযোগ। সেই আক্রোশেই মহিলাকে শ্বাসরোধ করে খুন করার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে মহিলার দেহ জলাশয়ে ফেলে দেয় ল ঢোলা এলাকার বাসীন্দা পেশায় ল-ক্লার্ক রব্বানি শেখ। মঙ্গলবার সকালে ডায়মন্ড হারবার থানার বারদ্রোণের টাওয়ার সংলগ্ন এলাকার জলাশয় থেকে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত পরিচয় মহিলার দেহ উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে নেমে উঠে এল এমনই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ঘটনায় ডায়মন্ডহারবারের এসডিপিও মিতুন কুমার দে জানান, মঙ্গলবার জলাশয় থেকে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত পরিচয় মহিলার দেহ শনাক্ত হয়। মৃতদেহ উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছিল।যার মধ্যে মহিলার মোবাইল পাওয়া যায়। এরপরেই মোবাইলের সূত্র ধরে তদন্তে নামে পুলিশ। এরপরই এই সূত্রেই জানা যায়, নিহত মহিলার নাম অহল্লা সর্দার। ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ৪ নং ওয়ার্ডে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন অবল্লা। ময়না তদন্তের পর এও জানা যায়, ওই মহিলাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল। খুনের কথা জানতে পেরে শুরু হয় তদন্ত। তখনই ঢোলাহাট থানা এলাকার বাসিন্দা রব্বানি শেখের কথা জানতে পারে পুলিশ। এদিকে স্থানীয় সূত্রে খবর, ডায়মন্ডহারবার আদালতে ল- ক্লার্কের কাজ করেন এই রব্বানি শেখ। থাকেন ডায়মন্ড হারবার পুরসভার রামচন্দ্রপুর এলাকায়।

তদন্তে নেমে এও জানা যায়, গত ৬ বছর আগে থেকে রব্বানির সঙ্গে এই মহিলার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হয়। তখন রব্বানি শেখ অবিবাহিত ছিলেন। সম্প্রতি রব্বানি বিয়ে করায় শুরু হয় অশান্তি। অহল্লা সর্দার তাদের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা বব্বানি শেখের বর্তমান স্ত্রীকে জানিয়ে দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন সময় ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করে।শুরু হয় রব্বানি শেখের থেকে টাকা আদায়ের ঘটনাও।

এমনই এক ঘটনা ঘটে সোমবারেও। অহল্লা সর্দার ডায়মন্ড হারবার আদালত চত্বরে গিয়ে রব্বানি শেখের কাছে ফের টাকা চায়। চাপও তৈরি করে টাকার জন্য। কাজের জায়গায় এমন কাণ্ডে মেজাজ হারিয়ে অহল্লাকে বাইকে বসিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যান রব্বানি। দোস্তিপুর রোড হয়ে উস্থি থেকে ঘুরে দুজনে বারদ্রোণ এলাকায় পৌঁছান রাতে। সেখানেই টাকা নিয়ে বচসা বাঁধে দুজনের মধ্যে। এর পরেই রব্বানি শেখ অহল্লা সর্দারের ওড়না নিয়েই তাঁর গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে অহল্লা সর্দারের দেহ জলাশয়ে ফেলে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পুলিশ খুনের সঙ্গে ল-ক্লার্ক রব্বানি শেখের যোগসূত্র পায়। এরপরেই রামচন্দ্রপুর থেকে রাব্বানি শেখকে গ্রেপ্তার করে ডায়মন্ড হারবার থানার পুলিশ।

ঘটনায় পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে খুনের দায় স্বীকার করে অহল্লা সরদার খুনের মূল অভিযুক্ত রব্বানি শেখ।অন্যদিকে, দেহ শনাক্তকরণের জন্য পরিবারের লোকজনকে খবর দিলে অহল্লা সর্দারের পরিবারের লোকজন ডায়মন্ডহারবার পুলিশ মর্গে গিয়ে দেহ শনাক্ত করেন। বুধবার দেহ ময়না তদন্ত করার পর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − eleven =