ওএমআর শিটে মেলেনি এক নম্বরও, কিন্তু চাকরি পেয়েছেন এমন চাকরি পাওয়া ভুয়ো শিক্ষাকর্মীদের তথ্য কলকাতা হাই কোর্টে তুলে ধরল সিবিআই। বেআইনি নিয়োগ পাওয়া এই ১৬৯৮ জন গ্রুপ ডি কর্মী যাতে আর একদিনও স্কুলে কাজ করতে না পারে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে চলেছে কলকাতা হাই কোর্ট। তাঁদের বেতন বন্ধ এবং স্কুলে ঢুকতে না দেওয়ার মতো কড়া পদক্ষেপ করতে পারে আদালত। এই প্রসঙ্গে এদিন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু জানান, এই বেআইনি নিয়োগ পাওয়া গ্রুপ ডি কর্মীরা এখন কোথায় কর্মরত সেই সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে পর্ষদকে। এরপরেই নির্দেশ দেবে আদালত।
বুধবারই ‘গ্রুপ ডি’ নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় সেই ওএমআর শিট বিকৃতির কথা উল্লেখ করে সিবিআই। এরপর বৃহস্পতিবার নিয়োগ মামলায় ওএমআর বিকৃতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। যে সব প্রার্থীদের উত্তরপত্র নিয়ে এই অভিযোগ উঠেছে, বৃহস্পতিবারই বেলা তিনটের মধ্যে তাঁদের তালিকা তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে। একইসঙ্গে নাম, স্কুলের নাম, ঠিকানা আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে এদিন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু মন্তব্য করেন, নিয়োগে দুর্নীতির জেরে ইতিমধ্যেই ছাত্রদের ক্ষতি হয়েছে। আর নয়। এক মুহূর্তও আর চাকরি করবেন না ওই প্রার্থীরা। একদিনও এদের স্কুলে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
এদিকে সিবিআই আদালতে জমা দেওয়া রিপোর্টে দাবি করেছে ওএমআর শিটে নম্বর বদলে গিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা হয়েছে, যাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৩, তিনি ওএমআর শিটে আসলে পেয়েছেন শূন্য। গাজিয়াবাদের যে সংস্থাকে এই ওএমআর শিট মূল্যায়নের ভার দেওয়া হয়েছিল, সেই নাইসা-র তথ্য খতিয়ে দেখেই এই রিপোর্ট পেশ করেছে সিবিআই। আদালতে রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরই বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু জানতে চান এমন প্রার্থীর সংখ্যা কত। তার উত্তরে পর্ষদের তরফে জানানো হয় সংখ্যাটা ১৬৯৮। এরপরই তাঁদের সম্পর্কিত তথ্য জমা দিতে বলেন বিচারপতি। এদিকে পর্যদের তরফ থেকে সময় চাওযা হয়। উত্তরে বিচারপতি জানিয়ে দেন, কোনও সময় দেওয়া হবে না। এর প্রেক্ষিতে বিচারপতি এও বলেন, ‘ডিজিটালি এক ক্লিকে যে কোনও তথ্য জোগাড় করা সম্ভব।‘ এদিকে এদিনই হাইকোর্টের নির্দেশে গ্রুপ ডি পরীক্ষার ১০০ টি ওএমআর শিট প্রকাশ করবে স্কুল সার্ভিস কমিশন।
অন্যদিকে, এসএসসি নিয়োগ মামলায় সুবীরেশ ভট্টাচার্যের জামিনের মামলা নিয়ে বুধবার কলকাতা হাই কোর্ট জানায়, ‘শিক্ষায় নিয়োগ-দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে।’ বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ও বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তার ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। সেখানেই এই মন্তব্য করা হয়েছিল। আদালতে জামিনের আবেদন করার পরেই পালটা প্রশ্ন ওঠে কীভাবে সুবীরেশ ভট্টাচার্যের অনুমতি ছাড়া এই ধরনে ঘটনা ঘটে তা নিয়ে। এরপরই এই সূত্রেই আদালত জানায়, হয় সুবীরেশবাবু অকর্মণ্য বা তিনি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাথা ছিলেন। সেক্ষেত্রে তিনি কি ঘুমিয়েছিলেন?’ এদিকে বুধবার তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়।