আদানি বিতর্কের আঁচ এবার এসে লাগল কলকাতা হাই কোর্টেও। কারণ, বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ফরাক্কায় জমি দখল করে রেখেছে আদানি গোষ্ঠী। এদিকে এখনও সেখানে কোনও প্রকল্পই গড়ে ওঠেনি। ফাঁকাই পড়ে রয়েছে ফরাক্কার সেই জমি। যার জেরে সমস্যায় স্থানীয় বহু মানুষ। আর এই অভিযোগ সামনে এনে সম্প্রতি মামলা দায়ের হয় আদালতে। এরপর মামলাকারীদের তরফ থেকে দ্রুত মামলার শুনানিরও আবেদন করা হয়েছিল। তারই শুনানিতে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, ‘কত বছর ধরে এই প্রকল্প চলছে? এত বছর কেন আবেদন করেননি? সাতদিনে নতুন করে এমন কিছু সমস্যা বাড়বে না।’ একইসঙ্গে বাংলাদেশেও বিদ্যুৎ পৌঁছতে আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ফারাক্কায় বেআইনি জমি দখলের বিরুদ্ধে দায়ের মামলায় সব পক্ষকে যুক্ত করার নির্দেশও এদিন দেয় প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি ফের এই মামলার শুনানি।
প্রসঙ্গত, ঝাড়খণ্ড থেকে বিদ্যুৎ হাইটেনশন লাইনের মাধ্যমে ফরাক্কা হয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে আদানি গ্রুপ। অভিযোগ, অধিগ্রহণের বিধি না মেনে গায়ের জোরে বেআইনি ভাবে জমির উপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন নিয়ে যেতে খুঁটি পোতা হয়। এরপর জমির ওপর দিয়ে হাইটেনশন তার নিয়ে যাওয়া নিয়ে। চাষিদের বক্তব্য, ফসলের জমির ওপর দিয়ে হাইটেনশন তার নিয়ে যাওয়ার কারণে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। যে জায়গা থেকে তার টানা হয়েছে, সেখানে প্রচুর পরিমাণ আম, লিচু গাছ রয়েছে। ফলের চাষ করা হয়। তাতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে চাষিদের। তার প্রতিবাদে ৩৫ জন চাষি এবং এপিডিআর এর তরফ থেকে এক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। যে ক্যাগ রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে কেন্দ্রের অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগে মামলা হয়েছে, সেই ক্যগ রিপোর্ট বিবেচনার জন্য বর্তমানে বিধানসভায় রয়েছে। গত বছর ১৭ মার্চ ওই রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ হয়েছে বলে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে জানালেন অ্যাডভোকেট জেনারেল। তাই এখন এই নিয়ে মামলা শুনলে তার সঠিক বিচার হবে না বলে দাবি অ্যাডভোকেট জেনারেলের। । তাঁর আরএ দাবি, যাবতীয় প্রকল্পের টাকা খরচের উটলাইজেশন সার্টিফিকেট তাঁদের কাছে আছে। নির্দিষ্ট সময়ে তা পেশ করা হবে। তবে তার আগে রাজ্যকে এদিনের বক্তব্য লিখিতভাবে জানাতে হবে আদালতে।
প্রসঙ্গত, আদানি গ্রুপ সম্পর্কে মার্কিন ফিন্যান্সিয়াল রিসার্চ ফার্ম হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের জেরে জোর বিতর্ক দেশজুড়ে। আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামনে এসেছে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। মার্কিন সংস্থার ওই রিপোর্টেরই পরই ব্যাপক ক্ষতির মুখে গৌতম আদানির সংস্থা। শুধু তাই নয়, আদানি গ্রুপের এই বিতর্কের আংশিক প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতেও এবং রাজনীতিতেও। ধস নেমেছে দালাল স্ট্রিটে। এই বিতর্কের জেরে তাজপুর বন্দর নিয়ে রাজ্য সরকারের কপালেও পড়েছে ভাঁজ। এদিকে বিরোধী শিবির থেকে প্রশ্ন তুলেই দেওয়া হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রজেক্ট তাজপুর বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে।