ইস্তফা দিলেন মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি। রবিবার তাঁর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তাঁর বদলে মহারাষ্ট্রের নতুন রাজ্যপাল হিসাবে বেছে নেওয়া হল রমেশ বইসকে। শুধু মহারাষ্ট্র নয়, আরও ১১টি রাজ্যে নতুন রাজ্যপাল নিয়োগ করা হল। এই তালিকায় রয়েছে মহারাষ্ট্র, সিকিম, ঝাড়খণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, অসম, অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, বিহারের রাজ্যপাল। এমনকী কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখের জন্যই নতুন লেফটেন্যান্ট গভর্নরও নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। এদিকে রবিবার সকালেই মোট ১২ রাজ্যের রাজ্যপাল বদলের এই নির্দেশিকায় স্বাক্ষরও করেন রাষ্ট্রপতি। অরুণাচল প্রদেশের রাজ্যপাল বিডি মিশ্রকে বদলি করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর হিসাবে নিয়োগ করা হয়। এদিনের এই তালিকায় নয়া রাজ্যপালদের মধ্যে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এস আব্দুল নাজির। ২০১৯-এ ঐতিহাসিক অযোধ্যা মামলার রায়দানকারী বিচারপতিদের একজন ছিলেন তিনি। অন্ধ্রপ্রদেশের সাংবিধানিক প্রধানের দায়িত্ব পাচ্ছেন তিনি। এছাড়াও বিধানসভা ভোটের মুখে নয়া রাজ্যপাল পেল উত্তর-পূর্বের রাজ্য মেঘালয়ও।
এদিন যে নয়া রাজ্যপালের তালিকা প্রকাশ করা হয় রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে তাতে দেখা যাচ্ছে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল কৈবল্য ত্রিভিক্রাম পরনায়ককে অরুণাচল প্রদেশের রাজ্যপাল হিসাবে নিয়োগ করা হল। পাশাপাশি শ্রী লক্ষ্ণণ প্রসাদ আচার্যকে করা হল সিকিমের রাজ্যপাল। একইসঙ্গে সিপি রাধাকৃষ্ণাণকে নিয়োগ করা হল ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল। হিমাচল প্রদেশের রাজ্যপাল হিসেবে এলেন শিব প্রতাপ শুক্লা। এদিকে লাবচন্দ কাতারিয়াকে করা হল অসমের রাজ্যপাল। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুল নাজিরকে নিয়োগ করা হল অন্ধ্র প্রদেশের রাজ্যপাল। বিশ্বভূষণ হরিচন্দন, যিনি এতদিন অন্ধ্র প্রদেশের রাজ্যপাল ছিলেন তাঁকে করা হল ছত্তিশগড়ের রাজ্যপাল। এদিকে ছত্তিশগড়ের রাজ্যপাল সুশ্রী অনুসুইয়া উইকিয়েকে মণিপুরের রাজ্যপাল হিসাবে নিয়োগ করা হল। মণিপুরের রাজ্যপাল শ্রী লা গণেশন, যিনি কিছুদিন পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত রাজ্যপাল ছিলেন, তাঁকে করা হল নাগাল্যান্ডের রাজ্যপাল। বিহারের রাজ্যপাল ফাগু চৌহানকে করা হল মেঘালয়ের রাজ্যপাল। এদিকে হিমাচল প্রদেশের রাজ্যপাল রাজেন্দ্র বিশ্বনাথ আরলেকারকে বিহারের রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল রমেশ বইসকে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল হিসাবে নিয়োগ করা হল। এদিকে ব্রিগেডিয়ার বিডি মিশ্র, যিনি অরুণাচল প্রদেশের রাজ্যপাল ছিলেন, তাঁকে লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর হিসাবে নিয়োগ করা হল।
১২টি রাজ্যের রাজ্যপাল বদলের মধ্যে সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ হল মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল বদল। সম্প্রতিই তিনি শিবাজি সম্পর্কে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ান। এরপরে তিনি গত মাসেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে রাজ্যপাল পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এরপর রবিবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ভগৎ সিং কোশিয়ারির ইস্তফাপত্রও গ্রহণ করেন। লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর পদ থেকে শ্রী রাধাকৃষ্ণণ মাথুরের ইস্তফাপত্রও গ্রহণ করেন তিনি।
এদিকে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল বদল হতেই সুর চড়ালেন আদিত্য ঠাকরে। নতুন রাজ্যপাল হিসেবে রমেশ বেইসকে রাজ্যপাল ঘোষণা করার পরই উদ্ধব-পুত্র নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘শেষ পর্যন্ত মহারাষ্ট্র বিরোধী রাজ্যপালের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে।‘ এই ঘটনাকে মহারাষ্ট্রের বড় জয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। কারণ, গত বছরের নভেম্বরে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ সম্পর্কে করা একটি মন্তব্যের জেরে বিতর্কের মুখে পড়েন ভগৎ সিং কোশিয়ারি। কোশিয়ারি। একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বিগত দিনের মহান মানুষ ছিলেন ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ। আগে যখন আদর্শ ব্যক্তিদের কথা জিজ্ঞাসা করা হত, তখন সকলে জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু ও মহাত্মা গান্ধির কথা বলতেন। কিন্তু বর্তমানে মহারাষ্ট্র নতুন অনেক আদর্শ মানুষ রয়েছেন। আপনার অন্য কোথাও নজর দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ছত্রপতি শিবাজি কিন্তু বহু পুরনো যুগের এক মহামানব। বর্তমান সময়ে বাবাসাহেব আম্বেডকর বা নীতিন গড়কড়ির কথাও বলা যেতে পারে।‘ তাঁর এই মন্তব্যের পরই রাজ্য জুড়ে ওঠে সমালোচনার ঝড়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, বিতর্কের মুখে চাপ তৈরি হওয়াতেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ভগৎ সিং কোশিয়ারি।