গোটা রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচির সূচনা। ইতিমধ্যেই দলের নির্দেশে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছেন ‘দিদির দূত’-রা। এই কর্মসূচি শুরু হতেই গোটা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় শাসকদলের নেতামন্ত্রীদের কাছে অভাব অভিযোগ উগরেও দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দলীয় কর্মীরাও। তবে এরই মাঝে উত্তর ২৪ পরগণার দত্তপুকুরে মন্ত্রীর সামনে অভিযোগকারীর আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটতে দেখা গেল শনিবার সকালে। সূত্রে খবর, দত্তপুকুরে ইছাপুরে নীলগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতে ‘দিদির দূত’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। আর তখনই মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়ে অভিযোগকারী গ্রামবাসীকে সপাটে চড় খেতে হয় এত তৃণমূলকর্মীর হাতে। সূত্রে খবর, সমগ্র ঘটনাটি ঘটে খাদ্যমন্ত্রীর সামনেই। এরপরই আক্রান্ত ব্যক্তি ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানান, , ‘চড় মারলেন সেটা আপনার দেখলেন। এই পরিবেশ যদি হয়, তবে কোনও কথাই বলা যাবে না।’
এই প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্র রথীন ঘোষ বলেন, ‘এখানকার মানুষ বেশ কিছু বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন।কারও ব্যক্তিগত কোনও সমস্যার মধ্যে তো আর আমি কথা বলতে পারব না।মানুষ অভিযোগ জানালে আক্রান্ত হবে না। কেউ আক্রান্ত হয়েছেন কিনা আমি দেখিনি। কারণ, আমার সামনে ঘটেনি। ৫০০ মিটার দূরে ঘটনা ঘটেছে। আর আমাদের দলের কর্মীরা এত শৃঙ্খলাহীন নয় যে আমার সঙ্গে এমন করবে। এটা আগে থেকেই ওদের ঝামেলা ছিল। কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসেছেন। সেই কারণেই এইরকম কিছু ঘটে থাকতে পারে।’ এদিকে স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই গ্রামের মানুষের এলাকার পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এদিকে আক্রান্ত ব্যক্তি মন্ত্রীকে চড় মারার কথা জানিয়েছেন। এরপর তাঁর পিঠ চাপড়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন মন্ত্রী। এমনকী ওই ব্যক্তির কাছে ভুলও নাকি স্বীকার করেন মন্ত্রী। এদিকে এই ঘটনার কথা এসে পৌঁছায় মন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কানেও। এই প্রসঙ্গে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, ‘চড় মেরে ভুল করেছে। এখন দিদির দূতেরা কোথাও গেলে যে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে এটা যেন খেলা হয়ে গিয়েছে।’
এই প্রসঙ্গে সিপিএমন নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘এই কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষ নয়, দিদির সুরক্ষার বন্দোবস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এত বড় সাহস, মন্ত্রীর সামনে মুখ খুলেছেন বলে চড় মারা হয়েছে। তৃণমূল যা বলে, মানুষকেও তাই বলতে হবে। না বললেই এই ধরনের ঘটনা ঘটবে। দিদির ভূতরা মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়ছে বা গলা ধাক্কা খাচ্ছে।’ এই ঘটনায় তৃণণূলকে বিদ্ধ করতে ছাড়েনি বিরোধী দল বিজেপিও। এই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা জানান, ‘জনগণের সুরক্ষা গ্যারান্টি দিদি দিচ্ছে- এটাই ছিল কর্মসূচি। কিন্তু, দিদি মানুষকে কেমন সুরক্ষা দিচ্ছেন সেটা দত্তপুকুরে দেখা গেল। দুর্নীতি বা অনুন্নয়ন নিয়ে কথা বলা যাবে না। এমন হলেই দিদির সুরক্ষার থাপ্পড় গালে এসে পড়বে।ঘটনায় তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষও। এই প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ জানান, ‘যে ঘটনা ঘটেছে তা নতুন কিছু নয়। যখন থেকে কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছে তখন থেকেই মানুষ খুঁজছে তৃণমূল নেতাদের কাছে অভাব-অভিযোগ জানাবেন। এই ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে এরা কারোর কথা শোনেননা। সকলে ধমকান। দিদি নিজের পার্টির লোককে ধমক দেন, তেমনভাবে এরাও সাধারণ মানুষকে ধমকান।’