হুগলি জেলা জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মা কালীর পুজোপাঠের নানা ইতিহাস। এই জেলার হরিপাল বিধানসভার শ্রীপতিপুর গ্রামের বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী অধিকারী বাড়িতে মা কালীর আরাধনাকে ঘিরে রয়েছে নানা ঘটনা। এই মায়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিশেষত্ব হল মা কালীর গায়ের রং কচি কলাপাতার মতো সবুজ। শ্যামা মা ও শ্রীকৃষ্ণের অনন্য রূপ দেখা যায় ওই গ্রামের বৈষ্ণব পরিবারে প্রতিষ্ঠিত মা কালীতে। এই বৈষ্ণব পরিবারে দাবি, এই গ্রামেরই এক দরিদ্র গোড়া বৈষ্ণব পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন বটকৃষ্ণ অধিকারী। বৈষ্ণব সুলভ আচরণ ছোট থেকেই জন্ম সূত্রে পেয়েছিলেন তিনি। তবে তৎকালীন ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করার পর কিছু বছর ভিন রাজ্যে চাকরি করেন। তাঁর পর ভাগ্যচক্রে আবার ওই গ্রামে এসে চাষাবাদ করতে শুরু করেন তিনি। সব ঠিক থাক চলার পর এক প্রকার জোর করেই পরিবার থেকে আঙুরবালা দেবীর সঙ্গে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন বটকৃষ্ণ।
কিন্তু সংসারে তাঁর মতি ছিল না। মাঠে ঘাটে শ্মশানে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। এরকম কিছু বছর চলার পর জানা যায়, কোনও এক মাঠে তিনি গোরুর খোটা বাঁধছিলেন সেই মুহূর্তে তাঁর পিছন থেকে এক সাদা বস্ত্র পরিহিত সন্ন্যাসী এসে বলেন, অমুক স্থানে অমুক সময়ে তোমার দীক্ষা হবে। কিন্তু এর পরে ঘটনা না জানা গেলেও তিনি শ্মশানে সাধনা করতে করতে সিদ্ধি লাভ করেন এবং স্বপ্নাদৃষ্ট হয়ে মা কালীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করবেন বলে স্থির করেন। কিন্তু বৈষ্ণব পরিবারে কিভাবে শাক্ত মা কালীর পুজো পাঠ হবে। কুলীন বৈষ্ণব পরিবারে জন্ম, তাঁর বাড়ি তে কেউ তিলক সেবা রাধা গোবিন্দের নাম না করে জল স্পর্শ করেন না। সেই বৈষ্ণব বাড়ি তে কালী পুজো শুনে তৎকালীন সমাজের মাথারা কালী পুজো করা যাবে না বলে নিষেধ করেন।
কিন্তু সমস্ত বাঁধা অতিক্রম করে তিনি প্রথম বাড়িতে কালীর ঘট স্থাপন করলেন। পরে আবার স্বপ্নাদেশ পেয়ে নব দুর্বার ওপর শ্যাম ও শ্যামা এক সঙ্গে এবং কৃষ্ণ ও কালীর আদেশে বটকৃষ্ণ ঠাকুর রটন্তী কালীপুজোর দিন প্রতিষ্ঠা করেন সবুজ রঙের মা কালীর। শুরু হয় মা কালীর পুজোপাঠ। এমনটাই জানান, ওই বংশের বর্তমান প্রজন্ম দেবজ্যোতি অধিকারী। সবমিলিয়ে পঞ্চমুণ্ডের মন্দিরে বৈষ্ণব বাড়িতে সাধনা করে পূজিতা হন মা কালী।