বিপজ্জনক বিল এনে বিরোধীদের ওপর বুলডোজার চালানো যাবে না

নয়া দিল্লি: ‘অনেক বিপজ্জনক বিল আনতে চলেছে কেন্দ্র। যাতে অনেক বিলে রাজ্যের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করতে চাইছে।’ বুধবার দলীয় সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমনটাই জানান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।এরই রেশ টেনে তিনি দলী সংসদেউপস্থিত নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে জানান, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে শাসকদল এই সব বিপজ্জনক বিল আনতে চলেছে। আর তা সংখ্যআগরিষ্ঠতার জোরেই পাশ করাতে চায়।’ তবে পাশাপাশি তিনি এও স্পষ্টভাবেই জানান, কেন্দ্রের এই অভিপ্রায় সফল হবে না। অর্থাৎ ,বারংবার যে অভিযোগ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা এদিনেও সেই একই সুর এদিনও শোনা যায় তাঁর গলায়। এদিনও তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকার গণতন্ত্রের উপর আঘাত আনছে।

প্রসঙ্গত, বুধবার দুপুর ৩টে নাগাদ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের দিল্লির বাসভবনে সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে বসেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে তৃণমূলের রণকৌশলের অভিমুখ ঠিক করে দেন তিনি। প্রায় দু’ঘণ্টা বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা জানান, ‘সংসদে একাধিক কমিটির রিপোর্ট গ্রহণ করা হয় না।স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্ট গ্রহণ করা হয় না। আমি তো ভয় পাচ্ছি, গণতন্ত্রিক পরিকাঠামো এই কারণে নষ্ট হতে পারে। কখনই চাইব না সংসদের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট হোক। শাসকদল সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় জোর করে বিল পাশ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমার অনুমান, আরও একাধিক বিপজ্জনক বিল আনা হবে। কিছু বিল রাজ্যের বিষয়েও হস্তক্ষেপ করে।অন্য রাজ্যকে, বিরোধীদের এভাবে বুলডোজ করা যাবে না। এই নিয়ে তৃণমূল সরকার গঠণমূলক আলোচনা করবে।’ একইসঙ্গে কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, ‘বিরোধীদের কিছু বলার জায়গা দেওয়া হচ্ছে না।স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে বিরোধীদের সরিয়েছে। শুধু বিরোধীদের ওপর বুলডোজার চালিয়ে দাও, এমনই একটা মনোভাব কেন্দ্রের। পাশাপাশি গণতন্ত্রের স্তম্ভের উপর দিয়ে বুলডোজার চালাও।এভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ আর এখানেই মমতার বার্তা, ‘বুলডোজার চালানো তো অনেক সহজ। কিন্তু, আমরা দৃঢ় ও শান্তভাবে আমরা এর প্রতিবাদ করব।’

এদিকে সূত্রে খবর, শীতকালীন অধিবেশনে ১৬টি বিল আনতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।শুধু তাই নয়, এদিন ফের কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এককাট্টা হওয়ার বিষয়ে অন্যান্য বিরোধী দলকে আহ্বান জানান তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোযপাধ্যায়। তিনি বিরোধী দলের নেতাদের উদ্দেশ্য করেও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে অন্যান্য দলকে আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা যদি আমাদের সহযোগিতা করেন, তাহলে আমরাও আপনাদের সহযোগিতা করব।’

অন্যদিকে, কেন্দ্র ১০০ দিনের টাকা আটকে রেখেছে বলে বহুবার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তাঁর দিল্লি সফরে থাকাকালীন সেই টাকা রাজ্যের কোষাগারে দিল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং স্বয়ং ফোন করে এই সুখবর জানিয়েছেন। কিন্তু, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নন মুখ্যমন্ত্রী। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘টাকা আসতে দু-বছর লেগে গেল!’ একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অর্থবর্ষের দু-মাস আগে যদি টাকা ঢোকে, তাহলে সেটি কাজে লাগানো যায় না। বছরের শেষে যেন ভিক্ষা দিচ্ছে। দেরিতে টাকা না দেওয়া ভাল।সময়ের মধ্যে টাকা না দিলে ডিপিআর, টেন্ডার করতে সময় লাগে।তখন আবার বলবে, টাকার ব্যবহার হয়নি।’ আর এই প্রসঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমো কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে এও বলেন,  ‘সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করছে। কেবল মাটি আর আকাশকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − 7 =