স্ত্রীর শেষ ইচ্ছে, জীবনসঙ্গিনীর পূর্ণাবয়ব মূর্তি ঘরে রাখলেন স্বামী

কলকাতা: ভালোবাসার জন্য মানুষ কত কী না করে!

এই যে যেমন ইতিহাস বলে প্রিয়তমা বেগম মুমতাজের স্মৃতিতে তাজ মহল বানিয়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান। সে না হয়, রাজা-বাদশারা করেছিল, তাই বলে কি সাধারণ মানুষ প্রেমের কথা জানাতে এমন কিছু করতে পারেন না?

পারেন, ১০০ বার পারেন। আর তাই কোভিডে প্রয়াত প্রিয়তমা স্ত্রীর স্মৃতিতে আস্ত সিলিকন মূর্তি বানালেন কলকাতার বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সি তাপস শান্ডিল্য।একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী তিনি।বছর দশেক আগে সস্ত্রীক মায়াপুরে ইস্কন মন্দিরে ঘুরতে গিয়েছিলেন তাপসবাবু। সেখানেই চোখে পড়ে প্রতিষ্ঠাতা ভক্তিবেদান্ত স্বামীর পূর্ণাবয়ব মূর্তি। সেটি দেখেই অত্যন্ত পছন্দ হয়েছিল স্ত্রী ইন্দ্রানীদেবীর। স্বামীকে জানিয়েছিলেন নিজের শেষ ইচ্ছের কথা। বলেছিলেন, তাপসবাবুর আগেই যদি পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয় তাঁকে, তাহলে তিনি চান, স্বামী যেন ঠিকই একই রকম একটি পূর্ণাবয়ব মূর্তি তৈরি করেন তাঁর।

হাজার ঝড়-ঝাপটাতেও তাঁরা একসঙ্গে পথ চলছিলেন। কিন্তু করোনা অতিমহামারী ওলট-পালট করে দিয়েছিল সবটা। দীর্ঘদিনের সঙ্গিনীকে কেড়ে নিয়েছিল করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। মৃত্যুর পর স্ত্রীর শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে আড়াই লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাঁর পূর্ণাবয়ব সিলিকন মূর্তি তৈরির ব্যবস্থা করেন প্রৌঢ়।

বিভিন্ন জাদুঘরের জন্য মোমের মূর্তি তৈরি করেন শিল্পী সুবিমল দাস। স্ত্রীর মূর্তি তৈরির জন্য তাঁর দ্বারস্থ হন তাপসবাবু। শিল্পী জানান, মোমের মূর্তি বেশি ‘রিয়ালিস্টিক’ হলেও সিলিকনের মূর্তি টেকসই হয় অনেক বেশি, রক্ষণাবেক্ষণও অনেক সহজ। দীর্ঘ ৬ মাস ধরে একটু একটু করে ইন্দ্রানীদেবীর সিলিকন মূর্তি তৈরি করেন সুবিমল দাস। অবিকল ফুটিয়ে তোলেন প্রয়াত ইন্দ্রানীদেবীর চেহারা, চাউনি, হাসি।
সেই মূর্তি এখন রাখা রয়েছে তাপসবাবু ও ইন্দ্রানীদেবীর বাড়িতে, একটি সোফার উপর। ৩০ কেজি ওজনের সেই মূর্তির পরনে রয়েছে একটি সিল্কের শাড়ি, যেটি ছেলের বিয়ের বধূবরণ অনুষ্ঠানের সময় পরেছিলেন ইন্দ্রানীদেবী। এছাড়া স্ত্রীর পছন্দের সোনার হার ও কানের দুল দিয়ে নিজে হাতে তাঁর মূর্তিকে সাজিয়ে তুলেছেন তাপসবাবু।

স্ত্রীর শেষ ইচ্ছে পূরণ করার আনন্দ নিয়েই এখন বেঁচে থাকেন তাপসবাবু। আর নিখুঁত প্রাণবন্ত মূর্তি দেখে কখনও সখনও তাঁর মনে হয় প্রিয় মানুষটি পাশেই রয়েছে। একদম কাছে। এখন তো চাইলে তাঁর হাতও ধরা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × five =