দু’চার জন নেতার জন্য পার্টির বদনাম কোনওভাবে মেনে নেওয়া হবে না: অভিষেক

‘কোনও নেতাকর্মীর ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য দলের নাম খারাপ হয়, তবে আমি তাদের ছেড়ে কথা বলব না। কোনও দাদার ছত্রছায়ার থেকে, বোতল বয়ে পঞ্চায়েতে টিকিট পাওয়া যাবে না। যাঁরা মানুষের সঙ্গে থাকবে তাদেরই দল টিকিট দেবে। মানুষ যাঁদের সার্টিফিকেট দেবে তাঁদের দল টিকিট দেবে।‘ পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মাথাভাঙার জনসভা থেকে এমনই বার্তা দিতে শোনা গেল তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। একইসঙ্গে এদিন অভিষেক এও জানান, ‘আজকে ভোট চাইতে আসিনি।পরপর দুটো নির্বাচনে আমাদের ভুল ত্রুটির কারণে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। ২০১৯ এবং ২০২১-এ মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি আজকে মানুষের উপস্থিতি বুঝিয়ে দিচ্ছে এই সমাবেশ পালা বদলের সমাবেশ।‘ সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘দু’চার জন নেতার জন্য পার্টির বদনাম কোনওভাবে মেনে নেওয়া হবে না। আমাদের কিছু ভুল ত্রুটি হয়েছিল এটা ঠিক। তবে মানুষও বুঝতে পারছেন বিজেপিকে ভোট দিয়ে খাল কেটে কুমির ডেকে আনা হয়েছে।’

পঞ্চায়েতে উত্তরবঙ্গকে পাখির চোখ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। পঞ্চায়েতে উত্তরবঙ্গে ঘাসফুল ফোটাতে মরিয়া তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে দলের সেকেন্ড -ইন- কমান্ড অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়ও। আর সেই লক্ষ্যেই শনিবার এই জনসভা করেন অভিষেক। এদিনের এই সভা থেকে পঞ্চানন বর্মার প্রসঙ্গ টেনে রাজবংশীদের মন ছোঁয়ার চেষ্টাও করেন তিনি। করেছেন অভিষেক। এদিকে উত্তরবঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় পৃথক রাজ্যের দাবি উঠছে। এই প্রসঙ্গে এদিন অভিষেক জানান, ‘উত্তরবঙ্গ নাম নিয়ে আমার আপত্তি রয়েছে। কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার সবটাই এক, তাঁর নাম পশ্চিমবঙ্গ। আমাদের কাছে একটাই বঙ্গ নাম পশ্চিমবঙ্গ। বিজেপি এখানে বাংলা ভাগ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের রাজনীতি করছে। তা কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।‘ পাশাপাশি কোচবিহারে আবাস যোজনার দুর্নীতি নিয়েও এদিন বড় মন্তব্য করতে শোনা যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

কোচবিহারের মাথাভাঙার সভা থেকে দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকের গিতলদহ এলাকার ভাড়বাধা গ্রামের যুবক প্রেম কুমার বর্মণের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজেপিকে বিদ্ধ করেন অভিষেক। একইসঙ্গে আক্রমণ শানান বিএসএফকেও। নিহত যুবকের মা বাবাকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এমনকী গোটা ঘটনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জানানোর বিষয়ে আশ্বাস দেন অভিষেক। এদিনের মঞ্চ থেকে প্রেম কুমারের মৃত্যুর ঘটনায় অভিষেক এও বলেন, ‘পেলেট গান যা দিয়ে কাশ্মীরে আধাসেনা জঙ্গি মারে তা দিয়েই প্রেম কুমারকে খুন করা হয়েছে। পরিবার ইতিমধ্যেই এফআইআর করেছে। এর শেষ দেখে ছাড়ব। প্রয়োজনে হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে যাব। ময়দাতদন্তের রিপোর্ট বদলে ওর দেহে ১৮০টা গুলির আঘাত পাওয়া গিয়েছে। একবিন্দু রক্ত ছিল না ওর দেহে। রক্তক্ষয়ের জন্য মারা যায় এই যুবক। পাশাপাশি এদিন প্রেম কুমারের মা সুখিমনি বর্মন এবং বাবা শিবেন বর্মনকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানান অভিষেক। এরপরই মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করব যত বড় মানুষই যুক্ত থাকুক এই ঘটনার যেন পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হয়। আমার কোচবিহারের মানুষের সাহায্য চায়। জানেন তো কার বিরুদ্ধে লড়াই করছি।’ একইসঙ্গে এ প্রশ্নও তোলেন, ‘বিএসএফআওতাধীন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে? অমিত শাহ। আজ থেকে এই লড়াই শুরু করলাম।’

এরই পাশাপাশি নিশীথ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও কেন মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেননি সেই নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। এরই রেশ ধরে এদিন অভিষেক এও জানান,  ‘এই ঘটনার পিছনে যত বড় নামই যুক্ত থাকুক, আমি কলকাতা ফিরে যা করার করব। কিন্তু, আপানাদের সহযোগিতা ছাড়া আমি এই লড়াই লড়তে পারব না। ২০১৯ সালে আপনারা বিজেপিকে ভোট দিয়ে সংসদে পাঠিয়েছিলেন বলে আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত। এবার এর জবাব দিতে হবে। শুধু জবাব না, এমনভাবে জবাব দিতে হবে বাড়ি ছেড়ে যেন বেরতে না পারে। বাড়ি ঘেরাও করে রাখতে হবে। দরকার হলে আমাকে ডাকবেন আমি আসব।’ তবে সবকিছুর মাঝেও এদিনের এই সভা থেকে কোচবিহারের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের এই বাড়বাড়ন্তের জন্য এদিন কার্যত নিজের ভুলও স্বীকার করতে দেখা যায় অভিষেককে। এরই রেশ ধরে এদিন তিনি বলেন, ‘কোচবিহারের সাংসদ, এখন সে স্বরাষ্ট্র দফতরের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। আমার ভুল কী জানেন, ২০১৮ সালে আমি শুনতে পাই যে আমার নাম ভাঙিয়ে পঞ্চায়েতে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, আমার ভুল হয়েছে আমি স্বীকার করছি। যখন আমি জানতে পারি, তখনই তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিলাম। যাঁদের আমরা বহিষ্কার করি, অন্যরা তাদের মাথায় উঠিয়ে রাখে।’ প্রসঙ্গত, তৃণমূলে থাকাকালীন অভিষেক ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন নিশীথ। নাম না করে নিশীথকে নিয়ে এদিন তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের নির্বাচনে এই জেলার ৭টি আসনে বিজেপি জিতেছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহারে বিজেপি জিতেছিল। কিন্তু, গত চার বছরে কোচবিহারের নির্বাচিত সাংসদ এখানকারা দাবিদাওয়া নিয়ে সংসদে সরব হয়নি।’ একধাপ এগিয়ে নিশীথকে ‘কোচবিহারের লজ্জা’ বলে আক্রমণ করেন তিনি। এদিনের সভা থেকে অভিষেক এও জানান, কোচবিহারের সমস্ত দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। ১১ মার্চ তিনি ফের আলিপুরদুয়ারে সভা করবেন বলেও এদিনের এই সভা থেকেই কোচবিহারবাসী সহ উত্তরবঙ্গের মানুষকে জানিয়ে দেন তিনি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 9 =