পুরুলিয়া: পুরুলিয়া গ্রাম বাংলার প্রবাদ আছে ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। কিন্তু সেই প্রবাদ এখন অতীত। কারণ ঢেঁকি আর যেমন স্বর্গেও যায়না সেরকম এই মর্ত্যের থেকেও প্রায় বিদায় হয়েছে। কিন্তু জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ অংশে মকর সংক্রান্তি এলেই মনে পড়ে যায় ঢেঁকির কথা। মকর সংক্রান্তির দু’দিন আগে থেকেই ঢেঁকির চাল কুটার সেই আওয়াজ মনে করিয়ে দেয় অতীতের সেই পুরনো স্মৃতিকে। ঢেঁকি দিয়ে চাল গুঁড়ি তৈরি তার থেকে হবে মকর সংক্রান্তির পিঠে। আর পৌষ মাসের শেষদিন বা মকর সংক্রান্তি এলেই মনে হয় এখনো বেঁচে আছে বাংলা। একটা সময় ধান থেকে চাল, চাল থেকে চাল গুঁড়ো তৈরি সবেতেই ঢেকি ছাড়া চলত না। একটি বিশেষ কাঠ তৈরি হত ঢেঁকি। বাড়ির একটি বিশেষ জায়গায় রাখা হত ঢেঁকি। ওই জায়গাটির নামও হত ঢেঁকি শাল। যুগ যতই ডিজিটাল হোক মকর সংক্রান্তি এলেই প্রান্তিক পুরুলিয়ার গ্রামাঞ্চলে আজও ঢেঁকির সেই ঢুক ঢুক শধ আর টুসু গান। দুর্গা পুজোর পর রাঢ় বাংলা পুরুলিয়ার বড় উৎসব মকর সংক্রান্তি এবং টুসু পরব। মকরসংক্রান্তি উপলক্ষে আজও যেমন শহর পুরুলিয়া থেকে বান্দোয়ান বলরামপুর ঝালদা কোটশিলার বিস্তৃর্ণ অংশে ভেসে আসে টুসুর গান।সাথে ভেসে আসে ঢেঁকি দিয়ে চাল গুঁড়ো তৈরি করার আওয়াজও। শহরাঞ্চলে আধুনিকের ছৌওয়া লাগলেও অধিকাংশ গ্রামের চিত্রটা এখনোও রয়েছে একই রকম। গ্রামের আল্পনা মাহাতো সারদা মাহাতরা জানান, ঢেঁকি হচ্ছে নারায়ণের বাহন। তাই আমরা ঢেঁকিতে চাল কুটে পিঠা বানাই। এটাই শুদ্ধচার মানা হয় তাই এই নিয়মের আজও কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এদিকে মকর সংক্রান্তি পুরুলিয়ার এতই বড় আঞ্চলিক উৎসব যে শহর থেকে মফঃস্বল এবং প্রত্যন্ত গ্রাম শুনশান হয়ে যায়। বাস চলাচল প্রায় বন্ধ থাকে। বাজারও থাকে বন্ধ। মকর সংক্রান্তির দিন তাই অঘোষিত বনধের রূপ নেয় রাজ্যের প্রান্তিক জেলা পুরুলিয়া।