মহিলারা নন, পুরুষরাই দশমীর দিন মা হৈমন্তীর বরন করেন ভদ্রেশ্বরে

মহেশ্বর চক্রবর্তী

হাতে বরণডালা, শঙ্খধ্বনি ও উলুর রোলে মুখোরিত দালান বাড়ি, পরণে কারোর তাঁতের শাড়ি আবার কারোর গরদের শাড়ি। মা জগদ্বাত্রীর বরণ চলছে। তবে মহিলারা নন,পুরুষরাই মা হৈমন্তীর দশমীর বরণ করছেন। তা দেখতে শয়ে শয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এই দৃশ্য দেখা যায় হুগলির ভদ্রেশ্বরে তেঁতুলতলায়। যুগ যুগ ধরেই এটা চলে আসছে। বনেদিয়ানা তথা জমিদার বাড়ির পুজোগুলিতে নিজস্ব আচার অনুষ্ঠান দেখা যায়। তা যে কোনও দেব-দেবীর আরাধনার ক্ষেত্রই জমিদার বাড়িতে নিজস্ব আচার অনুষ্ঠান মেনে পুজোপাঠ হয়। চন্দননগরের জগদ্বাত্রী পুজোতেও জমিদার বাড়ি বা পারিবারিক পুজোগুলিতে নিজস্ব রীতিনীতি বজায় রেখে পুজোপাঠ এবং দশমীর দিন আচার অনুষ্ঠান পালন করে বিসর্জন হয়। সেই মতো বৃহস্পতিবার ভদ্রেশ্বরের তে¥তুলতলায় জগদ্ধাত্রী প্রতিমা নিরঞ্জনের আগে প্রথা মতো পুরুষরা মা জগদ্ধাত্রীকে বরণ করলেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পুজোতে ছেলেরা বরণ করে আসছে। কথিত আছে, আগে মেয়েরা বাইরে বের হতে পারত না। অত্যাচারিত হত। সেই কারণে ছেলেরাই বরণ করে আসছেন। ইংরেজ আমল থেকেই এই প্রথা প্রচলিত। তৎকালীন সময়ে সমাজ কুসংস্কারে আবদ্ধ ছিল। তাই মেয়েদেরকে বাড়ির মধ্যেই বেশি জীবন কাটাতে হত। বাইরে বের হয়ে সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারত না। তাই পুরুষরাই শাড়ি পরে মা জগদ্বাত্রীর দশমীর বরণ করতেন। সেই প্রাচীন প্রথা এখনও চলছে ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলার জগদ্ধাত্রী প্রতিমা নিরঞ্জনে, এমনটাই জানালেন বরনে অংশ নেওয়া একজন সদস্য। অপরদিকে স্থানীয় এক কুলবধূ জানান, প্রথা মেনেই পুরুষেরা মাকে বরণ করেন। এদিন ভদ্রেশ্বরে তেঁতুলতলার জগদ্ধাত্রী পুজোতেও ১৩ জন পুরুষ ঘোমটা পরে জগদ্ধাত্রীর বরণ করেন। তাও আবার নারীর বেশে। আর এই দৃশ্য দেখতেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ভিড় জমায় বহু মানুষ। কথিত আছে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান দাতারাম সুরের মেয়ের বাড়ি গৌরহাটিতে একসময় হত জগদ্ধাত্রী আরাধনা। তাঁদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় সেই পুজো চলে আসে ভদ্রেশ্বর তেঁতুলতলায়। বাড়ির পুজো সর্বজনীন রূপ পায়। সে সময় বাড়ির মেয়েরা পরদার আড়ালে থাকতেন। বাইরে বেরোতেও ভয় পেতেন। বাইরে বেরিয়ে পুজোয় অংশ নিতেন না। কিন্তু প্রতিমা বরণ তো মেয়েরাই করেন, সেই কাজ হবে কী করে? বিসর্জনের আগে তাই পুরুষরাই কাপড় পরে মহিলা সেজে বরণ করা শুরু করেন। সেই প্রথা আজও মেনে চলেছে ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলা বারোয়ারি। সবমিলিয়ে এই অভিনব বরণ দেখতে এদিন হুগলি জেলার পাশাপাশি হাওড়া,বর্ধমান, কলকাতা থেকে বহু মানুষ ঠাকুর দালানবাড়িতে ভিড় জমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 10 =