কলকাতা: গঙ্গা আরতিকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার বাবুঘাটে। গঙ্গা আরতির কর্মসূচি নিয়ে অনড় বিজেপি।অনুমতি না থাকায় আপত্তি তোলা হয় কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে। এরপর মঞ্চ বাধায় বাধা দেওয়ার পাশাপাশি পুলিশের তরফ থেকে মঞ্চ খোলার কাজ শুরু হতেই পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। বাবুঘাটের বাজে কদমতলা ঘাটে পৌঁছে আরতি নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। এরপরই পুলিশি কাজে বাধা দেওয়ায় তাঁকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তোলেন পুলিশ কর্মীরা। গোটা ঘটনা ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বঙ্গ রাজ্য রাজনীতি।
সূত্রে খবর, বাবুঘাটে বাজে কদমতলা ঘাটে এদিন গঙ্গাপুজোর আয়োজন করেছিল বঙ্গ বিজেপি। বাবুঘাটের ওই এলাকায় গঙ্গা আরতি ও গঙ্গাপুজোর জন্য বিজেপি সেনার কাছ থেকে অনুমতি নেয়। কিন্তু অনুমতি দেয়নি কলকাতা পুলিশ। গঙ্গাসাগরে পুণ্যার্থীদের ভিড়ের মাঝে এই কর্মসূচিতে অসুবিধের সৃষ্টি হতে পারে এই কারণ দেখিয়ে অনুমতি দেয়নি কলকাতা পুলিশ। একইসঙ্গে পুলিশের তরফে এই কর্মসূচি পিছিয়ে দেওয়ারও অনুরোধ করা হয়। বলা হয় গঙ্গাসাগর মেলা ও জি-২০ শেষ হওয়ার পর আবেদন জানাতে। তবে প্রশাসনের কোনও রকম অনুরোধ মানতে রাজি হয়নি বঙ্গ বিজেপি।এরপর মঙ্গলবার সকালে পুলিশি অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও শুরু হয় মঞ্চ বাঁধার কাজ। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে এসে মঞ্চ খুলে ফেলতে শুরু করলে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা।আসেন বিজেপি নেতা সজল ঘোষও। পুলিশ কর্তাদেরকে তিনি জানতে চান, ‘আজ এখানেই গঙ্গা আরতি হবে।’ সঙ্গে এ প্রশ্নও তোলেন, গঙ্গাসাগর মেলা চলাকালীন গঙ্গাপুজো না হওয়ার যুক্তিটা কী তা নিয়ে। এই প্রসঙ্গেই জানান, ডি-২০ সম্মেলনের সময় তো মুখ্যমন্ত্রী সভা নিয়ে সমস্যা হয় না।’ এরপরই তিনি কীতিমতো হুঙ্কার ছাড়েন ‘আজ কার বিসর্জন হবে জানি না। আজ গঙ্গা আরতি হবেই।’ এরপরই সজল ঘোষের সঙ্গে পুলিশের বাক-বিতন্ডা চরমে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাঁকে সেখান থেকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। এই ঘটনায় আচক করা হয় বিজেপির অপর এক নেতা গোপাল সরকারকেও। এদিকে এই ঘাট থেকে একটু দূরে গঙ্গা আরতি করতে দেখা যায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে। এই প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি সভাপতি এও জানান, ‘অনুমতি না থাকলেও পুলিশের চোখে ‘ধুলো’ দিয়ে অন্য ঘাটে এই গঙ্গা আরতির আয়োজন করা হল। আর এটাও আমরা আমরা বোঝাতে চাই পুলিশ যদি ডালে ডালে চলে তবে আমরা পাতায় পাতায় চলি।’ পাশাপাশি সুকান্ত এ প্রশ্নও তোলেন, ‘গঙ্গা আরতি করলে কী করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে? যাঁরা গঙ্গা সাগরে যাওয়ার জন্য এসেছেন তাঁরা গঙ্গার পুজো করেন। আমরাও করছি।পুলিশ বাধা দিতে চাইছে তাই বাধা দিচ্ছে।তবে সেই বাধা আমরা অতিক্রম করতে পেরেছি।’ একইসঙ্গে তাঁর অভিযোগ, হিন্দুদের যে কোনও কর্মসূচিতেই বাধা দিচ্ছে পুলিশ। তাঁর কথায় উঠে আসে দুর্গাপুজো-সরস্বতী পুজোর প্রসঙ্গও। তবে এদিনের কর্মসূচির জন্য সেনার অনুমতি রয়েছে বলে আগেই দাবি করা হয়েছিল রাজ্য বিজেপির তরফ থেকে।
এদিকে গঙ্গা আরতি শেষে সুকান্ত যখন ফেরার পথ ধরেছিলেন তখন পুলিশ তাঁদের প্রিজন ভ্যানে করে বেশ কিছু বিজেপি সমর্থককে লালবাজারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে তা দেখা মাত্রই সেই প্রিজন ভ্যানের সামনে দলবল নিয়ে বসে পড়েন সুকান্ত। ফলে আটক করা বহু বিজেপি সমর্থককে লালবাজারে নিয়ে যেতে গিয়ে বাধার সামনে পড়ে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত সুকান্ত সহ বহু নেতা কর্মীদের প্রিজনভ্যানে তোলে পুলিশ।