মহেশ্বর চক্রবর্তী
হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমার প্রত্যন্ত একটি জনপদ হলো গোঘাটের আগাই গ্রাম। সবুজ গাছ গাছালি ও তিন দিক জলাশয় দিয়ে ঘেরা গ্রামের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কালী মন্দির। জনশ্রুতি অনুযায়ী প্রায় এক হাজার বছর আগে বর্ধমানের রাজ বংশের বংশধর সাধক সন্ন্যাসী অহরলাল গোস্বামী আগাই গ্রামে গড় তৈরি করে তৎকালীন সময়ে জঙ্গলের ভিতর মা কালীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু হয় মা কালীর আরাধনা। এই আগাই গ্রামের গোস্বামী পরিবারের বর্তমান সদস্যদের দাবি প্রায় এক হাজার বছর আগে থেকে বংশপরম্পরা ধরে প্রাচীন প্রথা মেনেই একই রীতিনীতিতে মা কালীর পুজো অর্চনা করে আসছেন। গোস্বামী পরিবারের এক সদস্য উৎপল কান্তি গোস্বামী জানান, তৎকালীন বর্ধমানের কোনও এক রাজা তার বংশধরকে দিয়ে গোঘাটের এই আগাই গ্রামে চারটি জলাশয় কেটে গড় প্রতিষ্ঠা করে মা কালীর পুজো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই সময়ে আগাই গ্রাম ছিল জঙ্গলে ঘেরা পায়ে হাঁটা পথ, এমনকী গ্রামের জনসংখ্যাও ছিল খুবই কম। সন্ধের পর এই গ্রামে রাস্তা দিয়ে মানুষ যাতায়াত করত না। ডাকাতের ভয়ে মানুষ আতঙ্কে থাকতেন। জানা যায়, সেই সময় তাদেরই বাড়ির কাছে একটি বৃহৎ পুকুরে পাড়ে বিশাল এক নিম গাছ ছিল সেই নিম গাছের তলাতেই মা কালীর প্রথম পুজো হত। এই নিম গাছের তলায় ডাকাত দল পুজো করে ডাকাতি করতে যেত। নিম গাছের তলায় পুজোর পর
মূল মন্দিরে দেবীর আরাধনা হত। এখনও রীতি প্রচলিত আছে। নিমগাছের নীচে যখন পুজোপাঠ শুরু হয় তখন গোট গ্রাম নিশুতি হয়ে যায়। অন্ধকারে গোটা গ্রাম ঢেকে যায়। কারুর বাড়িতে কোনও আলো জ্বলে না। একটা গা ছমছমে ও রহস্যময় পরিবেশ পুরোহিত ঠাকুর নিমগাছের তলায় মা কালীকে আহ´ান জানান। এই বিষয়ে ওই গ্রামের প্রবীণ মহিলা পূর্ণিমা চক্রবর্তী জানান, এই পুজোয় বেশ কিছু প্রাচীন রীতি আছে যেগুলো সেই প্রাচীনকাল থেকেই একইভাবে একই হয়ে আসছে। প্রথমে মঙ্গল ঘট তুলে শুরু হয় পুজো। দেবী মূর্তির চক্ষুদান করে প্রথমে একটি কালো ছাগ বলি হয় । বলিদানের পর সেই ছাগের রক্ত মাটির সরাই নিয়ে গভীর রাতে চলে যেতে হয় পাশের পুকুরপাড়ে ঈশান কোণে নিমগাছের তলায়, যেখানে প্রথম মা কালীর আহ´ানে পুজো হয়। অপরদিকে ব্রাহ্মণ পুরোহিত আনন্দ গোস্বামী জানান, আমাদের এই পুজো বহু প্রাচীনতম। বংশ পরম্পরা ধরেই তারা পুজো করে আসছেন। তৎকালীন সময়ে যেভাবে পুজো হত একেই ভাবেই হচ্ছে। সবমিলিয়ে এখনও নিষ্ঠার সঙ্গে ও প্রাচীন প্রথা মেনে আগাই গ্রামে মা কালীর পুজোপাঠ হয়।