দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই চালাচ্ছে মোদি সরকার: রাষ্ট্রপতি

গত ন’বছর ধরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই চালিয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। যার ফলশ্রুতিতে দুর্নীতির থেকে মুক্তি পেয়েছে দেশ। মঙ্গলবার প্রথমবার সংসদের যৌথ অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণে এমনটাই মন্তব্য করতে শোনা  গেল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে। এদিন রাষ্ট্রপতির এই ভাষণের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় বাজেট অধিবেশন। এদিকে বুধবার বাজেট পেশ করবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় মোদি সরকারের এটাই শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। তার আগে প্রথা মেনে সংসদের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি। এদিন সংসদে রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তব্য রাখতে গিয়ে জানান, ‘বর্তমানে ভারতকে নিয়ে গোটা বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। আগে ভারতকে অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল থাকতে হত। এখন বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা মিটিয়ে দিচ্ছে ভারত।‘ একইসঙ্গে কেন্দ্রের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ে তোলার যে প্রচেষ্টা চলছে তার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এরই রেশ ধরে এদিন রাষ্ট্রপতি এও জানান, ‘এমন এক ভারত গড়ে তুলতে হবে যেখানে দারিদ্রতা থাকবে না। সেই লক্ষ্য কাজ করে চলেছে সরকার। গরিবদের উন্নতিতে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। ব্যাপকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে প্রযুক্তিকে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া দারুনভাবে সাফল্য পেয়েছে।’

এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতের অভূতপূর্ব উন্নতির কথা উল্লেখ করেন তিনি। বাজেট অধিবেশনের ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘অর্থনীতির নিরিখে বিশ্বের পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে ভারত। আগামী ২৫ বছরে আরও এগিয়ে যাবে দেশ।‘ এদিন রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বর্তমান সরকার নারী ক্ষমতায়নে নজর দিচ্ছে এবং দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। আর এই প্রসঙ্গেই রাষ্ট্রপতি এও জানান, ‘সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে মেয়েদের উন্নতিতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে সরকার। এই প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি এও জানান, ‘আজ আমরা ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’র সাফল্য দেখতে পাচ্ছি। দেশে প্রথমবারের মতো পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি এবং নারীদের স্বাস্থ্যেরও আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। প্রগতির পাশাপাশি প্রকৃতি রক্ষায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা হয়েছে। দেশের জনগণ একটি শক্তিশালী সরকার উপহার দিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করা সম্ভব হয়েছে।’ পাশাপাশি এও জানান, ‘আমার সরকারের নতুন উদ্যোগের ফলে আমাদের প্রতিরক্ষা রফতানি ছয়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি গর্বিত যে আজ আইএনএস বিক্রান্ত, প্রথম দেশীয় বিমানবাহী রণতরীও আমাদের নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছে।‘ একইসঙ্গে মনে করিয়ে দেন, ‘একদিকে যেমন অযোধ্যা ধাম গড়ে তোলা হচ্ছে, অন্যদিকে তৈরি হচ্ছে আধুনিক সংসদ। কেদারনাথ ধামের পুনর্নির্মাণ, কাশী বিশ্বনাথ ধাম করিডোর ও মহাকাল প্রকল্পের উন্নয়ন সম্পন্ন হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিটি জেলায় মেডিকেল কলেজ তৈরি করা হচ্ছে। আমার সরকার ক্রমাগত উদ্ভাবন এবং উদ্যোগের উপর অভূতপূর্ব জোর দিয়েছে। আজ আমাদের যুবসমাজ তাদের উদ্ভাবনের শক্তি বিশ্বকে দেখাচ্ছে।’

এর পাশাপাশি এও জানান, ‘কোভিড-১৯ এর সময়ে বিশ্বজুড়ে দরিদ্রদের জীবনযাপন কতটা কঠিন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ভারত সেই সব দেশগুলির মধ্যে অন্যতম যারা দরিদ্রদের জীবন রক্ষাকে সর্বাধিকার দিয়েছে এবং দেশের কোনও দরিদ্র যেন খালি পেটে না ঘুমায় তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে।‘ আর এরই রেশ ধরে তিনি এও জানান, ‘আমি আনন্দিত যে আমার সরকার নতুন পরিস্থিতি অনুসারে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি একটি সংবেদনশীল এবং দরিদ্রপন্থী সরকারের পরিচয় এই প্রকল্পটি সারা বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে।‘

এদিন সংসদের যৌথ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এও বলেন, ‘এমন একটি ভারত হওয়া উচিত যেখানে দারিদ্র্য থাকবে না, যেখানে মধ্যবিত্ত শ্রেণিও সমৃদ্ধ হবে। এমন একটি ভারত যেখানে সমাজ ও দেশকে পথ দেখানোর জন্য যুব ও মহিলারা সামনে দাঁড়াবে। এমন একটি ভারত যেখানে যুবসমাজ সময়ের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়ে থাকবে।’

প্রসঙ্গত, বাজেট অধিবেশন শুরুর মুখে শিল্প সংস্থা আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। চলতি অধিবেশনে এই নিয়ে সংসদ উত্তাল হতে পারে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তবে এদিন অধিবেশন শুরুর দিনে রাষ্ট্রপতির ভাষণে শোনা গেল ‘দুর্নীতি মুক্ত’ ভারতের কথা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − 7 =