শুভাশিস বিশ্বাস
১ ডিসেম্বর গুজরাতে প্রথম দফার ভোট। আর এই দুই দফার ভোটের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে গুজরাতের প্রথম দফার ভোটই, এমনটাই ধারনা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। কারণ, এই দিনই সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে নির্বাচন। এখানকার ৪৮ টির মধ্যে ২৮ টি আসনেই ২০১৭-তে জয়লাভ করে কংগ্রেস। আর ২০১২ তে পেয়েছিল ১৫ টি। ফলে অঙ্ক কিন্তু বলছে, পাঁচ বছরে কংগ্রেস তার শিক্ত বাড়িয়েছে অনেকটাই। এদিকে এটাও ঠিক যে ঘোড়া কেনাবেচা আর উপনির্বাচনে সেই ক্ষততে অনেকটাই মলম লাগাতে সক্ষম হয় বিজেপি। তবে এরপর গুজরাতের রাজনৈতিক পটভূমিতে উত্থান হয় আপের। সেখানে আবার খুব অল্প সময়ের মধ্যে পতিদারদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এদিকে প্যাটেল ভোট গুজরাতের ভোটে এবার অন্যতম বড় একটা ফ্যাক্টর হতে চলেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
প্রথম দফায় গুজরাতের সৌরাষ্ট্র ও দক্ষিণ গুজরাতে ভোট ৷ যার মধ্যে রয়েছে সুরাত (উত্তর), ভারাচ্চা রোড, কাতারগ্রাম, কারাঞ্জ, কামরেজের মতো আসনগুলি। যেখানে সংখ্যাগুরু এই পতিদার সম্প্রদায়। আর এই দুই এলাকায় ফলের উপর নির্ভর করছে বিজেপির ভাগ্য ৷ এদিকে দীর্ঘদিন ধরে এই পতিদাররা বিজেপির ওপর নানা কারণে ক্ষুব্ধ। তাঁদের সমর্থন পেতের হাজারো চেষ্টা চালানো হয় স্যাফ্রন ব্রিগেডের তরফ থেকে। এমনকী সব থেকে বড় চাল খেলা হয়েছিল গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেলকে এই পতিদার সমাজ থেকে বেছে নেওয়ায়। ফলে মুখে যতই বিজেপি দাবি করুক না কেন গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনী প্রচারে তারা কিন্তু ঝড় তুললেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই বিজেপির এই প্রচারকে ২০ বছর আগের কংগ্রেসের প্রচারের সঙ্গে তুলনাও করছেন। তবে তার মধ্যে বিশেষত্ব গল উত্তর প্রদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী গুজরাতে বিজেপির প্রচারে অংশ নেন। রামমন্দির আন্দোলন শুরুর সময় থেকেই গুজরাতের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের সম্পর্ক বেশ গভীর। আর এই উত্তরপ্রদেশে এই বছরের শুরুর দিকে বিধানসভা ভোটে জেতে বিজেপি।
সূত্রে খবর, উত্তর প্রদেশ থেকে অন্তত ১৬০ জন বিজেপি নেতা-কর্মী গুজরাতে গিয়ে প্রচারে অংশ নিয়েছেন। প্রচার করেছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আক্রমণাত্মক প্রচারে তিনি গুজরাত মডেলের পক্ষে যুক্তি খাঁড়া করেছেন। যোগী আদিত্যনাথ এমন সব জায়গায় প্রচার করেছেন, যেখানে বিজেপি খুব কম ব্যবধানে হেরেছে কিংবা জিতেছে কিংবা যেখানে বড় সংখ্যায় মুসলিম ভোটার রয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য গুজরাতের হিন্দিভাষী এলাকায় সভা করেন। এছাডা়ও প্রচারে দেখা গিয়েছে দলের জাতীয় নেতাদেরও।
বিশেষত, নির্বাচনের ঠিক আগের দু সপ্তাহ ধরে গুজরাতে ব্যাপক প্রচার চালায় বিজেপি। এদিকে বিজেপি তাঁদের জয় নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার বড় একটা কারণ কিন্তু এই আম আদমি পার্টির অভ্যুত্থান। বিজেপির শিবিরের তরফ থেকে যে সমীক্ষা চালানো হয়েছে তাতে এটাই ধরা পড়ছে, আপের এই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার ঘটনায় ক্ষতি হবে কংগ্রেসের। তারাই কংগ্রেসের ভোট ব্যাঙ্কে থাবা বসাবে। ফলে একদিক থেকে লাভই হবে বিজেপির। এদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, গুজরাতে দু’দফার এই নির্বাচনে মোট নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ৪ কোটি, ৯০ লক্ষ ৮৯ হাজার ৭৬৫ জন। যার মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ২ কোটি ৫৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ৬১০ জন। মহিলা ভোটারের সংখ্যা ২ কোটি ৩৭ লক্ষ ৫১ হাজার ৭৩৮ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ১ হাজার ৪১৭ জন। এদিকে শহরাঞ্চলে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৭,৫০৬টি। পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৪, ২৭৬। অর্থাৎ, মোট ভোট কেন্দ্র ৫১,৭৮২। এদিকে প্রথম দফায় মোট ৭৮৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ২১১ জন প্রার্থীই কোটিপতি। এই পর্বে গড়ে প্রতিটি প্রার্থীর সম্পদের পরিমাণ ২.৮৮ কোটি টাকা। এছাড়াও ১২৫ জন প্রার্থী রয়েছেন যাদের ৫০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।
এবার একটু দেখা যাক যাঁরা এই ভোট যুদ্ধে লড়ছেন তাঁদের ‘মানি পাওয়ার’ কার কী রকম। কারণ, রাজনীতিতে টিঁকে থাকতে গেলে একদিকে ‘মাসল পাওয়ার’ যেমন দরকার, ঠিক তেমনই দরকার ‘মানি পাওয়ার’ও। গুজরাতের প্রথম পর্বের নির্বাচনে যে ৭৮৮ প্রার্থী ভোটযুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন তাঁদের মধ্যে ২১১ জনই কোটিপতি, এমনটাই সূত্রে খবর। সমীক্ষা বলছে, বিজেপি প্রার্থীর মধ্যে ৮৯ শতাংশ প্রার্থীই কোটিপতি। পাশাপাশি কংগ্রেসের প্রার্থীদের কোটিপতির সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। তাদের শিবিরেরও ৭৩ শতাংশ প্রার্থী এই কোটিপতির ঘরেই নাম লিখিয়েছেন। এদিকে আম আদমি পার্টির ৩৮ শতাংশ প্রার্থী, যাঁদের সম্পদ এক কোটি বা তার বেশি। গতবার অর্থাৎ ২০১৭ সালে, বিজেপির ৮৫ শতাংশ, কংগ্রেসের ৭০ শতাংশ এবং ভারতীয় উপজাতি পার্টির ৬৭ শতাংশ প্রার্থী ছিলেন কোটিপতি। এরপর পাশাপাশি সামনে এসেছে আরও এক বিস্ফোরক তথ্য। ভোট-নজরদারি সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’ (এডিআর)-এর রিপোর্ট জানাচ্ছে, প্রথম দফার ৮৯টি আসনের ভোটে আপের ৩০ শতাংশ প্রার্থীর বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এঁদের মধ্যে কংগ্রেসের ২০ শতাংশ এবং বিজেপির ১২ শতাংশ প্রার্থী গুরুতর ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত।