৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল ইন্দোনেশিয়া, মঙ্গলবার পর্যন্ত অনুভূত হল ৪ আফটার-শক

জোরালো ভূমিকম্পে  কেঁপে উঠল ইন্দোনেশিয়া। সোমবার রাতে এই ভূমিকম্পের প্রভাব দেখা যায় মূলত তানিম্বার দ্বীপপুঞ্জে। পূর্ব ইন্দোনেশিয়ার মালুকু প্রদেশের অন্তর্গত তানিম্বার দ্বীপপুঞ্জ মোট ৩০টি ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত। ইন্দোনেশিয়া সরকার সূত্রে খবর, বান্দা সাগরে ছিল ভূকম্পনের উৎপত্তিস্থল।  ভূ-কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৯। শুধু ইন্দোনেশিয়াই নয়, কম্পন অনুভূত হয়েছে উত্তর অস্ট্রেলিয়াতেও। কম্পনে ইন্দোনেশিয়ার বেশ কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও ইন্দোনেশিয়া প্রশাসন সূত্রে খবর।  সূত্রে খবর, ইউনিভার্সাল টাইম কোড অনুযায়ী বিকাল ৫টা বেজে ৪৭ মিনিটে, অর্থাৎ, ভারতীয় সময় রাত ১১টা বেজে ২০ মিনিটে এই ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভারতীয় সময় রাত ১১ টার কিছুক্ষণ পরে এই কম্পন অনূভূত হয়। কম্পনের পর ইন্দোনেশিয়ার ভূতত্ত্ব বিভাগ থেকে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়। তবে প্রায় ৩ ঘণ্টার পর সুনামির  এই সতর্কতা তুলে নেয়  ইন্দোনেশিয়ার ভূ-তত্ত্ব বিভাগ। এদিকে স্থানীয় সূত্রে খবর, ভূ-কম্পনের সময় আতঙ্কে লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। ৩ থেকে ৫ সেকেন্ডের প্রবল কম্পন অনুভূত হয় বলে জানা গেছে।কম্পনে ১৫টি বাড়ি ও দুটি স্কুল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইউরোপীয় ভূমধ্যসাগরীয় সিসমোলজিক্যাল সেন্টারের তরফে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এদিনের এই ভূ-কম্পনের জেরে একজন আহতও হন।  শুধু তাই নয়, পরবর্তী কয়েক ঘণ্টায় নতুন করে আফটারশক হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশও করেন ইন্দোনেশিয়া ভূতত্ত্ব বিভাগের কর্তারা। এদিকে, ইন্দোনেশিয়ার পাশাপাশি উত্তর অস্ট্রেলিয়ার কিছু অঞ্চলে কম্পন অনূভূত হয়েছে বলে জানা গেছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী কম্পনের কেন্দ্রস্থল ছিল অস্ট্রেলিয়ার উত্তর প্রান্ত থেকে ১০৫ কিলোমিটার গভীরে, মালুকু দ্বীপ থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে। কম্পনের অনুভূবের কথা জানান, ডারউইন শহর সহ উত্তর অস্ট্রেলিয়ার এক হাজারে বেশি মানুষ। যদিও সেখানে কোনো সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়নি। কম্পন বেশ কিছুক্ষণ স্থায়ী হয়েছিল বলে এক ট্যুইট বার্তায় দাবি করেন অস্ট্রেলিয়ার গায়িকা ভ্যাসি। ইন্দোনেশিয়া প্রশাসন সূত্রে খবর, ভূমিকম্পের পর থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত অন্তত ৪টি আফটার শক অনুভূত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

এখানে বলে রাখা শ্রেয়, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি সক্রিয় ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার উপর ইন্দোনেশিয়া অবস্থিত।এই অঞ্চলটিকে ‘রিং অব ফায়ার’ বলা হয়। দেশটিতে আগেও বহুবার ভয়াবহ ভূমিকম্প এবাং আগ্নেয়গিরি  থেকে অগ্নুৎপাতের ঘটনা ঘটেছে। তবে, ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ায় সবচেয়ে বড় ভূকম্পনের ঘটনা ঘটেছিল। রিখটার স্কেলে সেই কম্পনের মাত্রা ছিল ৯.১। তার জেরে উত্তর-পশ্চিম সুমাত্রায় আছড়ে পড়েছিল সুনামি। সেই ধাক্কায় ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভারত, তাইল্যান্ডের প্রায় আড়াই লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এরপর ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসেও শক্তিশালী ভূকম্পনে কেঁপে উঠে ইন্দোনেশিয়া। তার জেরে সুনামির সতর্কতা জারি করে সে দেশের প্রশাসন। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৬। ফ্লোরেস দ্বীপ থেকে উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ১১৩ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের গভীরে কম্পনের উৎপত্তিস্থল ছিল বলে জানা গিয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × five =