ত্রিপুরা নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা বিজেপির, নাম নেই বিপ্লব দেবের

তুমুল টালবাহানা ও প্রার্থী নিয়ে বিস্তর আলোচনার পর অবশেষে ত্রিপুরা বিধানসভা প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করল বিজেপি। তবে লক্ষণীয় ঘটনা যেটা তা হল এই তালিকায় নেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের নাম। সূত্রে খবর, তিনি এবারের বিধানসবা নির্বাচনে টিকিট পেতে মরিয়া।কারণ, ত্রিপুরায় টানা আড়াই দশকের বাম জমানার পরিবর্তনের পর বিপ্লব দেব ছিলেন এ রাজ্যের প্রথম অ-কংগ্রেসি, অ-বামপন্থী মুখ্যমন্ত্রী।তবে সরকারের মেয়াদ শেষ হবার আগেই তীব্র বিতর্কে জড়িয়ে থাকা বিপ্লব দেবকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় স্যাফ্রন ব্রিগেডের তরফ থেকে। ফলে এখন তিনি শুধু মাত্রই রাজ্যসভার সাংসদ। এদিন যে ৬০ টি আসনের মধ্যে ৪৮ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয় তাঁদের মধ্যে ১১ জনই মহিলা প্রার্থী। বাকি ১২ জন প্রার্থীর নাম খুব শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে বলে জানা যাচ্ছে।

বিজেপির প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার পর যা নজরে আসছে তাতে অন্যান্য হেভিওয়েটরা প্রায় সবাই-ই রয়েছেন এই তালিকায়। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা লড়াই করছেন টাউন বড়দোয়ালি থেকে। প্রসঙ্গত, তিনি উপনির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকেই জয়ী হন। তালিকায় রয়েছেন বিতর্কিত মন্তব্য করা শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ। রয়েছেন রাজনৈতিক সংঘর্ষে অভিযুক্ত রাজ্যের সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, উপমু়খ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মণ।তবে কেন বিজেপির তরফ থেকে বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়নি তা নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। মনে করা হচ্ছে জোটের পথ খোলা বা প্রার্থী জটিলতার কারণে এই ১২টি আসনে প্রার্থী তৈরি হয়নি। রাজ্যে জোট নিয়ে একটা সমস্যা থেকেই গেছে তা অগ্রাহ্য করারও উপায় নেই। কারণ, ত্রিপুরার উপজাতি দল টিপ্রা মথার সাথে আলোচনা হয় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের। তবে গ্রেটার টিপ্রাল্যান্ডের ইস্যুতে রাজা প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মা অনড় থাকায় এই জোট হয়নি।

তবে প্রাক্তন মু়খ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব টিকিট না পেলেও নির্বাচনী লডা়ইয়ে অংশ নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক।তাঁকে শুক্রবার থেকে দিল্লিতে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে দেখাও গিয়েছিল। প্রসহ্গত, এই প্রতিমা ভৌমিক কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে এসে প্রতিমা ভৌমিক গত বিধানসভা ভোটে পরাজিত হন।এরপর রাজ্যে বিজেপি সরকার তৈরি হলে তিনি লোকসভা ভোটের টিকিট পান ও জয়ী হন।এরপর সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীও করা হয় তাঁকে। তিনি।ফলে তাঁকে কেন বিধানসভা ভোটে বিজেপি ফের প্রার্থী করল তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক জল্পনা। সূত্রে খবর, গতবারের মত এবারও ধনপুর কেন্দ্র থেকে লড়াই করবেন। গত নির্বাচনে রাজ্যে বাম জমানার পতনের মাঝেও ধনপুর থেকে জয়ী হন সিপিআইএম-এর মানিক সরকার।তবে চার বারের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এবার আর ধনপুর থেকে ভোটে লড়াই করছেন না। এর পাশপাশি রাজনৈতিক মহলে নজরে ত্রিপুরার কৈলাসহর আসনটি।কারণ, এই কেন্দ্রের সিপিআইএম বিধায়ক মবস্বর আলি যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। এদিন যে প্রার্থী তালিকা ঘোষিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে তিনি এবার বিজেপির প্রার্থী। এদিকে আবার মাত্র কয়েকদিন আগেও তিনি নিজের দফতরে বসে শাসক বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করতেও দেখা যায় তাঁকে। তবে তখনও বামফ্রন্ট প্রার্থী ঘোষণা করেনি। এরপর বাম প্রার্থী তালিকা ঘোষিত হলে দেখা যায় কৈলাসহর থেকে দলীয় টিকিট পাননি মবস্বর আলি। এরপরই শুক্রবার দিল্লিতে গিয়ে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন।ত্রিপুরায় গত বিধানসভা নির্বাচনে টানা ২৫ বছরের বাম জমানার পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসে BJP জোট। গত নির্বাচনে কৈলাসহর থেকে সিপিআইএম-এর মবস্বর আলি জয়ী হয়েছিলেন।

এদিকে কংগ্রেসও ১৭ টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। নিজের গড় আগরতলা কেন্দ্র থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কংগ্রেসের সুদীপ রায় বর্মন। এদিক ত্রিপুরা নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র যাচাই করা হবে তার পরের দিন। আর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ২ ফেব্রুয়ারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten + twenty =