নয়ের দশকে জেল হেপাজতে বুধন শবরের মৃত্যুর সাজা ঘোষণা, তৎকালীন ওসির ৮ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন বিচারক

পুরুলিয়া: ১৯৯৮ সালে কেন্দা থানার অকরবাইদ গ্রামের বাসিন্দা পেশায় হস্তশিল্পী বুধন শবরের জেল হেপাজতে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল জেলা। দীর্ঘ ২৫ বছর পর সোমবার পুরুলিয়া জেলা আদালতে হল সেই মামলার শুনানি। তৎকালীন বরাবাজার থানার ওসি অশোক রায়কে ৮ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন বিচারক।
পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (ফাস্ট ট্রাক আদালত) জাহাঙ্গীর কবির। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বিচার পাওয়ায় খুশি মৃতের স্ত্রী শ্যামলী শবর সহ শবর সম্প্রদায়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পুরুলিয়ার কেন্দা থানার অকরবাইদ গ্রামের বাসিন্দা হস্ত শিল্পী বুধন শবর। ওই দিন বিকেলে তিনি তার ভাইজির বিয়ে উপলক্ষে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় বামুনডিহা মোড়ের কাছে বরাবাজার থানার তৎকালীন ওসি অশোক রায় বুধন শবরকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া সবর কল্যাণ সমিতির সম্পাদক জলধর শবর সহ অন্যান্যরা জানান, ১০ তারিখ বুধনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলেও ১২ তারিখ তাঁকে জেলা আদালতে তোলা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে কাগজে কলমে দেখানো হয় যে ১১ তারিখ বিকেলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর আদালতে পুলিশ পাঁচদিনের পুলিশ হেপাজতে নেয়। পুলিশ হেপাজতে থাকাকালীন বুধনকে বেধরকভাবে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ১৯৯৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁকে পুনরায় আদালতে তোলা হয় এবং সেখান থেকে জেল হেপাজতে পাঠানো হয়। জেল হেপাজতে থাকাকালীন ১৭ ফেব্রুয়ারি বুধনের মৃত্যু হয়। ঠিক তার পরেরদিন তাঁর ময়নাতদন্ত হয়। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট ছিল না। এরপরেই আন্দোলন শুরু করে শবর সমাজের লোকজন। তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতির কার্যকরি সভাপতি ছিলেন মহাশ্বেতা দেবী। তিনি বিষয়টি নিয়ে সরব হন এবং দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। অন্যদিকে, বুধন শবরের স্ত্রীও লিখিত আভিযোগে জানান। এর পরেই উচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে পুনরায় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই রিপোর্ট আসতেই আদালতের পক্ষ থেকে ঘটনার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর এক বছরের মাথায় তৎকালীন বরাবাজার থানার পুলিশ তথা মূল অভিযুক্ত অশোক রায় এবং আরেক অভিযুক্ত তৎকালীন থানার এএসআই অজয় সেনকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই এবং জেলা হেপাজতে পাঠানো হয়। সেই ঘটনার দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত চলার পর গত শুক্রবার পুরুলিয়া আদালত অশোক রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে। অন্যদিকে, এএসআই অজয় সেনকে বেকসুর খালাস করা হয়। এই নিয়ে সিবিআই এর আইনজীবী প্রমোদ কুমার ও অভিযোগকারী পক্ষের আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ সিং দেউ বলেন, অশোক রায়কে আইপিসি ৩০৬ ধারা অর্থাৎ আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া এবং ৩৩০ ধারা অর্থাৎ পুলিশ হেপাজতে থাকাকালীন অত্যাচার এই দুটি ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ৩০৬ ধারার জন্য ৮ বছরের কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ের একছরের কারাদণ্ড এবং ৩৩০ ধারায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছ’মাসের কারাদণ্ড। তবে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বিচার পেয়ে খুশি শ্যামলী শবর। তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বিচার পেয়েছি খুবই ভালো লাগছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 2 =