মালদা: প্রায় সাতমাস ধরে সরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় চাকরি করে যাচ্ছিল এক ভুয়ো শিক্ষক। এমনকী প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার এক মাসের মাইনেও তুলেছিল সে। কিন্তু ওই শিক্ষকের সমস্ত নথিপত্র তদারকি করার সময় জাল নিয়োগপত্রের বিষয়টি বেরিয়ে আসে জেলা শিক্ষা দপ্তরের কাছে। আর তাতেই শোরগোল পড়ে যায় জেলা শিক্ষা দপ্তরের মধ্যে। বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই শিক্ষকের বেতন। অবশেষে দীর্ঘদিন লুকিয়ে থাকার পর পুলিশ বুধবার রাতে ভুয়ো ওই শিক্ষক মহম্মদ মহসিনকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনাটি ঘটেছে, হরিশ্চন্দ্রপুর থানার কুমেদপুর এলাকায়। বৃহস্পতিবার ধৃত ওই ভুয়ো শিক্ষককে চাঁচল মহকুমা আদালতে পেশ করেছে পুলিশ।
এদিকে আদালতে যাওয়ার পথে ধৃত ওই ভুয়ো শিক্ষক মহম্মদ মহসিন (৩২) জানিয়েছে, তিনি মালদার এক নেতাকে চাকরি পাওয়ার জন্য ২০১৭ সালে চার লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। তারপরেই তাকে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার কুমেদপুর বেতাহল প্রাথমিক বিদ্যালয় জয়েনিং করার জন্য নিয়োগপত্র দেয় ওই নেতা। কিন্তু সমস্ত নিয়োগপত্রই যে ভুয়ো সেটা নাকি তিনি জানতেন না। পুরো বিষয়টি নিয়ে ফের আবারো মালদায় রাজনৈতিক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
পুলিশ ওই স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত ওই শিক্ষক মহম্মদ মহসিন হরিশ্চন্দ্রপুর থানার কুমেদপুর বেতাহল প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ চাকরিতে জয়েন করে। সাত মাস ওই প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেছে ধৃত শিক্ষক। এমনকী এক মাসের বেতন হিসাবে ১৭ হাজার ২৭৬ টাকাও তুলেছেন সে। এরপরই ওই ব্যক্তির সমস্ত নথিপত্র ভেরিফিকেশনের সময় ভুয়ো নিয়োগের বিষয়টি ধরা পড়ে।
সমস্ত বিষয়টি যে ভুয়ো তা জানতে পারে জেলা শিক্ষা দপ্তর। যথারীতি একমাস বেতন পাওয়ার পর ওই ভুয়ো শিক্ষকের মাইনে আটকে দেওয়া হয়। শুরু হয় তদন্ত।
এদিকে ২০১৮ সালে বেতন না পাওয়ার জন্য হাইকোর্টে একটি মামলা করে ধৃত ওই শিক্ষক। উচ্চ আদালত থেকে লোকাল থানার কাছে ওই শিক্ষকের বিষয়ে ভেরিফিকেশনের রিপোর্ট তলব করে মহামান্য আদালত। পরবর্তীতে পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী ওই শিক্ষকের মামলা খারিজ হয়ে যায়। অবশেষে আদালতের নির্দেশে এক মাসের পাওয়া বেতন সরকারের খাতায় ফিরিয়ে দিতে হয় এবং ভুয়ো শিক্ষকতার বিরুদ্ধে আদালতের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় মহম্মদ মহসিনের বিরুদ্ধে। সেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে গা ঢাকা দিয়েছিল ওই ব্যক্তি। অবশেষে বুধবার গভীর রাতে তার বাড়ি থেকেই গ্রেপ্তার করে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ।
এদিকে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে ভুয়ো শিক্ষক গ্রেপ্তারের ঘটনায় মালদায় ফের রাজনৈতিক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। জেলা তৃণমূলের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ি জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি তো নিজের মুখেই শাসকদলের এক নেতার কথা বলেছে। যাকে টাকা দিয়েই এই নিয়োগ নাকি পেয়েছিল। তাহলে এখানেই বুঝা যাচ্ছে তৃণমূলের অন্দরে কতটা দুর্নীতি চলছে।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক আধুর রহিম বক্সী জানিয়েছেন, কে কি ধরনের মন্তব্য করল সেটা বলতে পারব না। তবে বিজেপির সব সময় অপপ্রচার করে তৃণমূলকে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কেউ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলে পুলিশ, প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। যেটা বিজেপির কেন্দ্রের সরকার কখনোই করে না। সেই দলেও অনেক দুর্নীতিবাজ নেতারা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয় না। কেন্দ্রের তদন্তকারী এজেন্সিও ব্যবস্থা নেয় না। সুতরাং বিজেপির ভিত্তিহীন কথাবার্তার কোনও গুরুত্ব নেই।