পারল না ভারত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে থেমে গেল ভারতের দৌড়। আসল সময়ে এভাবে যে সিস্টেম ফেইলিওর হবে টিম ইন্ডিয়ার, তা কি আগে কেউ ভাবতে পেরেছিলেন? ইংল্যান্ডের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে রোহিত শর্মার দল ছিটকে গেল বিশ্বকাপ থেকেই।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ১৬৮ রান খুব বড় কিছু টার্গেট নয়। এটা যেমন ঠিক, তেমনই খুব খারাপও নয়। বোলারদের লড়াই করার মতো পুঁজি তো হাতে ছিল। তবুও কেন ব্যর্থ হলেন ভুবনেশ্বর কুমার, অর্শদীপ, মহম্মদ সামিরা? ভারতীয় ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষাতেও দেখা যায়নি লড়াইয়ের উদ্যম।
কোথায় গেল সেই কামড়? কোথায় তীব্রতা? বিনাশকালে কি বুদ্ধিনাশ হল রোহিত শর্মার দলের? বিনা উইকেটে ইংল্যান্ড ১৭০ রান করে ফাইনালে চলে গেল। ৪ ওভার বাকি থাকতেই ভারতের রান তুলে নেয় ইংরেজরা। বাটলার ৮০ রানে অপরাজিত থাকেন, হেলস ৮৬ রানে অপরাজিত থেকে যান।
এদিন ইংল্যান্ড ব্যাটারদের সামান্য অস্বস্তিতেও ফেলতে পারলেন না ভারতের বোলাররা। রবিবার ফাইনালে ইংল্যান্ডের সামনে পাকিস্তান। ১৯৯২ সালেরই পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সেবারের ফাইনালে মেলবোর্নে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইমরান খানের দেশ। এবার কী হবে? উত্তর দেবে সময়।
২০১৩ সালের পর কোনও আইসিসি টুর্নামেন্ট জেতেনি ভারত। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে সেই চ্যা।ম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ই শেষ। তার পর থেকে ভারত হয় সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গিয়েছে, নইলে ফাইনাল থেকে। এবারও সেই একই চিত্রনাট্য। নক আউটের অভিশাপ কাটাতে পারল না ভারত। আইসিসি বিশ্বকাপ থেকে এবারও খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে ভারতীয় দলকে।
অ্যাডিলেডে খেলা বলে বিশেষজ্ঞরা ভারতকেই এগিয়ে রেখেছিলেন।
অ্যাডিলেডের পিচ স্পিন সহায়ক। আর ভারতীয়রা যে ধরনের ক্রিকেট খেলে থাকে, অ্যাডিলেডে সেই রকমের ক্রিকেট খেলা সম্ভব। বৃহস্পতিবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ভারত অবশ্য বড় রানের লক্ষ্যমাত্রা দিতে পারল না ইংল্যান্ডকে। ২০ ওভারে ভারত করে ৬ উইকেটে ১৬৮ রান। পান্ডিয়া ৩৩ বলে ৬৩ রানের ইনিংস খেলেন। ইনিংসের শেষ বলে তিনি হিট উইকেট হন। শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন পান্ডিয়া। তিনি হিট উইকেট না হলে ভারতের রান হত ১৭২। কোহলি এদিন ৪০ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু পঞ্চাশ করার পরেই ফিরতে হল বিরাটকে। এই পঞ্চাশ অবশ্য মোটেও বিরাটোচিত নয়। আরেকটু গতিশীল ইনিংস খেলতেই পারতেন তিনি।
ভারতের রান তাড়া করতে নেমে জস বাটলার ও অ্যালেক্স হেলস খুব সহজেই ভারতের ক্যাম্প থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিলেন। ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার নির্ভরতা দিলেন দলকে। সেখানে ভারতের দুই ওপেনার লাগাতার ব্যর্থ হলেন এবারের বিশ্বকাপে। কোনও সময়তেই ভারতের ওপেনিং জুটি জ্বলে ওঠেনি। শুরুর দিকে দ্রুত উইকেট হারানোয় চাপ এসে গিয়েছিল মিড অর্ডারের উপরে। এদিনও একই চিত্রনাট্য। লোকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মার ওপেনিং জুটি ভারতকে নির্ভরতা দিতে পারেনি। শুরুর চাপ সামলে রান করতে অনেক সময় নিয়ে ফেলে ভারত। উইকেট হারানোর ভয়ে মারমুখী ব্যাটিংও করেননি ব্যাটাররা। এদিন হার্দিক পান্ডিয়া জ্বলে উঠলেন ঠিকই। ততক্ষণে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে।
১৬৮ রান নিয়ে জিততে হলে শুরু থেকেই চাপ তৈরি করতে হত ইংল্যান্ড ব্যাটারদের উপর। শুরুর দিকে উইকেট তুলে নিয়ে চাপে ফেলাই যেত। কিন্তু আসল দিনে এত নির্বিষ বোলিং করলেন কেন ভারতীয় বোলাররা, তা নিয়ে ময়নাতদন্ত করা যেতেই পারে। বাটলার ও হেলস অপরাজিত থেকে ইংল্যান্ডকে নিয়ে গেলেন ফাইনালে। আর কবে আইসিসি টুর্নামেন্টে বিজয়কেতন ওড়াবে ভারত? কাগজ কলমে দুনিয়ার সেরা টিম, অথচ আসল সময়ে ব্যর্থ। দ্বিপাক্ষিক সিরিজেই এই ভারত ভাল। বিশ্বকাপে নয়।