পুরুলিয়ার বিখ্যাত রঘুনাথপুরের জয়চন্ডী পাহাড় পর্যটন উৎসবকে জাতীয় মেলা করার আবেদন জানিয়ে চিঠি লিখবেন রাজ্যের পর্যটন দপ্তরের ভাইস চেয়ারম্যান তথা নায়িকা সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বিকেলে রঘুনাথপুরের জয়চন্ডী পাহাড় পর্যটন উৎসবের উদ্বোধন করে এমনই মন্তব্য করে গেলেন তিনি। তিনি এদিন মেলার উদ্বোধন করে বলেন, আমি দপ্তরের কাছে চিঠি লিখব এই মেলাকে জাতীয় মেলা হিসাবে ঘোষণা করার জন্য। কনকনে শীতকে উপেক্ষা করেই বুধবার ২৮ ডিসেম্বর দিনের পড়ন্ত বিকেলে শুরু হল পুরুলিয়ার বিখ্যাত হীরক রাজার দেশে জয়চন্ডী পাহাড় পর্যটন উৎসব ২০২২-২০২৩।
আনুষ্ঠানিকভাবে এদিন বিকেলে পাহাড়ের পাদদেশে ‘সত্যজিৎ রায় মঞ্চ’ উৎসবের উদ্বোধন করেন পর্যটন দপ্তরের ভাইস চেয়ারম্যান সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অন্যান্যরা। ২৮ডিসেম্বর ২০২২ থেকে ১ জানুয়ারি ২০২৩ পাঁচদিন ধরে এই উৎসব চলবে। এবার এই উৎসব সতেরোতম বর্ষে পদার্পণ করল। অন্যান্য বারের তুলনায় এবারের উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে হাজার হাজার উৎসাহী পর্যটক এসেছে মেলা প্রাঙ্গণে। এবার এই জয়চন্ডী পাহাড় পর্যটন উৎসবের আলাদা আকর্ষণ। কলকাতার বেলেঘরিয়া থেকে আসা মোহিত মণ্ডল, সোনালি মণ্ডলরা জানান, এই জয়চন্ডী পাহাড়ের সুন্দর মনমুগ্ধ প্রাকৃতিক দৃশ্য তাদের হৃদয় কেড়ে নিয়েছে। তাদের আরো ভালো লাগছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষ করোনা বিধি মেনে এই পাহাড়ে কি সুন্দরভাবে ঘোরাফেরা করছে। তাদের আশা আগামী দিনে রঘুনাথপুরের এই জয়চন্ডীপাহাড় পর্যটন উৎসব কেবল রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে নয়, দেশ ও বিদেশেও স্থান করে নেবে। অপর এক পর্যটক ঝাড়খণ্ডের রাঁচি থেকে আগত দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই জয়চন্ডী পাহাড়ের পর্যটন উৎসবে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। খুব ছোটবেলায় একবার এসেছিলাম। তখনকার জয়চন্ডী পাহাড় আর বর্তমানের জয়চন্ডী পাহাড়ের তফাৎ হয়েছে অনেকটাই। এদিন উদ্বোধনী সংগীত ‘আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে’ গানের মধ্যে দিয়ে উৎসব অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন রঘুনাথপুরের মান্না দে’র গুরুকুল মিউজিক কলেজ। এছাড়া এলাকার বিদ্যালয়গুলির ছাত্র ছাত্রীদের দ্বারা উদ্বোধনী নৃত্যে ও আদিবাসী নৃত্যে মেলা প্রাঙ্গণ হয়ে উঠে জমজমাট। এবার পর্যটন উৎসবের আগেই ডিসেম্বরের শুরু থেকেই জয়চন্ডী পাহাড়ে পর্যটকদের ঢল নামতে শুরু হয়েছে। পর্বতারোহীদের ভিড়ে গমগম করছে এই পাহাড়। বহিরাগত পর্যটকদের সঙ্গে এলাকাবাসীরা পাহাড়ের পাদদেশে ‘সত্যজিৎ রায় মঞ্চে’ কনকনে শীত রজনীকে উত্তাপ দিতে কলকাতা থেকে শিল্পীরাও আসছেন এই পর্যটন উৎসবে। তাই এবার হয়তো পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের হীরক রাজার ব্রাত্য দেশ জয়চন্ডী পাহাড় পর্যটন উৎসব শেষ অবধি পর্যটনের স্থান হিসেবে গণ্য হতে চলেছে। তাই উপেক্ষিত দেশের স্বীকৃত পাওয়ার আনন্দে আত্মহারা রঘুনাথপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ।