দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমনটাই জানালেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। ২০২৪-র লোকসভা ভোটের প্রায় বছর খানেক আগেই শনিবার নোবেলজয়ীর এমন তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য নিঃসন্দেহে ভারতীয় রাজনীতিতে যে প্রভাব ফেলবে তা বলাই বাহুল্য। মমতার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ব্যাপারে অমর্ত্য সেন এও জানান, ‘এমন নয় যে তাঁর ক্ষমতা নেই, অবশ্যই তাঁর সেই ক্ষমতা রয়েছে। তবে একইসঙ্গে এটাও প্রমাণ হওয়া বাকি, বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষের হতাশাকে তিনি নিজের দিকে টানতে পারেন কি না।‘ তবে এদিন তিনি ২০২৪-এর লোকসবা নির্বাচন নিয়ে এও জানান, এই নির্বাচন কখনই একমুখী বা বিজেপি কেন্দ্রিক হবে না বলেই ধারনা তাঁর। বরং ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে একটা বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে দেখা যাবে আঞ্চলিক দলগুলিকে এমনটাই ধারনা অমর্ত্য সেনের। এই প্রসঙ্গে তিনি শনিবার তৃণমূল ছাড়াও সমাজবাদী পার্টি ও ডিএমকে-র কথাও সামনে আনেন। এই প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন এও বলেন, ‘এনসিপি, জেডিইউ সহ বেশ কিছু আঞ্চলিক দল কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লোকসভা নির্বাচনে লড়ার পথে এগোচ্ছে। তারা দাবি করছে, ভোট যদি দ্বিমুখী হয়, তাহলে বিজেপিকে হারানো কঠিন হবে না।’ সঙ্গে অমর্ত্য সেন এও জানান, ‘বিজেপিকে যথেষ্ট শক্তিশালী দেখালেও, তাদেরও কিছু কিছু দুর্বলতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে যদি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি যদি প্রকৃত অর্থে চেষ্টা করে, তাহলে লড়াইয়ের ময়দান তারাও পাবে।‘ তবে কংগ্রেস নিয়ে বেশ হাতাওসার সুর এদিন ধরা পড়ে নোবেলজয়ীর গলায়। কংগ্রেস সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, ‘দেখে মনে হচ্ছে কংগ্রেস অনেকটা দুর্বল হয়ে গিয়েছে। আমি জানি না কেউ কংগ্রেসের উপর কতটা ভরসা রাখতে পারে। তবে এও ঠিক, কংগ্রেসের একটি সর্বভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, যা অন্য কোনও দল দখল করে নিতে পারে না। কিন্তু কংগ্রেসের মধ্যে অনেক ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছে।‘
এরই পাশাপাশি এদিন তুলে ধরেন সিএএ ইস্যুও। এই প্রসঙ্গে এসে পড়ে মহাত্মা গান্ধির কথাও। সিএএ লাগু হওয়া নিয়ে তিনি এদিন জানান, ‘জাতীয় সংহতি রক্ষায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলার কথা বলেছিলেন গান্ধীজি। কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সিএএ লাগু করতে যাচ্ছে। এই আইন দেশে লাগু হয়ে গেলে সংখ্যালঘুরা গুরুত্ব হারাবেন বলেও এদিন জানান তিনি। ফলে প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে বেশি গুরুত্ব পাবেন হিন্দুরা। কারণ হিন্দুরাই এদেশে সংখ্যাগুরু গোষ্ঠী। আর তারই জেরে সংখ্যালঘুরা নানা সমস্যার মুখে পড়তে পারেন বলেও দাবি করেন তিনি। এই প্রসঙ্গে এদিন অমর্ত্য সেন এও জানান, ‘আমি মনে করি না কোনও রকমের কোনও উন্নতি হয়েছে। প্রত্যক্ষ নাগরিকের কিছু মৌলিক অধিকার থাকা উচিত। সেই অধিকারে কোনও সরকারই হাত দিতে পারে না। মহাত্মা গান্ধিও সেই কথাই বলে গিয়েছিলেন। তিনি কখনই এক সংগঠনকে অপর সংগঠনের থেকে আলাদা চোখে দেখেননি।’ এর পাশাপাশি তাঁর সংযোজন, ‘এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক যে ভারতের মতো বৈচিত্রপূর্ণ ও ধর্মনিরপেক্ষ দেশে এমন আইন বলবৎ হতে যাচ্ছে। এতে সমাজে ভেদাভেদ আরও বাড়বে।সংখ্যালঘুদের আগে থেকেই পৃথক করে দেওয়া হচ্ছে।’ এখানে একটা কথা বলতেই হয়, কয়েকদিন আগে প্রতীচী ট্রাস্টের অনুষ্ঠানে গিয়ে নাম না করে নরেন্দ্র মোদিক আক্রমণ শানাতে দেখা গিয়েছিল এই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯-র ১১ ডিসেম্বর সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ পার্লামেন্টে পাস করে নরেন্দ্র মোদি সরকার। এই আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করে কেন্দ্র।তবে তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এই আইনের রূপরেখা এখনও তৈরি করে উঠতে পারেনি সরকার। খুব দ্রুত এই আইনের রূপরেখা তৈরি করে তা লাগু করা হবে এমনটাই ইঙ্গিত দেওযা হচ্ছে কেন্দ্রের তরফ থেকে। এদিকে এই আইন পাস হওয়ার পরই দেশের একাধিক জায়গায় আন্দোলন দানা বেঁধেছিল। দীর্ঘদিন ধরে দিল্লির শাহিনবাগে চলে বিক্ষোভ। এবার এই নিয়ে আপত্তির কথা শোনা গেল নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের গলাতেও।