আদ্যাপীঠের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা

ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, কার্যত নিধিরাম সর্দার। নেই কোনও বিশেষ প্রশিক্ষণও। অপরাশনে যাওয়ার প্রশিক্ষণ তো দূর-অস্ত। অথচ পুলিশের সঙ্গে অপারশনে যাওয়ার মতো দায়িত্বও নিতে  হচ্ছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের। এমনই ঘটনা সামনে চলে এল শুক্রবারে দক্ষিণেশ্বরের এক গেস্ট হাউজ থেকে পুলিশের ডাকাত ধরতে যাওয়ার ঘটনায়। শুক্রবার দক্ষিণেশ্বরের কাছে আদ্যাপীঠে ডাকাত ধরতে গিয়ে সিভিক ভলান্টিয়ার মহম্মদ রেজাউল গুলিবিদ্ধ হন। আর এরপই প্রশ্নের মুখে রাজ্য পুলিশ। প্রশ্ন উঠেছে, আগ্নেয়াস্ত্রের প্রশিক্ষণ না থাকা সত্ত্বেও কেন সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে যাওয়া  হচ্ছে বিভিন্ন অভিযানে তা নিয়ে। একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, এই ধরনের পুলিশি অপারেশনে  তাঁদের মৃত্যু হলে তার দায় কে নেবেন তা নিয়েও। প্রাক্তন পুলিশ কর্তাদের একাংশের দাবি, এক্ষেত্রে বাহিনীর নীতি বদলের প্রয়োজন রয়েছে। সিভিক ভলান্টিয়ারদের আরও বেশি প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রয়োজন, বিশেষত আগ্নেয়াস্ত্র প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করেছেন তাঁরা। আর এই ধরনের বিপদ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফেও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে জানাচ্ছেন রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশ কর্তাদের একাংশ।

শুক্রবার একটি ডাকাতির ঘটনার তদন্তে দক্ষিণেশ্বরের কাছে আদ্যাপীঠের একটি গেস্ট হাউসে অভিযানে যায় রহড়া থানার পুলিশের একটি টিম। সেই দলে ছিলেন সিভিক ভলান্টিয়ার মহম্মদ রেজাউল। গেস্ট হাউসের যে ঘরে ডাকাতরা লুকিয়ে ছিল, সেই ঘরে ঢুকে পড়ে পুলিশের দল। তখনই সেভেন এমএম পিস্তল থেকে গুলি চালায় এক দুষ্কৃতী। তাতে গুলিবিদ্ধ হন মহম্মদ রেজাউল। তবে রহড়া থানার এএসআই তারক কোটালের তৎপরতায় গ্রেপ্তার হয় তিন ডাকাত। উদ্ধার হয় আগ্নেয়াস্ত্র ও কয়েক রাউন্ড গুলি। এই ঘটনার খবর সামনে আসতেই রাজ্য জুড়ে তোলপাড় পড়ে যায়। সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।

তথ্য যা বলছে তাতে দক্ষিণশ্বরের আদ্যাপীঠের এই ঘটনা প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন অভিযানে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হতে দেখা গেছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের। কয়েক বছর আগে, বাসন্তীতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের মৃত্যুও হয়।

তবে শুক্রবারের আদ্যাপীঠের এই ঘটনায় ব্যারাকপুর কমিশনারেটের আধিকারিদের একাংশ এও জানান, ‘সিভিক ভলান্টিয়ারদের কোনও অপারেশনে নিয়ে যাওয়া যাবে না এমন নিয়ম নেই। তাই তাঁদের এই ধরনের অভিযানে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এটা ঠিক যে তাঁদের কোনও আগ্নেয়াস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেই। ফলে বিপদ ঘটনার সম্ভাবনা থেকেই যায়।’ পাশাপাশি তাঁরা এও স্বীকার করে নেন, এই ধরনের অভিযানের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই যে সিভিক ভলান্টিয়ারদের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট দেওয়া হয় না। আর এমনটা ঘটছে, পর্যাপ্ত বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট না থাকার জেরেই।

পাশাপাশি ব্যারাকপুর কমিশনারেট সূত্রে খবর, শুক্রবারের আদ্যাপীঠের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ সিভিক ভলান্টিয়ারের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল। বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − 2 =